বিজ্ঞাপন

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ: সুলতানা কামাল

December 31, 2023 | 3:07 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, মানবাধিকারের কথা তুললেই সরকার বিরক্ত হচ্ছে। আত্মরক্ষামূলক কথাবার্তা বলার চেষ্টা করেছেন। যারা মানবাধিকারের কথা বলছেন, তাদের বৈরিতার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে যে, রাষ্ট্র ও মানবাধিকারকর্মীদের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে।

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৩: এমএসএফের পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল দেশের গত এক বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে টেনে বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানবাধিকারের প্রতি সম্মান করা, সুরক্ষা দেওয়া এবং মানবাধিকারবোধ বাস্তবায়ন করা। গত এক বছরে এসব ব্যাপারে রাষ্ট্র মনোযোগী ছিল না। যখনই মানবাধিকারের কথা উঠেছে, তারা আত্মরক্ষামূলক কথা বলেছে।

বিজ্ঞাপন

মানবাধিকার সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি জানিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান করা হয়নি। মানবাধিকারবোধ সঞ্চারে সরকার বুদ্ধিবৃত্তিক পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারের আচরণ দেখলে মনে হয়, মানবাধিকারের বিষয়গুলো তারা গুরুত্বপূর্ণভাবে নিচ্ছে না৷ তিনি আরও বলেন, সরকার মনে করছে, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন হলেই যথেষ্ট। মানুষের মনমানসিকতা, মানবাধিকারবোধ উন্নয়নে যেন তাদের দায়িত্ব নেই।

সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৩: এমএসএফের পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এমএসএফের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান।

এমএসএফ পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, ২০২৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এ বছর ৪০০টি ঘটনার বিপরীতে আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৭৭১ জন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১৮৬ জন। গুলিবিদ্ধ, আহত ও নিহতর সংখ্যা মোট ৪ হাজার ৯৯৯ জন।

বিজ্ঞাপন

২০২৩ সালে নির্বাচনি সহিংসতায় (স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ) নিহত হয়েছে ১০ জন। আহত ৬৫১ জন। গুলিবিদ্ধ ৮ জন। বিপরীতে ঘটনা ঘটেছে ১৩৮টি।

এমএসএফ জানায়, এ বছর সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় ছিল মুখোশ পরে গুপ্ত হামলা। যা অতীতের কোনো বছরে এই ঘটনা ঘটেনি। এটি নতুন ট্রেন্ড। এই অপরাধ নিয়ে উদ্বেগ কাজ করছে। গুপ্ত হামলায় আহত হয়েছে ১৭ এবং নিহত হয়েছে ৩ জন। রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা এলাকায় এই ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে জানানো হয়।

বিচার বহির্ভূত হত্যা নিয়ে এমএসএফ জানায়, র‌্যাবের ওপর স্যাংশন আসার পর দেশে বিচার বহির্ভিূত হত্যা কমেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা এটি কম ঘটছে। এরপরও ২০২৩ সালে ১৫টি ঘটনা ঘটেছে যা ২০২২ সালে ছিল ২২টি। এ বছর মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের যা ২০২২ সালে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। সবগুলো ঘটনাই ঘটেছে রোহিঙ্গা এলাকায়।

গুপ্ত হামলার পর আরও একটি অপরাধ বেড়েছে সেটি হলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে অপহরণের অভিযোগ। ২০২৩ সালে এর শিকার হয়েছে ৮৯ জন মানুষ। যা ২০২২ সালে হয়েছিল ৩০ জন।

বিজ্ঞাপন

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ এ চলতি বছরে বহুগুণে বেড়ে গেছে। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। যা ২০২২ সালেও ছিল ১৭ জনে। কারা হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ১৬২ জনের। যা ২০২২ সালে ছিল ৯৩ জনে।

পোশাক শ্রমিক সংক্রান্ত তথ্যে বলা হয়েছে, পোশাক শ্রমিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এতে আহত হয়েছে ১০৫ জনের। নিহত হয়েছে ৪ জন। পোশাক শ্রমিকদের নামে ৪১টি মামলা করা হয়েছে। বিপরীতে সাড়ে ১৬ হাজার আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ১২১ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

২০২৩ সালে সাংবাদিক নির্যাতনের মাত্রাও বেড়েছে। আক্রমণে আহত হয়েছে ১৫২ জন সাংবাদিক। একজন নিহত হয়েছে। হুমকি ও হয়রানি করা হয়েছে ১৬০ জন সাংবাদিককে। যা ২০২২ সালে ছিল, আহত ছিল ১৩৩ জন বিপরীতে একজনের মৃত্যু ছিল। হুমকি ও হয়রানি করা হয়েছিল ১৩২ জন সাংবাদিককে।

ডিজিটাল সাইবার নিরাপত্তা আইনে চলতি বছর মামলা করা হয়েছে ৬২টি। বিপরীতে গ্রেফতার করা হয়েছে ৬৩ জনকে। যাদের বেশিরভাগই সাংবাদিক।

২০২৩ সালে সারাদেশে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫২ জনের। যা উদ্বিগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকলকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় এমএসএফ।

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে জানায়, ২০২৩ সালে সীমান্তে ২৭টি হত্যাকান্ড ঘটে। আহত হয় আরও ৩২ জন। যা ২০২২ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল ১৭ জনে।

২০২৩ সালে ১৮ বছরের নিচে ৫২৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর প্রাপ্ত বয়স্ক ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৭৪ জন। ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে ২২৩ জন নারী। এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছে ১২ জন নারী।

এমএসএফ এর প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। রাজনৈতিক সহিংসতার ক্ষেত্রে বলা হয়, এ বছর পুলিশ বিক্ষোভ দমনে যেভাবে বল প্রয়োগ করেছে তা না করে আরও বেশি কৌশলী ভুমিকা পালন করা। গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পরিপন্থী সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে পুনরায় সংশোধনী আনা। নির্বাচনী সহিংসতা শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ বন্ধে সরকারকে আরও বেশি ভূমিকা পালন করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশমালায়।

সারাবাংলা/ইউজে/ইআ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন