বিজ্ঞাপন

বিশ্ব গণমাধ্যমে বিরামহীন এক যোদ্ধা শেখ হাসিনা

November 8, 2023 | 5:05 pm

ড. অরুণ কুমার গোস্বামী

বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার ও প্রতিবেদন বিরামহীনভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও সংগ্রামবহুল নেতৃত্বের ফলে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। ‘উন্নয়ন’ অভিমুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই যাত্রাকে লি কোয়ান ইউ-এর নেতৃত্বে উন্নয়ন অভিমুখে সিঙ্গাপুরের যাত্রাকে তুলনা করা যেতে পারে। বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনার মত লি কোয়ান ইউ-এর সম্পর্কেও বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন গত ২ নভেম্বর (২০২৩) শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি যৌথভাবে লিখেছেন ঢাকা থেকে চার্লি ক্যাম্পবেল এবং লন্ডন থেকে আস্থা রাজবংশী। টাইম ম্যাগাজিনকে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছেন যে ‘একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে’ তাকে উৎখাত করা সহজ নয় কারণ তিনি ব্যাপকভাবে জনগণ দ্বারা সমর্থিত হচ্ছেন। টাইম ম্যাগাজিনকে দেয়া তার এই বক্তব্যে বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছে, যা অনস্বিকার্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ। এর আগে ২০১৮ সালে এই একই টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের ১০০ জন সেরা ব্যক্তিত্বের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে শেখ হাসিনার নাম স্থান পেয়েছে। সেবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীণাক্ষি গাঙ্গুলি টাইম ম্যাগাজিনে ‘যুদ্ধকে ভয়’ না পাওয়ার ব্যাপারে শেখ হাসিনার উত্তরাধিকারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণভাবে উল্লেখ করেছিলেন। এই ‘যুদ্ধের’ সাথে প্রকৃতপক্ষে, আওয়ামী লীগের ইতিহাস এবং এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে এর সংগ্রাম ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের ইতিহাস সফলতা পেয়েছে, যার নেতৃত্বে ছিলেন জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গণতন্ত্রের সেই লড়াই আজও চলছে। আর এখন তা এগিয়ে নিচ্ছেন বিরামহীন এক যোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

লি কোয়ান ইউ ছিলেন সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং আধুনিক সিঙ্গাপুর তৈরির কৃতিত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া থেকে পৃথক হওয়ার পর থেকে দেশের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ২০০৫ সালের শরৎকালে টাইম-এর জোহের আব্দুল কারিম, সাইমন এলিগ্যান্ট এবং মাইকেল এলিয়ট, লি কোয়ান ইউ-এর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। সেই সাক্ষাৎকারে লি কোয়ান ইউ চীনের উত্থান থেকে শুরু করে কট্টরপন্থী ইসলামের হুমকি পর্যন্ত দিনের সবচেয়ে সংবাদযোগ্য কিছু বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরেন। এই সাক্ষাৎকারে লি তখন বলেছিলেন – ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যা বলে আমি তার দ্বারা পরিচালিত নই। আমি ফ্রিডম হাউস বা যাই হোক না কেন রেটিংয়ে আগ্রহী নই। দিনের শেষে, সিঙ্গাপুরের সমাজ কি ভালো না খারাপ? এটাই পরীক্ষা। একটি সুশাসিত সমাজের সূচকগুলি কী কী? গত সপ্তাহের ইকোনমিস্টের মানবিক সূচকটি দেখুন, আমরা ঠিক শীর্ষে আছি।’ তিনি সেবার টাইমকে বলেছিলেন। লি কোয়ান ইউ-এর মত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও দৃশ্যত কোনও সমালোচনার তোয়াক্কা না করে দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন এবং কল্যান্যের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। আর তাই জনগণও পিতা বঙ্গবন্ধুর মত তাকে সমর্থন করছে।

উল্লেখ্য, ইতিহাস বিবেচনায়, সিঙ্গাপুরের লি কোয়ান ইউ-এর ঠিক উল্টোটি ঘটেছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের জাতিরপিতা এবং নির্বাচিত সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (যুদ্ধবিধ্বস্ত) বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছিলেন ঠিক সেই সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুক্রবার ভোর প্রায় ৪.৪৫ টায় সপরিবারে তাকে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকারে পরিণত হতে হয়। অতএব লি কোয়ান ইউ-এর সিঙ্গাপুরের মত স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য যথেষ্ট সময় পান নাই।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বেলজিয়ামে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদুত সানাউল হক-এর বাস ভবনে অতিথি ছিলেন। জার্মান সাংবাদিক জিসেলা বন (৬৫) এর একটি ফোন কলের মাধ্যমে জার্মান সময় প্রায় ৩.৩০ বিকেলে সেসময় জার্মানস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরি জানতে পারেন। এই চরম দু:সংবাদটি মরহুম সানাউল হক-এর টেলিফোন কলের মাধ্যমে জার্মান সময় সকাল ৬.০০ টায় নিশ্চিত হন মি. চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর শোনার সাথে সাথে সানাউল হক তার অতিথি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাকে তার বাসভবন ছাড়তে বলেন। যা ছিল চরম অসৌজন্যমূলক ও অমানবিক। আগের রাত পর্যন্ত যিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয়কে সম্মানের সাথে সম্ভাষণ করেছেন একটি চরম শোক সংবাদের পাবার সাথে সাথে সানাউল হক-এর ভাব পরিবর্তন বেঈমানী ছাড়া আর কিছুই নয়। হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী তখন (টেলিফোনে) বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে ব্রাসেলস থেকে বনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস পর্যন্ত পৌঁছে দিতে বলেন। সানাউল হক তাতেও রাজি হন নাই। কি নির্মম পরিহাস ! বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা পরে হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর জার্মানির বাসভবনে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিকাল ৪.৩০ এ পৌঁছান। সেখানে থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট সকালে বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবার দিল্লিতে পৌঁছান। দিল্লি বিমান বন্দর থেকে তাদের একটি নিরাপদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের বুটের তলায় পিষ্ট হয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ, পিষ্ট হয় পবিত্র সংবিধান, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্র আর মৃত্যুর মহোৎসব। মৃত্যুর বিভীষিকা নিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার এক দুঃসহ নির্বাসিত জীবন। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটে দীর্ঘ ছয়টি বছর। ভারতের বিখ্যাত সংবাদ মাধ্যমে ডিএনএ (ডেইলি নিউজ এন্ড এনালাইসিস)-এ প্রকাশিত ২০১৭ সালের ০৭ এপ্রিল বিবেক শুক্লার লিখিত ‘দ্যা টাইম দিল্লী গেইভ শেল্টার টু শেখ হাসিনা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এসম্পর্কে লেখা হয়েছে। বিবেক শুক্লা লিখেছেন, তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সহযোগিতায় দিল্লীর লাজপত নগর-৩ এ ৫৬ নম্বর রিং রোডের বাসভবনে এবং পরে পান্ডরা মার্কেট এর নিকট পান্ডারা রোডের বাসভবনে থাকতেন। এসময় তিনি, তার বোন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, তার স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পপন্ন পরমাণু ব্জ্ঞিানী ড.এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া, দুই সন্তান সজীব ওয়ােেজদ জয় এবং সায়মা ওয়ােেজদ পুতুল দিল্লীতে থাকতেন। ড.ওয়াজেদ মিয়া ভারতের আনবিক শক্তি কমিশনে চাকুরি করতেন এবং দুই সন্তান ভারতের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তেন। সজীব ওযােেজদ জয় নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ এবং তামিলনাড়ুর পালানি হিলস্থ কোদাইক্যানাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ালেখা করতেন। সজীব ওয়াজেদ জয় পরে ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্লিংটনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতেন। হু কীলড মুজিব গ্রন্থের লেখক বিখ্যাত সাংবাদিক এ এল খতিব দেশরত্ন শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে এসময় কাজ করতেন।

২০২০ এর ২২ এপ্রিল বিশ্বখ্যাত আর একটি ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’ ‘এইট (মোর) উইমেন লিডার্স ফেসিং দ্যা করোনাভাইরাস ক্রাইসিস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সফলতার প্রশংসা করা হয়েছিল। সেবারে ‘ফোর্বস’ লিখেছিল, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রায় ১৬১ মিলিয়ন মানুষের দেশ বাংলাদেশ সংকটের জন্য অপরিচিত নয়। শেখ হাসিনা সরকারের উপযুক্ত পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ করোনা সংকট মোকাবেলয় দ্রুত নিজের পায়ে উঠে দাঁড়ানোকে সেবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ‘প্রশংসনীয়’ বলে আখ্যায়িত করেছিল।”

২০২২ সালের ৬ সেপ্টম্বর আউটলুক ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনে “বাংলাদেশ’স লোনলি ব্যাটেল এগেইনস্ট ক্লাইমেট চেইঞ্জ” শীর্ষক প্রতিবেদনে সীমা গুহ লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদে তিন মেয়াদে বাংলাদেশের প্রোফাইল পরিবর্তন করে দিয়েছেন। দেশটি ২০২৬ সালের মধ্যে সর্বনিম্ন উন্নত দেশ (এলডিসি) এর তক্মা থেকে এখন বেরিয়ে আসতে প্রস্তুত।’

বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত আমেরিকান সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিনে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারটি ২রা নভেম্বর ‘শেখ হাসিনার গ্রিপ অন পাওয়ার’ শিরোনামে প্রায় ৩,৪০০ শব্দের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনসহ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন: ‘একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে’ তাকে উৎখাত করা সহজ নয়। তিনি বলেছেন, ‘একমাত্র বিকল্প হল আমাকে নির্মূল করা। এবং আমি আমার জনগণের জন্য মরতে প্রস্তুত।’

সেপ্টেম্বরের শুরুতে টাইমের সাথে এই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমার লোকেরা আমার সাথে আছে।’ আত্মবিশ্বাসের সাথে তিনি বলেছেন ‘তারা (জনগণ) আমার প্রধান শক্তি’।

বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য ম্যাগাজিন শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক সাফল্যকে চিত্তাকর্ষক বলে অভিহিত করে বলেছে যে বাংলাদেশ তার জনগণকে খাদ্য রপ্তানিকারকের কাছে খাওয়ানোর জন্য সংগ্রাম থেকে শুরু করে জিডিপি ২০০৬ সালে ৭১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২২ সালে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা এটিকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। এতে বলা হয়েছে বাংলাদেশের সামাজিক সূচকগুলিও উন্নত হয়েছে, বর্তমানে ৯৮% মেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, স্যামসাং-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে চীন থেকে সাপ্লাই চেইন বের করার অনুমতি দিচ্ছে। ম্যাগাজিনটি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে ‘গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই উন্নতি করতে হবে’। তিনি বলেছেন, ‘তবে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি’।

বিজ্ঞাপন

ম্যাগাজিনটি বলছে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এর আগের মেয়াদের পরে ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন মহিলা সরকার প্রধান। পাশাপাশি, পুনরুত্থিত ইসলামপন্থী এবং একসময়ের অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচার উভয়কেই পরাস্ত করার কৃতিত্বের অধিকারী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে মার্গারেট থ্যাচার বা ইন্দিরা গান্ধীর চেয়ে বেশি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর শেখ হাসিনা ২০২৪ এর জানুয়ারিতে ব্যালট বাক্সে সেই দৌড় বাড়ানোর জন্য দৃঢ প্রতিজ্ঞ।

এই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা প্রাক্তন জান্তা দ্বারা সৃষ্ট বিএনপিকে একটি ‘সন্ত্রাসী দল’ বলে উপহাস করেছেন, যেটি ‘কখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না’। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া সামরিক স্বৈরশাসকের মতো শাসন করেছেন’। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে বিএনপি সমর্থকরা যে সহিংসতা অগ্নিসংযোগ করেছে, শেখ হাসিনা তা তুলে ধরেছেন।

বাংলাদেশের জন্য শেখ হাসিনার জন্য চতুর্থ মেয়াদের অর্থ কী হবে তা একটি মেরুকরণের প্রশ্ন, এতে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ আমেরিকানরা তাদের ক্রয়কৃত তৈরি পোশাকের লেবেল থেকে দেশটিকে চেনেন, তবে এটি এমন একটি দেশ যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনও মুসলিম জনসংখ্যার চেয়ে বেশি মিশ্রিত করে। প্রায় ১০ শতাংশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্যদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু নিয়ে একটি জাতি। যদিও সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর প্রথম সামরিক শাসক দেশের সংবিধানকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়। তারপরে ১৯৮৮ সালে দ্বিতীয় সামরিক স্বৈরশাসক ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে তোলে, এমন একটি প্যারাডক্স তৈরি করে যা উগ্র মৌলবাদীদের জন্য উর্বর স্থল প্রমাণ করেছে।

তার সরকারের স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং আইডি কার্ড এবং বায়োমেট্রিক ডেটার সাথে যুক্ত নিবন্ধন কাগজ প্রবর্তনকে অবাধ নির্বাচনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তার বাবার হত্যার পর, হাসিনা এবং তার বোন পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং শেষ পর্যন্ত ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান। হাসিনাকে শুধুমাত্র ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যখন তিনি হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা ভিড় করেছিলেন এবং পরবর্তী বছরগুলি জনপ্রিয় নির্বাচন এবং সামরিক শাসনের অবসানের জন্য আন্দোলনে কাটিয়েছিলেন। টাইমের এই প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা ছিল আমাদের সংগ্রাম’। তিনি বলেন, ‘ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার এটাই ছিল আমাদের স্লোগান’। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের অধীনে আন্তরিকভাবে ইসলামিকরণ শুরু করে। তার বিএনপি আজ আরও রক্ষণশীল গোষ্ঠীর সঙ্গে জোটবদ্ধ, যেখানে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষপাতী। টাইম ম্যাগাজিন ( ২ নভেম্বর ২০২৩) বলেছে, আয়তন ও ভূগোলের কাছে জিম্মি হয়ে বাংলাদেশ ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ককে শেখ হাসিনার সরকার শৈল্পিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলেছে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেন যে ‘ছয় বছর ধরে আমার বোন এবং আমি দেশের বাইরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করেছি, তাই আমরা তাদের দুঃখ ও বেদনা অনুভব করতে পারি।’

লেখক: পরিচালক, সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ, ঢাকা। সাবেক ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং সাবেক চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন