বিজ্ঞাপন

প্রস্তুত চট্টগ্রাম, অপেক্ষা প্রধানমন্ত্রীর

October 27, 2023 | 11:29 pm

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপেক্ষায় বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র টানেলের দুয়ার খুলবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর টানেলের দক্ষিণ প্রান্তে কোরিয়ান ইপিজেডের মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে জনসভাস্থলসহ আশপাশের এলাকা গত এক সপ্তাহ ধরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আনাগোনায় মুখর হয়ে আছে। শেষ মুহূর্তে যেন উচ্ছ্বাসের বন্যা বইছে চট্টগ্রামজুড়ে, চারদিকে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকালে কোরিয়ান ইপিজেডের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, নৌকার আদলে তৈরি করা মঞ্চের কাজ শেষ। দুই শ শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৪৮ ফুট প্রস্থ ও আট ফুট উচ্চতার মঞ্চটি তৈরি করেছেন। মঞ্চে প্রায় ৫০০ জনের বসার ধারণক্ষমতা থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পদধারী নেতা ও জনপ্রতিনিধি মিলে ৩০০ জনের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর বাইরে আরও দুটি ছোট মঞ্চ করা হয়েছে। এর একটিতে থাকবে সাংস্কৃতিক আয়োজন, অন্যটিতে বসবেন ভিআইপি অতিথিরা।

মঞ্চের সামনে বীর ‍মুক্তিযোদ্ধা ও নারীদের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাড়ে ৯ লাখ বর্গফুটের মাঠে স্থাপন করা হয়েছে একাধিক এলইডি স্ক্রিন। দর্শক সারিতে অন্তত তিন হাজার চেয়ার রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ১০ হাজার কোটি টাকার টানেলের সুফল বহুমুখী, পরিকল্পনার তাগিদ

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থল ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জনসভাস্থলসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা ঘিরে রেখেছে। জনসভা হচ্ছে নগর পুলিশের অধীন কর্ণফুলী থানা এলাকায়। তবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে জেলা পুলিশও। নগর ও জেলা পুলিশ মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার সদস্য প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) স্পিনা রাণী প্রামাণিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রাম পুরোটাই মূলত সিএমপির অধীন এলাকায় হচ্ছে। আমাদের দুই হাজার ৮৭ জন সদস্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে সিএমপির বিভিন্ন থানা, রিজার্ভ ফোর্স, এপিবিএনের সদস্যরা আছেন।’

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রাম মূলত সিএমপিতে হচ্ছে। আমরা সংলগ্ন এলাকায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় এক হাজার সদস্যকে মোতায়েন রেখেছি।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছে আওয়ামী লীগ।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. হোসাইন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামে ন্যাভাল একাডেমিতে পৌঁছাবেন। ১১টা ৩০ মিনিটে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন করবেন। এরপর পতেঙ্গা থেকে টানেল পাড়ি দিয়ে কোরিয়ান ইপিজেডে জনসভায় যোগ দেবেন দুপুর ১২টায়। জনসভা শেষে তিনি দুপুর ২টার দিকে আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও মাহবুবউল আলম হানিফ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশসহ আরও অনেকে উপস্থিত থাকবেন।

জনসভার প্রস্তুতির সার্বিক তদারকিতে থাকা কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী জনসমাবেশ ঐতিহাসিক রূপ নেবে।

মাহবুব উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের স্বপ্নের ও উন্নয়নের একটি সারথি হিসেবে আগামীকাল (শনিবার) বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করা হবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিশেষ করে কক্সবাজারে সহজে যাওয়ার জন্য নদীর তলদেশ দিয়ে হওয়া টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা উন্নত দেশগুলোর নদীর তলদেশে টানেল দিয়ে যেতাম তখন আমাদের কাছে অবাক বিশ্বের মতো মনে হতো।’

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন জনসভার তত্ত্বাবধানে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা।

‘সে অবাক বিশ্বের উন্নয়নটি বাংলাদেশে করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি মাইলফলক। সে উপলক্ষে আগামীকাল (শনিবার) এখানে জনসভা আছে। সকাল ১০টায় জনসভা শুরু হবে। আমাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে যে উন্নয়ন করেছেন তার জন্য আগামীকাল সারা দক্ষিণ চট্টগামের প্রতিটি এলাকার মানুষের অংশগ্রহণে মহাসমাবেশ হবে। ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এ সমাবেশটি ঐতিহাসিক সমাবেশে রূপ নেবে,’— বলেন হানিফ।

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচি এখন নির্বাচনমুখী। আগামীকালের জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সভাপতি হিসেবে তিনি এ নির্দেশনা দেবেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা দলের প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয় যেন সুনিশ্চিত করতে পারি, তার জন্য এখন থেকে প্রত্যেক নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করবে। সরকারের ধারাবাহিক যে অগ্রগতি, তার সঠিক চিত্র জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যেন সাধারণ ভোটাররা আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগেকে বিজয়ী করে।’

প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। এটি আসলে আমরা জনসমাবেশ হিসেবে দেখছি না, জনসমুদ্র হিসেবে দেখছি। দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনয়ারায় প্রোগ্রাম করতে যাচ্ছেন। এ জনসভার মাধ্যমে প্রমাণ করব যে সবাই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। বঙ্গবন্ধু টানেলের মাধ্যমে একটি ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে। আমাদের প্রজন্ম, আমরা কখনো ভাবতেই পারিনি যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ চট্টগ্রামে ও বাংলাদেশের জনগণকে একটি টানেল উপহার দেবেন।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ব্যবস্থাপনায় এই সমাবেশ হলেও জনসভা সফল করতে সমানতালে কাজ করছে নগর ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ।

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আইসি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন