বিজ্ঞাপন

এখনো তালপাতায় হাতেখড়ি দেয় শিশু শিক্ষা নিকেতন

September 9, 2023 | 8:54 am

জামাল হোসেন বাপ্পা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বাগেরহাট: প্রযুক্তির কল্যাণে এখন অনেক শিশুরই পড়ালেখায় হাতেখড়ি হয় কম্পিউটার বা ল্যাপটপে। তবে আমাদের এই ভূখণ্ডে আজ থেকে পাঁচ-ছয় দশক আগেও চিত্রটি ছিল একেবারেই ভিন্ন। কাগজ-কলম-পেনসিলের ব্যবহারই তখন ছড়িয়ে পড়েনি সবখানে। ওই সময় শিশুশিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় হাতেখড়ি হতো তালপাতা, বাঁশের কঞ্চির কলম আর দোয়াতের কালিতে।

বিজ্ঞাপন

আজকের এই সময়ে এসে সেই তালপাতা আর দোয়াতের কালি বলতে গেলে পরিণত হয়েছে হারানো দিনের স্মৃতিতে। তবে বাগেরহাটের প্রত্যন্ত এলাকা চিতলমারী উপজেলার দক্ষিণ ডুমুরিয়া গ্রামে এখনো সেই তালপাতায় হাতেখড়ি দিয়ে যাচ্ছে ‘শিশু শিক্ষা নিকেতন’। এই পাঠশালায় গত দেড় যুগ ধরে সেই প্রাচীন পদ্ধতিতেই শিশুদের পাঠ শুরু করে যাচ্ছেন ৭৫ বছর বয়েসী পণ্ডিত কালিপদ বাছাড়।

স্থানীয়রা জানালেন, গ্রামবাসীর সহায়তায় চলে পাঠশালাটি। সেখানে সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের সংকট রয়েছে, রয়েছে জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্য। এগুলো সমাধানে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।

শিশুদের বাংলা বর্ণ লেখা শেখাচ্ছেন পণ্ডিত কালিপদ বাছাড়। ছবি: সারাবাংলা

চিতলমারী উপজেলার দক্ষিণ ডুমুরিয়া গ্রামে শিশু শিক্ষা নিকেতনে গিয়ে দেখা মিলল সেই তালপাতার খাতা, বাঁশের কঞ্চির কলম আর দোয়াতের কালির। অন্তত অর্ধশত শিশু এই পাঠশালায় শিক্ষা নিচ্ছে এসব উপকরণ ব্যবহার করে, যা এরই মধ্যে প্রায় সারাদেশেই পরিণত হয়েছে রূপকথায়।

বিজ্ঞাপন

পাঠশালার শিক্ষক পণ্ডিত কালিপদ বাছাড় বলেন, তালপাতায় অক্ষরচর্চায় হাতের লেখা ভালো হয়। এই পাঠশালা থেকে শিশুরা প্রথম অক্ষরজ্ঞান লাভ করে। তারা স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জন বর্ণ, বানান, যুক্তাক্ষর, শতকিয়া, নামতা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে এখান থেকে। এই পাঠশালা থেকে শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়।

বর্ণশিক্ষার পাশাপাশি শতকিয়া, নামতা এবং ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয় এই পাঠশালায়। ছবি: সারাবাংলা

স্থানীয়রা বলছেন, পাঠশালার শিক্ষক কালিপদ বাছাড় শিশুদের খুব ভালো পড়ান। তিনি হাতে ধরে শিশুদের লেখা শেখান। তালপাতায় বাচ্চাদের হাতের লেখাও ভালো হয়। আশপাশের পাঁচটি গ্রামের প্রায় ৫০টি শিশু এই পাঠশালায় পড়ালেখা করছে।

স্থানীয় অভিভাবক লক্ষ্মী রানী বলেন, ভালো পড়ালেখার কারণে আমারাও আগ্রহ নিয়ে শিশুদের এই পাঠশালা ভর্তি করি। প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য মাসে মাত্র ১৫০ টাকা নেন শিক্ষক কালিপদ বাছাড়। সেই টাকা দিয়েই তালপাতা, কঞ্চির কলম ও দোয়াত-কালিসহ পাঠশালার বিভিন্ন উপকরণ কেনা হয়।

বিজ্ঞাপন

আরেক অভিভাবক শীল্পা রানী মন্ডল বলেন, পাঠশালাটি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে। কিন্তু পাঠশালায় বিদ্যুৎ নেই। ফলে গরমের দিনে বাচ্চাদের অনেক কষ্টা হয়। খাবার পানির ব্যবস্থাও নেই। আবার দুপুরে নদীতে জোয়ার এলে পাঠশালার মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। তখন কাদাপানি পার হয়ে বাচ্চাদের বাড়ি নিয়ে যেতে হয়। আমরা অভিভাবকরা জলাবদ্ধতাসহ পাঠশালাটির সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছি।

স্কুল ছুটি, শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের হচ্ছেন পণ্ডিত কালিপদ বাছাড়। ছবি: সারাবাংলা

স্থানীয় বাসিন্দা ভজন মন্ডল ও নিলয় ঢালি বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া দক্ষিণ পাড়া শিশু শিক্ষা নিকেতন নামের এই পাঠশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। বর্তমানে পাঠশালায় বিদ্যুৎ না থাকা ও জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। আমরা স্থানীয়ভাবে পাঠশালাটি দেখাশুনার পাশাপাশি সমস্যগুলো সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ঐতিহ্যবাহী এই পাঠশালাটির সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, ডুমুরিয়া দক্ষিণপাড়ার পাঠশালার কথা শুনেছি। সেখানে এখনো সেই পুরাতন আমলের তালপাতার শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। তারা একটি ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। পাঠশালাটিতে পানি ও বিদ্যুতের সংকট এবং জলাবদ্ধতার মতো বিভিন্ন সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুতই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন