বিজ্ঞাপন

রাতভর বিক্ষোভে উত্তাল চবি, ভিসির বাসভবনে ভাঙচুর

September 8, 2023 | 1:01 pm

চবি করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শাটল ট্রেনের ছাদ থেকে ছিটকে পড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় রাতভর বিক্ষোভে উত্তাল ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। এসময় উপাচার্যের বাসভবন এবং পরিবহন দফতরে ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বাস-প্রাইভেট কারসহ অন্তঃত ৩৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তবে শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে পরিস্থিতি শান্ত আছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে চবি ক্যাম্পাসে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা অবস্থান করছেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ চৌধুরীহাট এলাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গোমী চলন্ত শাটল ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে অন্তঃত ১৬ শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ, রেল কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে শাটল ট্রেনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে যাত্রা করে। ছাদে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বসা ছিলেন। চৌধুরীহাট এলাকায় পৌঁছার পর গাছের ডালে ধাক্কা খেয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী ট্রেনের ছাদ থেকে মাটিতে পড়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আহত ১৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে আটজন হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনজন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এরা হলেন, চবি’র বাংলা বিভাগের আমজাদ হোসেন সোহাগ (১৮) ও খলিলুর রহমান (২২) এবং লোকপ্রসাশন বিভাগের ছাত্র অংসইনু মারমা (২১)।

আরও পাঁচজন ছাত্র চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এরা হলেন, বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের তাইজুল ইসলাম (২১) ও আবু সাইদ (২৪), ইংরেজি বিভাগের মোহাম্মদ সান (২১) ও আসলাম (২২) এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাফসান (২৩)।

এদিকে ঘটনার খবর রাতে ক্যাম্পাসে পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে ছাত্ররা বেরিয়ে আসেন। ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, বৃহস্প্রতিবার রাত ১০টার দিকে মূল ফটক অবরুদ্ধ করে অবস্থান নেন কয়েক’শ শিক্ষার্থী। ফটকের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর তারা মিছিল নিয়ে রাত সোয়া ১১টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে ভাঙচুর করেন। বাসভবনে গ্যাসের সঞ্চালন লাইন ভেঙে ফেলেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ি, শিক্ষক ক্লাব এবং পরিবহন দফতরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। তাদের বহনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের শিক্ষক ক্লাবে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা।

রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতরে থাকা শিক্ষক বাস ও কয়েকটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়। ক্যাম্পাসের ভেতরে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ঘটনাস্থল অতিক্রম করতে গিয়ে বেশকিছু প্রাইভেট কার, অটোরিকশা, ট্রাক ভাঙচুরের শিকার হয়।

একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন। গভীর রাতে আন্দোলনের মধ্যেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপে মারামারি শুরু হয়। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই সরে যান। রাত পৌনে ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেইট দিয়ে পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা প্রবেশ করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে শিক্ষক ক্লাবে আটকে থাকা প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরদের উদ্ধার করেন। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মূল ফটক খুলে দেন। এরপরও রাতভর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি ছিল থমথমে।

বিজ্ঞাপন

চবি’র সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভিসির বাংলো, পুলিশ ফাঁড়ি, ট্রান্সপোর্ট দফতরে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। টায়ার জ্বালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অবরোধ করেছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আহতদের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার পরিবর্তে তারা কেন এমন করেছে আমরা বুঝতে পারছি না।’

এদিকে আহতদের দেখতে রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। এসময় তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আহত শিক্ষার্থীরা যেন দ্রুত সুচিকিৎসা পায় আমরা সেটা দেখছি।’

সারাবাংলা/এমএ/এমও

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন