বিজ্ঞাপন

বাজেট ভাবনায় অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সংস্কার প্রসঙ্গ জরুরী

April 23, 2024 | 1:45 pm

ড. মিহির কুমার রায়

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সমাগত এবং এরি মধ্যে বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা ও সংলাপ শুরু হয়ে গেছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যা একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে এবারের বাস্তবতা ভিন্ন যেমন চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃচ্ছ্রতাসাধন ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ঋণ সহায়তার শর্তপূরণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। ফলে এবারের বাজেটের আকার আশানুরূপ বাড়ছে না। আগামী বাজেটের প্রস্তাবিত সম্ভাব্য আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির গড় হার ৬ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা হবে। বিগত ৪ এপ্রিল, ২০২৪ অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটি’র ভার্চুয়াল বৈঠকে আগামী বাজেটের এ খসড়া রূপরেখা উপস্থাপন করা। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ধরা হয়েছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা এবং আগামী অর্থবছরে বাজেটের প্রস্তাবিত সম্ভাব্য আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।ফলে এবারের বাজেটের আকার আশানুরূপ বাড়ছে না। সে হিসাবে বাজেটের আকার বাড়ছে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বাজেটের আকার বাড়ছে মাত্র ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রমতে, প্রতিবছর বাজেটের প্রবৃদ্ধি ১০ থেকে ১২ শতাংশ ধরেই প্রাক্কলন করা হয়। এবার সেটি ৫ শতাংশের নিচে বাড়বে। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ রাজস্ব আদায় না হওয়া, প্রবাসী আয় কমে যাওয়া এবং আমদানি ও রফতানি পরিস্থিতি আশানুরূপ ভালো না হওয়ায় বাজেটের আকার তেমন বাড়ছে না। আসন্ন বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আর্থিক নীতির সঙ্গে রাজস্ব নীতির সমন্বয়। জানা যায়, নতুন বাজেটে সম্ভাব্য মোট আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা (জিডিপি’র ৪.৬%)। ঘাটতি পূরণে বিদেশি সহায়তা আর ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা। বাকিটা অভ্যন্তরীণ উৎস (ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য) থেকে ঋণ নিয়ে পূরণ করা হবে।

সূত্রমতে, আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়নো হতে পারে। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের এর আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এডিপি’র আকার ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।প্রসঙ্গত সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতাসাধনে চলতি বাজেটে গাড়ি কেনা, ভূমি অধিগ্রহণ, ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে। চাহিদার দিক থেকে অনেক কিছু হ্রাস করা হচ্ছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ ঠিক রাখতে গিয়ে টিসিবি ও ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি, বাজার মনিটরিং জোরদার করা হতে পারে।

নির্বাচনের পর নতুন সরকারের মাত্র কয়েক অতিবাহিত হয়েছে। বাজেটে সংস্কার আনার জন্য এই সময়টাই সবচেয়ে উপযুক্ত। দেশের অর্থনীতি নানা প্রতিকূলতা ও সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অনন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে গুণগত মানের সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা জরুরি। সেই সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ও ব্যাংক খাতে দুরবস্থা দূর করার বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। চলমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে বাজেটে সংস্কার আনা জরুরি। সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (রপিড) আয়োজিত আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। বাজেট ও সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটের আকার হতে পারে ৮ লাখ কোটি টাকার আশপাশে। নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, পঞ্চবার্ষিকীসহ অন্যান্য পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ হিসেবে বাড়ানো হয়েছে সুদহার। কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা প্রকৃত অর্থে মুক্ত অর্থনীতির অনুসারী না, কল্যাণকর অর্থনীতির অনুসারী। আসন্ন বাজেটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলন ঘটবে। সরকারের আরও কিছু বিষয় আছে, সেগুলো মাথায় রেখে বাজেট করা হচ্ছে।বাজেটে কী হচ্ছে, না হচ্ছে এসব বিষয় সাধারণ মানুষ জানতে চায় না। তারা চায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসুক। আগামী বাজেটে এ বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাজেটে যা করার আছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে ভূমির খাজনা আদায়ে তহসিল অফিস আছে। আর জেলা পর্যায়ে পর্যন্ত কর কর্মকর্তা আছেন। উপজেলা পর্যায়েও মানুষের আয় বেড়েছে; কিন্তু করদাতা বাড়েনি। কর খেলাপিদের বা দুর্নীতিগ্রস্তদের বাড়তি সুযোগ দেওয়ায় সাধারণ করদাতারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, দেশে এখনও পরোক্ষ কর অনেক বেশি। অথচ উন্নত বিশ্বে প্রত্যক্ষ কর বেশি। এতদিন এসব জায়গায় সংস্কার আনা যায়নি। এখন সংস্কার করার সুযোগ রয়েছে। বছরের শেষ সময়ে তড়িঘড়ি না করে বছরজুড়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান বাজেট তৈরি করা হচ্ছে, পাস হচ্ছে; কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে বাজেটে অনেক বেশি সংস্কার প্রয়োজন। বাজেট প্রণয়নে সংসদীয় কমিটির সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, এনবিআরের কর আদায় প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইন করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে এনফোর্সমেন্ট বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে থাকা ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতিকে অর্থনীতির ডায়াবেটিস বলে মনে করেন তিনি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সর্বোচ্চ গুুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। উচ্চ প্রবৃদ্ধির আকাঙ্খা অর্জনের টানা বাজেট ঘাটতি মেটাতে এতদিন সক্ষম হয়েছে সরকার। তবে আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানো ও সরকারি ব্যয় কমানো মুখোমুখি অবস্থানে থাকবে বলে মনে করেন র্যাপিড চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক।তিনি বলেন, ‘আগামী বাজেটে সম্প্রসারণমূলক নীতি থাকলে মূল্যস্ফীতি কমানো চ্যালেঞ্জ হবে। আগামী বাজেটে বড় সংস্কার প্রয়োজন। নির্বচনের আগে সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল। তবে নির্বাচনের পরে এখন সংস্কার করার উপযুক্ত সময়। যেন বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হয়। বাজেট প্রণয়নে সংখার বাইরে বেরিয়ে গুনগত মানের দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে যাতে বাজেট ব্যয় বাড়ানো যায়। বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকি খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট ব্যয় ব্যবস্থাপনা আরও বাড়ানোর জন্য সংস্কারের প্রস্তাব দেন এই অর্থনীতিবিদ।’

আলোচনার শিরোপায় রয়েছে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই বড় চ্যালেঞ্জ হবে । বিদেশি ঋণ, সুদ ও ভর্তুকির মতো ব্যয় মেটাতে রাজস্ব খাতের চাপ কাটছে না। ব্যয় আরও বৃদ্ধির কারণে চাপ আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আয়ের লক্ষ্যমাত্রা সম্প্রসারণ মূলক হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য খুব বেশি বাড়ছে না । বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি না বাড়লে রাজস্ব আয়ও বাড়বে না। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার দেখা যাচ্ছে না। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে প্রযুক্তিগত, প্রশাসনিক ও আইনি কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করে কাগজবিহীন ও স্বচ্ছ কর পদ্ধতি চালু করা দরকার। এনবিআরকে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর অধীনে রাখা এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর নামে দুটি বোর্ড তৈরি করা প্রয়োজন। রাজস্ব খাত নিয়ে গবেষণা ও পর্যালোচনার জন্য পৃথক উইং থাকতে হবে। এসব খাতে সংস্কার আনা হলে রাজস্ব আয় বাড়ানো যাবে।

‘আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে ১০ লাখ বা এর বেশি মূসক (ভ্যাট) পরিশোধের ক্ষেত্রে ই-পেমেন্ট বা এ-চালান বাধ্যতামূলক করা হবে। বর্তমান ই-পেমেন্ট বা এ চালান শুধু ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি ভ্যাট পরিশোধে ব্যবহারের বিধান আছে। সেটি কমিয়ে আনলে এ খাত থেকে অনিময় দূর হবে এবং রাজস্ব আহরণ বাড়বে। এছাড়া ইলেকট্রনিকস টেক্স ডিটেকশন সোর্স (ইটিডিএস) অনলাইন প-্যাটফরম চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি, সেবার মান উন্নয়ন ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে আয়কর আইন-২০২৩ প্রয়োগ করা হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে অনেক আয়করদাতা আছেন কিন্তু তারা কর দিচ্ছেন না। তাদের করজালের আওতায় আনতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইডিএফ মেশিন স্থাপনের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। খুব শিগগিরই বহু প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনা হবে। এছাড়া নতুন করদাতাদের করজালে আনতে বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, ডিপিডিসির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংশ্লিষ্টদের মতে চলতি অর্থবছরে প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এই সময়ে নির্ধারিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে কমানোর পরও ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। যদিও এই সময়ে প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ হয়েছে। রমজানকে কেন্দ্র করে আমদানি বৃদ্ধির কারণে ফেব্রুয়ারিতে এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিজ্ঞাপন

অর্থ বিভাগের বাজেট নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিগত কয়েক বছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। ওই সময় অর্থনীতির স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে একটি বিশেষ সময়ের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ঊর্ধ্বমুখীভাব বিরাজ করছে মূল্যস্ফীতির হারে। ব্যবসা বাণিজ্য খুব ভালো হচ্ছে না। ফলে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশয় আছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিলে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে গত বছরের আদায়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হতে হবে প্রায় ৩০ শতাংশ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এত বেশি হারে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি কোনো বছরই হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, এই অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। বাকি ৪ মাসে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।

২০২৪ সালে সরকারের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময় হার এবং রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। মূল্যস্ফীতি গরিবের শত্রু, মধ্যবিত্তের পকেট কাটে বিধায় এটিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাটাই প্রথম চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ডলারের বিনিময় হার এবং অনিয়ন্ত্রিত ডলারের মূল্য। এ জন্য বিনিময় হার একটি বান্ডেলের মধ্যে আনতে হবে। তৃতীয় চ্যালেঞ্জ রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি। দুটি কারণে প্রবাসী আয় আনা যাচ্ছে না- তা হলো দক্ষ শ্রমিক পাঠানো অক্ষমতা ও প্রবাসী আয়ের ডলারের মূল্য ও প্রণোদনার স্বল্পতা। এই বিষয়গুলো যেন আগামী বাজেটে বিবেচনায় আসে সে জন্য প্রস্তাব রইল।

লেখক: অর্থনীতিবিদ ও গবেষক

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন