বিজ্ঞাপন

ক্র্যাক প্লাটুনের দুঃসাহসিক উলান অপারেশন

October 25, 2023 | 4:29 pm

রা'আদ রহমান

একাত্তরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর। অবরুদ্ধ ঢাকায় সুপ্রশিক্ষিত পাকিস্তানী সেনাদের উপর রীতিমত নরক নামিয়ে এনেছিল গেরিলাযুদ্ধে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত একঝাঁক তরুণ। আচমকা হিট অ্যান্ড রান কায়দায় বিভিন্ন স্থাপনা বা চেকপোস্ট বা পাকিস্তানী সেনাদের অবস্থানের উপর আক্রমণ চালিয়ে পলকের মধ্যেই উধাও হয়ে যেত এই অসমসাহসী গেরিলার দল। এই দুঃসাহসী আরবান মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অপারেশন উলান পাওয়ার স্টেশন অপারেশন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান ৫টি কেন্দ্র ছিল ঢাকার মোট ৫টি পাওয়ার স্টেশন। গেরিলাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল এই স্টেশনগুলো উড়িয়ে দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ধ্বংস করা। এই স্টেশনগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছিল ১৩২/১৩৩ কেভি; ৩০/৪০/৫০ এমভিএ ক্যালিবারের একটি ট্রান্সফর্মারের উলান পাওয়ার স্টেশন। উলান অপারেশনের জন্য নির্বাচিত হন গাজী গোলাম দস্তগীর (গফুর), মতিন নম্বর এক, মতিন নম্বর দুই, জিন্না, নীলু, হাফিজ। হাফিজ পরবর্তীকালে শহীদ হন। অপারেশনের নেতৃত্বভার ছিল গাজী গোলাম দস্তগীরের হাতে।

ট্রান্সফর্মার ওড়ানোর জন্য ২০ পাউন্ড পি-কে ও ১৫ ফুট প্রাইমা কর্ড বা কর্ড এক্স, প্রায় তিন মিনিট মেয়াদী সেফটি ফিউজ ওয়্যার এবং ডেটোনেটর লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১০ পাউন্ড করে পি-কে’র দুটি চার্জ প্রাইমা কর্ড দিয়ে সংযোজন করে ট্রান্সফর্মারের দুই পাশে ফিট করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর ভি হিসেবে নির্দিষ্ট হয় মঞ্জুর নামের একজনের রামপুরার একটি বাসা, যেখান থেকে সবাই একসাথে অপারেশনের জন্য বেরিয়ে যাবে। কাজ ভাগ করে প্রত্যেকের ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়, যেমনঃ

ক। স্টেনগান ক্যারি করবে গাজী ও নীলু। তারা হবে অপারেশনের অগ্রবর্তী দল।
খ। মতিন নম্বর এক ট্রান্সফর্মারের গায়ে চার্জ বসাবে।
গ। মতিন নম্বর দুই টেলিফোনের লাইন কেটে দেবে।
ঘ। বাইরে রিভলবার হাতে পাহারায় থাকবে জিন্নাহ।
ঙ। স্টেনগানের সাথে বাড়তি ব্যাকআপ হিসেবে থাকবে গ্রেনেড-৩৬।

বিজ্ঞাপন

প্ল্যানটা ছিল এমন যে সন্ধ্যার সাড়ে সাতটার সময় হাফিজের ফিয়াট গাড়িতে করে রামপুরার আর ভি থেকে সবাই রওনা হবে অপারেশন স্থল উলান পাওয়ার স্টেশনের দিকে। মূল অপারেশন শুরু হবে তখনই। কিন্তু সন্ধ্যার ঠিক আগে রওয়ানা দেবার পূর্বমুহুর্তে গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেল। দেখতে দেখতে বেজে গেল রাত আটটা। তখনো গাড়ি ঠিক হয়নি। বিস্ফোরকও বাঁধা হয়নি। ফলে আর দেরি না করে দ্রুত বিস্ফোরক অর্থাৎ পি-কে চার্জগুলো বেঁধে নেয়া হল। আরভি থেকে যখন সবাই একসাথে বেরোবে, হঠাৎ করেই দূর থেকে ভেসে এলো টানা গুলির শব্দ। নীলু বললো, “নিশ্চয়ই কোথাও কোন অঘটন ঘটে গেছে।” কারণ ওদের উপর নির্দেশ ছিল একান্তই বাধ্য না হলে কোন গ্রুপ যেন গুলি না ছোড়ে।

গুলির শব্দের আতংকগ্রস্থ আশেপাশের লোকজন যে যার বাড়িতে ঢুকে পড়েছে, দরজা-জানালা আটকে দিচ্ছে। গলি থেকে ওরা বেরিয়ে এলো রামপুরা ডিআইটি রোডে, এমনিতেই ওখানে তখন কোন স্ট্রীট লাইট নেই। সিদ্ধান্ত হলো তিনটা রিকশা ভাড়া করে পাওয়ার স্টেশনে পৌঁছাতে হবে। প্রথম রিকশায় উঠলো গাজী আর নীলু। তাদের পায়ের আড়ালে ভাঁজ করে রাখা আছে স্টেনগান। রামপুরা ডিআইটি রোড থেকে রিকশা চলল উলন পাওয়ার স্টেশনের রাস্তায়। অসমান বাঁকা কাঁচা রাস্তায় অন্ধকারে একটা কাক-পক্ষীও নেই। চারপাশের সব বাড়িঘরের জানালা বন্ধ, ক্ষীণ আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে কোন কোন জানালার ধারে।

কিছুদূর এগোবার পর আচমকা নীলুর খেয়াল হলো, আরে, পেছনের রিকশা দুটো কই? গাজী দস্তগীর ও নীলু চিন্তায় পড়ে গেল, ওদের কি হলো, কোথায় গেল ওরা, কোন বিপদ হলো না তো!
নীলু রিকশা থেকে নেমে গেল তাদের খোঁজ নিতে। মুশকিলটা হয়েছিল অন্য সব অপারেশনের মতন এই অপারেশনের ক্ষেত্রে যথাযথ রেকিওয়ার্ক করা হয়নি। ফলে বিপত্তিটা ঘটেছিল সে কারণেই। পেছনের দুই রিকশায় থাকা গেরিলারা পথ ভুল করে সোজা এগিয়ে গিয়েছিল রামপুরা টেলিভিশন ট্রান্সমিশন কেন্দ্রের দিকে। যেখানে মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে মজুদ ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পুরো এক কোম্পানি সৈন্য। ভাগ্য ভালো, এই দুই রিকশা টিভি স্টেশনের কাছাকাছি পৌছার আগেই থেমে গিয়েছিল। ততক্ষণে নীলু তাদের কাছে গিয়ে পৌছানোয় কোন বিপর্যয় ছাড়াই তাদের ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল।

বিজ্ঞাপন

আবার যাত্রা শুরু হলো তিন রিকশার। পরিকল্পনা ছিল তিন রিকশার মধ্যে প্রথমে যাবেও অগ্রবর্তী রিকশা। তারপরে অবস্থা বুঝে বাকি দুই রিকশার গেরিলারা এগিয়ে আসবে। যতটা সম্ভব নিঃশব্দে কাজ সারতে হবে যেন গেটে ঘটে যাওয়া ঘটনা পাওয়ার স্টেশনের অন্য কোন কর্মী এবং পুলিশ টের না পায়। বলা হয়েছিল, এমনকি হ্যান্ডস আপ করাতে হলেও যেন সেটা কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলা হয়।

ফটকের আলো দেখা গেল, কাছাকাছি পৌঁছে যাবার পর পেছনের রিকশার গেরিলারা রিকশাওয়ালাদের বললও, ভাই একটু থামো তো। আগের রিকশাটা চলে যাক, আমরা একটু পরে যাবো। রিকশাওয়ালাদের কেউই তখনো ওদের চিনতে পারেনি, সেজন্য টের পায়নি যে ওরা কি করতে যাচ্ছে।

ফটকে পাহারায় ছিল একজন রাইফেলধারী পুলিশ ও একজন দারোয়ান। ফাঁকা রাস্তায় কেউ নাই, হঠাৎ একটা রিকশাকে এগিয়ে আসতে দেখে কিছুটা কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে রইলো পুলিশটি, গেটের কাছাকাছি হতেই এল লাফে নামলো গাজী ও নীলু। চোখের পলকে তাদের হাতে উঠে এলো স্টেনগান, উঁচিয়ে ধরল তারকাটা বেড়ার পাশে দাঁড়ানো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে থাকা পুলিশটির দিকে। নীচু গলায় গাজী নির্দেশ দিল, “ হ্যান্ডস আপ, খবরদার চেঁচামেচি করার চেষ্টাও কোরো না!” চেঁচামেচি দূরে থাক, পুলিশটা জাস্ট অস্ত্র ফেলে নিঃশব্দে হাত দুটো উপরে তুলে ফেললো।

অবস্থা বেগতিক দেখে দারোয়ানটি দ্রুত লুকাতে যাচ্ছিল, নীলু চাপা গলায় ডেকে বললো, ওহে, বেশি চালাকি করতে যেয়ো না, বেরিয়ে এসো, নইলে গুলি করবো।’ দারোয়ান আড়াল থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসেই সটান চিত হয়ে পড়ে গেল নীলুর সামনে। আকাশের দিকে হাত তুলে ফিস ফিস করে বললো, ‘স্যার, আমি আস্তে কথা বলছি, গুলি করবেন না। স্যার, আমি নির্দোষ, কিছু করি নাই। আপনারা কি মুক্তি?’

বিজ্ঞাপন

চাপাস্বরে রামধমক দিয়ে উঠলো গাজী, বললো, ‘আমাদের হাতে সময় নেই। তোমাকে কিছু করবো না, গেট খুলে দাও দ্রুত। মাটি থেকে উঠে দাঁড়াও।’

শুনে ওদিকে থেকে পুলিশটা ছুটে এলো, বললো, ‘স্যার চাবি আমার কাছে, আমি খুলে দিচ্ছি।’

এদিকে পেছনের গেরিলারা ততক্ষণে চলে এসেছে। দুই নম্বর মতিন ক্ষিপ্তহস্তে টেলিফোনের তার কেটে দিয়েছে। কান্ডকারখানা দেখে রিকশাওয়ালারা ভাড়া না নিয়েই সটকে পড়েছে। গেটের ভেতর ঢোকার পর তালাচাবি গাজী নিজের পকেটে রেখে দিল। জিন্নাহ গেটের কাছে দাঁড়িয়ে পড়ল রিভলবার হাতে পাহারা দেবার জন্য। দুই নম্বর মতিন পুলিশের পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেলটা ‘কক’ পজিশনে নিয়ে দাঁড়ালো। গাজি গেটের পুলিশকে জিজ্ঞেস করল, –’আর সব পুলিশ কোথায়?’

প্রাঙ্গণের ডান দিকে অদূরের একটি ঘর দেখিয়ে পুলিশটি বললো, ‘ওদিকে যান স্যার, ওখানে ১৫-১৬ জন আছে, ভাত খাইতাছে।’

গেটের পুলিশকে বলা হলো, তুমি সামনে দাঁড়াও। আমরা পেছনে লাইন করে দাঁড়াবো। তারপর তুমি সামনে থেকে পথ দেখিয়ে আমাদের ঘরের দিকে নিয়ে চলো। খবরদার চেঁচামেচি করবে না কোন ইঙ্গিত দেবার চেষ্টা করবে না। যদি কোনভাবে অন্যকিছু করার চেষ্টা করো, আমরা টের পাবো এবং গুলিতে তোমার পিঠ ঝাঁজরা হয়ে যাবে, বুঝেছো?

নিরুত্তর পুলিশ সদস্য সামনে থেকে তাদের পথ দেখাতে লাগলো। তখুনি ঘটলো আরেক মজার ঘটনা। দু’জন মোটাসোটা পুলিশ সদস্য ঘর থেকে বেরিয়ে এলো আচমকা। গেটের পুলিশ সদস্যকে অন্ধকারে গেট ফেলে এতো সামনে চলে আসতে দেখে তাদের একজন জিজ্ঞেস করল, ‘আরে কি ব্যাপার, গেট ফেলে চলে এলে কেন?’ কিন্তু গেটের পুলিশ সদস্য তো আর টুঁ শব্দটা উচ্চারণ করে না। সে শুধু দেখতে পেলো কোত্থেকে যেন দুটো স্টেনগানের নল তার সামনে ছিটকে চলে এলো। অপরিচিত কণ্ঠে চাপাস্বরে কে যেন বললো, ‘হ্যান্ডস আপ! খবরদার কেউ চিৎকার করবে না, মাথার খুলি উড়িয়ে দেবো”। ভয়ে সামনের পুলিশ সদস্যদের একজন নিজেই বিড়বিড় করে হ্যান্ডস আপ বলতে বলতে দুই হাত মাথার উপর তুলে ধরে পড়তে লাগলো, ‘ লা ইলাহা ইল্লা… অপর পুলিশ সদস্য ততক্ষণে সটান উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছে।

স্টেন হাতে গাজী ছুটে গেল ঘরের ভেতর। সেখানেও নিঃশব্দে কাজ সারা হলো। সবকয়জন পুলিশ সদস্য বিনা বাক্যব্যয়ে সারেন্ডার করে হাত তুলে দাঁড়ালো। পুলিশ ও দারোয়ানদের সবাইকে নিয়ে গেটের পাশে লাইন ধরে দাঁড় করানো হলো। স্টেন ও রাইফেল হাতে তাদের পাহারায় রইলো নীলু ও দুই নম্বর মতিন। তাদের জানানো হলো, ‘এখুনি ব্যান্ডের বাজনা বাদন শুনতে পাবে। তার আগে যদি ছোটাছুটি করে পালাতে চাও, তাহলে বেঘোরে মারা পড়বে।’ তারপর গাজী আর এক নম্বর মতিন এগিয়ে গেল ট্রান্সফর্মারের দিকে।

ট্রান্সফর্মার এলাকাটি ছিল তারকাঁটার বেড়া দিয়ে ঘেরা। অপারেটর রুমের মধ্যে দিয়ে ওখানে যাওয়া যায়। অপারেটর রুমের বারান্দার প্রহরী ও রুমের তিনজন কর্মীকে নিয়ে গাজী ও মতিন পৌঁছুলো সেখানে। প্রায় দোতলা সমান বিরাট উঁচু ট্রান্সফর্মার। চারপাশে ইলেক্ট্রোড করার জন্য পাথর বসানো। সে এক এলাহী ব্যাপার।

মতিন বললো, ‘গফুর (গাজীর ডাক নাম), ২০ পাউন্ডে হবে তো ভাই! ওরে বাবা, এ দেখি বিশাল ব্যাপার! আর এই পাথরগুলোর আড়ালে মাইনটাইন বসানো আছে কিনা কে জানে!’

গাজী দস্তগীরের মনেও একই প্রশ্ন! মতিন বললো, যা হয় হবে। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। মশলা (পি-কে চার্জ) লাগিয়ে ফেলি। তার আগে একটু টেস্ট করা দরকার!

স্টেশনের কর্মী ও পুলিশ চারজনকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘ইলেক্ট্রিফায়েড করা নেই তো?’ ওরা বললো, ‘না, নেই।’। গাজী বললো— ‘যদি না থাকে তবে তো খুবই ভালো। চারজন গিয়ে ট্রান্সফর্মারের চারপাশে দাঁড়িয়ে ওটার গায়ে একটু হাত বুলিয়ে আসুন তো!

ওরা তাই করল। কোন বিপদ নেই নিশ্চিত হয়ে মতিন এবার গেল ট্রান্সফর্মারের গায়ে চার্জ বসাতে। একটা চার্জ বসালো মতিন, বাকি চার্জটি বসানোর জন্য দেয়া হলো অপারেটর রুমের একজন কর্মীর হাতে। চার্জ বসানো হচ্ছে, হঠাৎ চারপাশ কাঁপিয়ে গুলবাগের দিক থেকে ভেসে এল গগনবিদারী বিস্ফোরণের আওয়াজ! খানিকপরেই দেখা গেল গুলবাগ পাওয়ার স্টেশনের দিকে আগুনের লেলিহান শিখা, অনেক উঁচুতে উঠেছে!

এর কিছুক্ষণ পরেই প্রচন্ড বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো রামপুরা এলাকা। ধ্বংস হয়ে গেল উলানের ৩০/৪০/৫০ এমভিএ ট্রান্সফর্মারটি, যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, বিস্ফোরণে মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়ল ক্ষতিগ্রস্ত ট্রান্সফর্মারটি। অপারেশন থেকে ফেরার পথে ‘ক্র্যাক প্লাটুন’-এর গেরিলারা পড়ল নতুন সংকটে। স্টেশনের সামনের কাঁচা রাস্তা দিয়ে যখন তারা দ্রুত ‘রিট্রিট’ করছে তখন দেখলো স্টেশনের পাহারারত পুলিশেরা ডিআইটি রাস্তার দিক থেকে এগিয়ে আসছে। তারা এসে জানালো, সর্বনাশ হয়ে গেছে স্যার, আপনারা ওদিকে যাবেন না। রামপুরা টিভির সামনে এক কোম্পানি মিলিটারিরা ইতোমধ্যে রাস্তার উপর পজিশন নিয়ে বসে গেছে।’ বলতে না বলতে শোনা গেল এলএমজি’র ট্যাঁ ট্যাঁ ট্যাঁ শব্দ!

এখন উপায় কি হবে! উলান পাওয়ার স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাবার পথ তো ঐ একটাই! পেছনে বিশাল বিল! গেরিলাদের কাছে নিজেদের মূল্যবান অস্ত্র ছাড়াও রয়েছে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া রাইফেল! ঠিক হলো বিল সাঁতরেই পালিয়ে যেতে হবে। চারিদিকে অন্ধকার! তার মধ্যে কিছু অসমসাহসী তরুণ এসে দাঁড়িয়েছে বিশাল বিলের পাড়ে! একটা গোপন স্থান বেছে স্টেন আর রাইফেলগুলো লুকিয়ে রাখা হলো (গেরিলারা পরে এসে আবার সেগুলো উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিল) তারপর সবাই কাপড়চোপড় খুলে পানির মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিল! ঝাঁপিয়ে পড়লো বিলের কালো পানিতে!

কখনো বুক সাঁতার! কখনো চিত সাঁতার! এভাবেই ধীরে ধীরে এগোতে থাকলো তারা। অপরিচিত বিল, ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত! কোনদিকে সাতরাচ্ছে, ঠিকঠাক দিশা রাখা মুশকিল! একপর্যায়ে কে কোনদিকে গেল তার হিসেব রইল না! বহুক্ষণ পর গাজী আর মতিন অবশেষে আবছা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বাড়ি দেখতে পেলো সবাই। সেটার বাথরুমের কাছাকাছি গিয়ে পানি থেকে উঠলো তারা। লোকজনদের ডাকাডাকি করায় প্রথমে কেউ সাড়া দিল না, পরে যখন বুঝল এরা মুক্তি, ছুটে এলো সবাই! পানির মধ্যে বুক পর্যন্ত ডুবে থাকা মতিন বললো, ‘ভাই, আগে দুটো লুঙ্গি দিন।’

পরে সেই বাড়ির লোকেরাই গিয়ে বাকি তিনজনকে খুঁজে নিয়ে এলো! এভাবেই সম্পন্ন হলো শত্রু আক্রান্ত ঢাকার অন্যতম দুর্ধষ উলান পাওয়ার স্টেশন অপারেশন!

তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ ১। স্বাধীনতা সংগ্রাম–ঢাকায় গেরিলা অপারেশন/হেদায়েত হোসেন মোরশেদ
২। ব্রেভ অফ হার্টস/হাবিবুল আলম বীর প্রতীক

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন