বিজ্ঞাপন

বুশরা আফরিনকে আক্রমণ ও আমাদের ঘুণেধরা সমাজব্যবস্থা

April 26, 2024 | 6:26 pm

ইমরান ইমন

সম্প্রতি এশিয়ার সেই সঙ্গে দেশের প্রথম চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে। তার বিভিন্ন সময়ের ছবিগুলো দিয়ে তাকে নিয়ে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য করা হচ্ছে। অনেকে তাকে ‘কামদেবী’, ‘হট অফিসার’ ইত্যাদি নানা প্রকার নেতিবাচক বিশেষণে বিশেষায়িত করছেন।

বিজ্ঞাপন

বুশরা আফরিনের দোষ কোথায়? মেয়রের মেয়ে হওয়াতে, নারী হওয়াতে, সুন্দরী হওয়াতে? বুশরা আফরিনের জায়গায় আবদুল কাদের নামে একজন পুরুষ হলে কি আপনারা এমন আক্রমণ চালাতেন? নিশ্চয়ই চালাতেন না। এদেশের এক শ্রেণির মানুষ কী পরিমাণ সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড তা এমন কর্মকাণ্ড থেকে সহজেই বোঝা যায়। কী পরিমাণ রুচির দুর্ভিক্ষে জর্জরিত আমাদের সমাজব্যবস্থা। সভ্যতা এখানে এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি, বরং মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বর্বরতা।

পরিবেশ, তাপমাত্রা ও জলবায়ু সংকট ইস্যুতে বুশরা আফরিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ন্যূনতম না জানাশোনা ফেসবুকসেনারাও তাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছে। বিভিন্ন তথ্যসূ্ত্রে জানা যায়, চিফ হিট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বুশরা আফরিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৫টি বস্তি এলাকায় গত ১ বছরে ৫ হাজারেরও বেশি বৃক্ষরোপন করেছেন এবং গাছের চারাগুলো পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য বস্তিবাসীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

সে স্থানগুলো জনবহুল এবং জনগুরুত্বপূর্ণ, সেসব স্থানে মানুষকে দাবদাহে গরমের তীব্রতা থেকে স্বস্তি দিতে অস্থায়ী কুলিং মিশিন স্থাপন করেছেন। যেগুলো বিভিন্ন স্থানে পর্যায়ক্রমে শিফট করে পানি ছিটাচ্ছে। বেশকিছু বস্তি এলাকায় সচেতনতা বাড়াতে ‘হিট অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন’ করেছেন এবং বেশ কয়েকটি ক্যাম্পেইন চলমান আছে। যেখানে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কীভাবে অতিরিক্ত তাপদাহে নিজে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবেন। এছাড়া নগরে দুইটি সবুজ বনায়নের করার সব কিছু পরিকল্পনা চুড়ান্ত করেছেন। একটি কল্যাণপুর আরেকটি বনানীতে। যা একই সঙ্গে শীতলীকরণ, বায়ুদূষণ রোধ এবং মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি করবে। এছাড়া পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক যেকোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার সিম্পোজিয়ামে তিনি দেশের হয়ে সবসময়ই প্রতিনিধিত্ব করছেন।

বিজ্ঞাপন

বুশরা আফরিন কি একা তাপদাহ কমাতে পারবেন? আমার আপনার কি দায় নেই? চারিদিকে যে ভয়াবহ দূষণ আর নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে আজকের এই করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে—সেদিকে কি কারও ভ্রুক্ষেপ আছে? জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট নিয়ে কি কেউ কাজ করছে? প্রতিনিয়ত দূষণে ভারাক্রান্ত হতে হতে আমাদের শহরটি যে বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হয়েছে—সেদিকে কি আমাদের খেয়াল আছে?

আমরা ঘুমের ঘোরে অচেতন অবস্থায় আছি বলেই কোনটা নিয়ে আওয়াজ তুলত হবে, মাতামাতি করতে হবে—সেটা আমরা ভুলে গেছি। যার কারণে পরিবেশ দূষণ থেকে শুরু করে সার্বিকভাবে দেশদূষণেও আমরা নীরব ভূমিকা পালন করছি।

বর্তমানে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ুগত যে ভয়াবহ সংকট বিরাজমান তা থেকে মুক্তি পেতে রাষ্ট্র ও নাগরিক সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। একে অপরকে দোষারোপ না করে যার যার অবস্থান থেকে এ সংকট মোকাবেলায় কাজ করতে হবে। একদম ইউনিয়ন অর্থাৎ, প্রান্তিক পর্যায় থেকে এ কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যকর পদক্ষেপ ও অঙ্গীকার। আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্যক্তি সচেতন হলে সচেতন হবে সমাজ, আর সমাজ সচেতন হলে রাষ্ট্র সচেতন হতে বাধ্য। আর তখনই বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়া সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন