বিজ্ঞাপন

আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া দেশ: প্রধানমন্ত্রী

October 5, 2023 | 5:13 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন দফা সরকারে থাকার কারণে আজ আমরা বিশ্বের ঐহিত্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি। অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সেগুলোর সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া দেশ।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার লিখিত ভাষণে এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের দিন এবং আনন্দের দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আজ সফল পরিণতি লাভ করছে। ফলে আজ থেকে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশের কাতারে সামিল হলো এবং বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের কার্যকর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো।’

‘আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে; স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ বীর শহিদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সালাম জানাই।’

বিজ্ঞাপন

‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বন্ধুপ্রতিম রাশান ফেডারেশনের সরকার এবং জনগণের প্রতি- যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অসামান্য সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমাদের এই স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন সময় পেয়েছিলেন। পাকিস্তানিরা এ দেশের জন্য ধ্বংসস্তুপ ছাড়া কিছুই রেখে যায়নি। স্বাধীন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি টাকাও রিজার্ভ মানি ছিল না। রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ, স্কুল-কলেজ, মসজিদহাসপাতাল সবই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, পাক-বাহিনী ২৭৮টি রেলব্রিজ এবং ২৭০টি সড়ক সেতু গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, ২টি পোর্টে মাইন পুঁতে রেখেছিল, রাশিয়া ও ভারতসহ অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রদের সহায়তা নিয়ে জাতির পিতা পোর্টসহ প্রায় সকল অবকাঠামো ব্যবহার উপযোগী করেছিলেন। তিনি দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করেছিলেন; জিডিপি প্রবৃদ্ধি রেকডর্ ৯ শতাংশের উপরে অর্জন করেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল- তিনি বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন। তিনি ১৯৫৬-’৫৭ সালে প্রাদেশিক সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতিরোধ এবং গ্রামীণ সহায়তা মন্ত্রী থাকাকালে এ অঞ্চলে উৎপাদনমূখী শিল্পায়নের ওপর জোর দিয়ে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে একটি এবং পূর্ব বাংলার রূপপুরে একটিসহ মোট দু’টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ’৭০ সাল পর্যন্ত নামমাত্র জমি অধিগ্রহণ ছাড়া সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য তারা কিছুই করেনি।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র নয় মাসেই একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। ‘গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব’ শিরোনামে সেই সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ-এ যুক্ত করেছিলেন- “নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবন যাত্রার মানের ক্সবষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে ক্সবদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।” সে লক্ষ্যে তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন; সমুদ্র সম্পদ এমনকি খনিজ সম্পদ জাতীয়করণ করেছিলেন এবং বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে আমাদের গ্যাস ফিল্ডগুলো কিনে নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নিদের্শ দিয়েছিলেন।’

বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম.এ. ওয়াজেদ মিয়াকে প্রস্তাবিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী কিছু কাজও হয়েছিল। দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর এই মেগা প্রকল্পটিসহ সব জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড থেমে যায়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এরপর দীর্ঘ ২১ বছর পাকিস্তানি কায়দায় এই দেশ পরিচালিত হয়েছিল। গণতন্ত্র ছিল না। এই ২১ বছর আমরাই জনগণের ভোট-ভাতের জন্য সংগ্রাম করেছি। ’৭৫-এর পর ৬ বছর আমাদের রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। পিতা-মাতা-ভাইদের এবং আত্মীয়-স্বজন হত্যার বিচার চাইতে পারিনি। মানবাধিকার বলে তখন কিছুই তো ছিল না। খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দূতাবাসগুলোতে চাকরি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সংবিধানের ওপর খড়গ চালানো হয়েছিল। দুঃখী মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছিল।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করি। ২০২০ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন স্টেটমেন্ট ও পলিসি স্টেটমেন্ট অন পাওয়ার সেক্টর রিফর্মস’ প্রণয়নও অনুমোদন করি। ১৯৯৬ সালে আমরা জ্বালানি নীতিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করি। ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করি। ‘বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার এ্যাকশন প্লান-২০০০’ প্রণয়ন করি। ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই আমাদের নেওয়া সকল জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি/প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। আবারও হিংস্র জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বেপরোয়া লুটপাট এবং সেনা শাসনের পুরু আবরণে গণতন্ত্র ঢাকা পড়ে। তবে ২০০৮ সাল থেকে পরপর ৩ দফা সরকারে থাকার কারণেই আমরা আজ বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি। অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সেগুলোর সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া দেশ।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন