বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনার চেষ্টায় শামিল হতে হবে সঙ্গীদের: জন্মদিনে অনুপম সেন

August 5, 2023 | 8:19 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বাংলাদেশ যতদূর এগিয়েছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক চেষ্টায় বলে মনে করেন প্রবীণ সমাজ চিন্তক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন। তার মতে, একক নেতৃত্বে দেশ এগোলেও বেশিদূর যাওয়া সম্ভব নয়, এ জন্য শেখ হাসিনার সঙ্গীদের শামিল হতে হবে।

বিজ্ঞাপন

অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. অনুপম সেনের আজ শনিবার (৫ আগস্ট) ৮৪ তম জন্মদিন। চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়িতে নিজের বাসাতেই জন্মদিনটি কাটাচ্ছেন তিনি। জন্মদিনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ সমাজবিজ্ঞানীর ভাবনা জানতে বাসায় হাজির হয়েছিল সারাবাংলা। আলাপে উঠে আসে সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর মূল্যায়ন। বললেন, সাম্যবাদই শেষ পথ, মানবমুক্তির আর ভিন্ন কোনো পথ নেই।

শুরুতেই বাংলাদেশ পরিস্থিতি। ড. সেনের মতে, স্বাধীনতার পর গত ৫২ বছরে দেশ অনেকখানি এগিয়েছে। মানুষের খাদ্যের অধিকার প্রায় পূর্ণ হয়েছে। বাসস্থানের জন্য রাষ্ট্রের যে চেষ্টা, সেটা দৃশ্যমান হয়েছে। অর্থনীতিতে অর্জন বিশাল।

‘দেশ স্বাধীনের আগে-পরে অনেক বড় বড় পণ্ডিত-চিন্তক মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশ টিকবে না, বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে মহা অসুবিধায় পড়বে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর থাকবে এবং রাষ্ট্র টেকসই হবে না। আমরা হেনরি কিসিঞ্জারের মুখে সেই প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়েছিলাম-বটমলেস বাস্কেট। কিন্তু এখন আমরা দেখছি- বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই এগিয়েছে, কয়েকবছরের মধ্যে ধনী রাষ্ট্র না হলেও উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছাবে।’

বিজ্ঞাপন

অনুপম সেন বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথাই যদি ধরি, ১৯২৯ সালে সেখানে মহামন্দা হয়েছিল, অনেকে আত্মহত্যা করেছিল। সম্পদের কোনো অভাব তাদের ছিল না, সুষম বণ্টনের অভাব ছিল। কিন্তু ফ্রাংকলিন ডি রুজভেল্ট ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্র কর্তৃক কর্মযজ্ঞ শুরু করেন এবং মানুষের হাতে টাকা তুলে দেন। এ জন্য উনাকে অনেকে কমিউনিস্ট হিসেবেও আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু উনি আমেরিকাকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছিলেন।’

বাংলাদেশও সেই পথ ধরে এগোচ্ছে, এমন ভাবনা প্রবীণ এই সমাজবিজ্ঞানীর। তবে শঙ্কা অন্যত্র, বাংলাদেশেও সম্পদের সুষম বণ্টনে সমস্যা আছে, সম্পদ ব্যক্তি মালিকানায় পুঞ্জীভূত হয়ে যাচ্ছে।

‘মুনাফার আশা না থাকলে ব্যক্তি মালিকানা সেখানে বিনিয়োগ করে না। এখন শুধুমাত্র ব্যক্তি মালিকানার আশায় বসে থাকলে দেশ আর এগোবে না। দেশে বিশাল বিশাল প্রজেক্ট হচ্ছে, কিছু মানুষের হাতে টাকা যাচ্ছে। কিন্তু কিছু লোকের হাতে বিশাল সম্পদ পূঞ্জীভূত হয়ে পড়েছে। দেখতে পাচ্ছি, সেই ব্যক্তি মালিকানাকে অনেকক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালনের জায়গায় নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মূল ভূমিকা নিতে হবে রাষ্ট্রকে। বাংলাদেশ ছোট দেশ, এখানে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে গেলে সংকট তৈরি হবে।’

বিজ্ঞাপন

সম্পদ পূঞ্জীভূত হয়ে যাওয়ার যে প্রক্রিয়া সেটা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের উপায় কী, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এক্ষেত্রে মার্ক্সকেই উদ্ধৃত করতে চাই যে, সামন্ততান্ত্রিক বা প্রাক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে বুর্জোয়া গণতন্ত্রে উত্তরণের সময় সম্পদ কিছু লোকের হাতে যায়, এটিই নিয়ম। কিন্তু তাদেরও তো ভোগের সীমাবদ্ধতা আছে, দেখা অধিকাংশ সম্পদই তাদের ভোগের বাইরে থেকে যায়। তখন তারা রি-ইনভেস্টমেন্ট করে, কিন্তু প্রফিট দেখে। যখন দেখে প্রফিট নেই, তারা সম্পদকে পুঞ্জীভূত করে রাখে। তখন মন্দা দেখা দেয়, দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, সমাজে ননা সংকট তৈরি হয়।’

‘তো এ সংকট থেকে উত্তরণের দায় তো রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র যারা চালাচ্ছেন তাদের দূরদর্শিতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে তাদের পড়ালেখা প্রয়োজন। সমাজচিন্তক যারা তারা উপদেশ-পরামর্শ দিতে পারেন, কিন্তু রাষ্ট্র যারা চালাচ্ছেন, তাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ব যেভাবে এগোচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় যদি সনাতনী চিন্তাধারা ধরে রাখা হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্র এগোবে না। মূল কথা হচ্ছে, সম্পদ যাতে পূঞ্জীভূত হয়ে না পড়ে এবং নানাভাবে সেটা যাতে মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, সেই উদ্যোগ রাষ্ট্রকে নিতে হবে।’

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে রাষ্ট্রের বিনিয়োগের মাধ্যমে মানুষের কাছে সম্পদ পৌঁছানো সম্ভব জানিয়ে অনুপম সেন বলেন, ‘নিঃসন্দেহে দেশ অনেকখানি এগিয়ে গেছে, কিন্তু শিক্ষা-স্বাস্থ্যখাতে পিছিয়ে আছে। এখানে রাষ্ট্রের আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন। সোভিয়েত ইউনিয়ন স্বাস্থ্যখাতে যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল, সেগুলো যদি আমরা পর্যালোচনা করি কিংবা কিউবার চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা যদি ধরি, সেটা তারা এত উচ্চপর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, সেখানে আমেরিকা থেকে পর্যন্ত লোকজন একসময় চিকিৎসার জন্য যেত।’

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রের হাতে এত টাকা কোথায় যে শিক্ষা-স্বাস্থ্যে অঢেল বিনিয়োগ করবে- জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি একটা সংকট যে, যারা বড় ধরনের আয় করছে কিংবা যাদের হাতে সম্পদ যাচ্ছে, তাদের অনেকেই ঋণখেলাপী। তারা সম্পদকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করছেন না। প্রয়োজনীয় রাজস্বটা তারা দিচ্ছেন না। এখন রাষ্ট্রের আয় যদি না বাড়ে, বিনিয়োগ কিভাবে করবে ? এক্ষেত্রে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তাদের মনযোগ বাড়াতে হবে, সম্পদশালীদের বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।’

এক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে সুশীল সমাজের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পঞ্চাশের দশক, ষাটের দশকে দেখেছি, সুশীল সমাজ বড় বড় সামাজিক আন্দোলন করছে। কিন্তু এখন আমাদের পণ্ডিত-চিন্তক কিংবা সুশীল সমাজের যারা আছেন, তারা কিছু ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে অনেক বেশি বলেন, সামাজিক সংকটগুলো উপেক্ষিত থাকছে। আন্দোলন হওয়ার কথা প্রথমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, তারপর সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের জন্য। শিক্ষা-স্বাস্থ্যে রাষ্ট্রের বিনিয়োগের জন্য আন্দোলন প্রয়োজন।’

দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক নেতৃত্ব’ নিয়ে আশা এবং শঙ্কা উভয়ই প্রকাশ করেন অনুপম সেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা একা তাঁর নেতৃত্বে অনেককিছু করছেন। এটা উনি নিজে বারবার বলছেনও। এটা ঠিক যে, একজনের নেতৃত্বে দেশ অনেকসময় এগোয়, নেহেরুর সময় ভারত যেভাবে এগিয়েছে, চীনে মাও সেতুং যেভাবে উন্নয়নের সূচনা করেছিলেন, লেনিন কিংবা স্ট্যালিন যা করেছিলেন, সেটা উদাহরণ হতে পারে। কিন্তু তারপরও দেখা যায় যে, শুধু একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে একটা দেশের উন্নয়ন অনেকসময় আর এগোয় না।’

‘শেখ হাসিনা খুব বড় নেতৃত্ব দিচ্ছেন, চারদিকে চেষ্টা করছেন, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁর আশপাশের লোকজন যারা আছেন, তারা যদি সেই চেষ্টাকে সম্মিলিতভবে এগিয়ে নিতে না পারেন, তাহলে তো দেশ কিছুদূর এগিয়ে আর এগোবে না। এক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে যারা আছেন, তাদের একটিভ হতে হবে অর্থাৎ উনার যে চেষ্টা সেটার সঙ্গে শামিল হতে হবে। অ্যাজ অ্যা হোল পার্টিকে শামিল হতে হবে। সবাই যে শামিল নন, সেটা আমি বলছি না। মতিয়া চৌধুরী কিংবা নতুন যে ছেলেটা এসেছে, আরাফাত, তাদের কয়েকজনকে দেখছি। কিন্তু চেষ্টাটা সামষ্টিক হতে হবে।’

দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এখনও শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকেই প্রাসঙ্গিক মনে করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের যারা আছেন, তাদের কোনো প্রশ্নই আসে না। তারা ব্যক্তিগত উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়নমুখী নন।’

তারুণ্যে মানবিক সমাজ গড়ার দীক্ষা নিয়েছিলেন যিনি, জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসেও সেই মন্ত্রেই এখনও উজ্জীবিত তিনি। আলাপের শেষে জানিয়ে দিলেন সেটিই, সাম্যবাদই শেষ পথ।

বিশ্ব পরিস্থিতির উদাহরণ টেনে অনুপম সেন বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রভুত্ব-কর্তৃত্ব বিশ্বব্যাপী, সেটা ক্রমশ, ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে। সেখানে সম্পদের এমন কেন্দ্রীভবন ঘটেছে যে, এক শতাংশ লোকের হাতে যে পরিমাণ সম্পদ আছে, বাকি ৯৯ শতাংশ লোকের হাতে সেই পরিমাণ সম্পদ আছে। সে জন্য আমেরিকা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমের ১৮ শতাংশ লোকের হাতে যে সম্পদ আছে, সেটা সারাবিশ্বের বাকি ৮২ শতাংশ লোকের সম্পদের সমপরিমাণ। এটা তো মেনে নেয়া যায় না।’

‘বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে একজন লেখক ‘ডিক্লেইন অব দ্য ওয়েস্ট’ লিখেছিলেন। কিন্তু তখন ওয়েস্ট ডিক্লেইন (প্রত্যাখান) হয়নি। এখন এসে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম ডিক্লেইন হতে শুরু করেছে। পাঁচটা বড় দেশের যে সম্পদ বা বাজারের হিস্যা, দেখা যাচ্ছে সেটা সাতটা উন্নত দেশের চেয়ে বেশি। সেজন্য তারা ‍উঠে আসছে, পশ্চিম ডিক্লেইন হতে শুরু করেছে। ইস্ট এবং ওয়েস্টের দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে। তবে এটি এড়ানো দরকার। স্থিতিশীল বিশ্ব গড়ার একমাত্র পথ হচ্ছে মানুষকে তার অধিকার দেওয়া এবং অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে সাম্যবাদ, সাম্যবাদ এবং সাম্যবাদ।’

তিনি বলেন, ‘মানুষকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। যিনি সম্পদ সৃষ্টি করছেন তার হাতে সম্পদের মালিকানা নেই, যিনি সম্পদ সৃষ্টির উপকরণ দিচ্ছেন, তারাই সম্পদের মালিক হয়ে বসে আছে। এটির বিরুদ্ধে পথ হচ্ছে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা। এটা দ্রুত করতে হবে এমন নয়। আন্দোলনটা শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষকেও তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে জাগরণ ঘটাতে হবে। মানবমুক্তির ভিন্ন কোনো পথ আমি আর দেখি না।’

১৯৪০ সালের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে অনুপম সেনের জন্ম। বাবা বীরেন্দ্রলাল সেন ও মা স্নেহলতা সেন। বাড়ি পটিয়া উপজেলার ধলঘাটে। চট্টগ্রাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে সমাজতত্ত্বে স্নাতক ডিগ্রি নেন অনুপম সেন। ১৯৬৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে ২৫ বছর বয়সে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। তিনি পূর্ব পাকিস্তান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট) সমাজতত্ত্ব ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন।

১৯৬৬ সালে তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সহায়ক ও টিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে পুনরায় যোগদান করেন।

অনুপম সেন দেশটাকে ভালোবাসেন হৃদয় উজাড় করে। মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ, নাগরিক আন্দোলনেও থাকেন সামনের কাতারে। অনুপম সেন মানেই যেন লড়াই-সংগ্রামের ‍মুষ্ঠিবদ্ধ হাত।যৌবনে ভালোবেসে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। এই শিক্ষকতা করতে গিয়েই পাকিস্তান আমল থেকে সকল গণআন্দোলনে সম্পৃক্ত করেছেন নিজেকে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক, মানবিক সমাজ গড়ার আন্দোলনে পালন করেছেন অগ্রণী ভূমিকা। প্রগতিশীল সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে দেশে যেমন পেয়েছেন অকুণ্ঠ সম্মান, বিশ্বসভায়ও সম্মানিত হয়েছেন। শিক্ষায় পেয়েছেন একুশে পদক। বার্ধক্যে উপনীত হয়েও ছাড়েননি শিক্ষকতা পেশা। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রফেসর সেন ‘দ্য স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড ক্লাশ ফরমেশন ইন ইন্ডিয়া’ ছাড়াও অনেক বইয়ের রচিয়তা। এক্ষেত্রে তার দ্য পলিটিক্যাল এলিটস অব পাকিস্তান অ্যান্ড আদার সোশিওলজিক্যাল এসেস (১৯৮২, অমর প্রকাশন, দিল্লি), বাংলাদেশ: রাষ্ট্র ও সমাজ, সামাজিক অর্থনীতির স্বরূপ (১৯৮৮), বাংলাদেশ ও বাঙালি রেনেসাঁস: স্বাধীনতা চিন্তা ও আত্মানুসন্ধান (২০০২), বিলসিত শব্দগুচ্ছ (২০০২), ব্যক্তি ও রাষ্ট্র: সমাজ-বিন্যাস ও সমাজ-দর্শনের আলোকে (২০০৭), কবি শশাঙ্কমোহন সেন (২০০৭), সমাজ, সংস্কৃতি, সাহিত্য: নানা কথা, নানা ভাবনা, নানা অর্ঘ্য (২০০৭), সুন্দরের বিচার সভাতে (২০০৮), আদি-অন্ত বাঙালি, বাঙালি সত্তার ভূত-ভবিষ্যৎ (২০১১), বাংলাদেশ: ভাবাদর্শগত ভিত্তি ও মুক্তির স্বপ্ন (২০১১), জীবনের পথে প্রান্তরে (২০১১), বাঙালি-মনন, বাঙালি সংস্কৃতি, সাতটি বক্তৃতা (২০১৪), ইতিহাসে অবিনশ্বর (২০১৬) ও বিচিত ভাবনা (২০১৭) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তার ‘দ্য স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড ক্লাশ ফরমেশন ইন ইন্ডিয়া’ ১৯৮২ সালে প্রকাশের প্রায় সাড়ে তিন দশক পরে রাউটলেজ আবার প্রকাশ করেছে ২০১৭ সালে, ‘রাউটলেজ লাইব্রেরি এডিশন: ব্রিটিশ ইন ইন্ডিয়া’ শিরোনামে।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন