বিজ্ঞাপন

সব নির্দেশ অমান্য করে কিন্ডারগার্টেন খোলা

April 30, 2024 | 7:59 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর গোপীবাগের ব্লু-বার্ড কিন্ডারগার্টেন স্কুল। প্রি-প্লে থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয় চার কক্ষের একটি ভাড়া বাসায়। স্কুলটির কোনো শ্রেণিকক্ষই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত নয়, নেই পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থাও। তবু এই তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও স্কুলটি দিব্যি চলছে। প্রতিদিনই গাদাগাদি করে দুই শিফটে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ব্লু বার্ড কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও স্কুলটির পাঠদান কখনো বন্ধ করা হয়নি। এমনকি, ২১ এপ্রিল থেকে সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহ বন্ধ দেওয়া হলেও এটি ঠিকই চালু ছিল। শুধু ব্লু-বার্ড নয়, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে রাজধানীর অনেক এলাকাতেই কিন্ডারগার্টেন স্কুল খোলা রাখার তথ্য মিলেছে।

অভিভাবকরা বলছেন, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ স্কুল খোলা রাখছে। আর স্কুল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, ক্লাসের সময় পরিবর্তন করেই তারা বিদ্যালয় খোলা রেখেছে। যারা সরকারি আদেশ মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এ সব কিন্ডাররগার্টেনের বিরুদ্ধে এখনই কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার।

টানা এক মাস ধরে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র, কোথাও কোথাও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কোথাও কিছুটা প্রশমিত হলেও আবার অন্য কোথাও তাপমাত্রা বৃদ্ধি রেকর্ড করছে আবহাওয়া অধিদফতর। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দেশের তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে, যা দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

বিজ্ঞাপন

দেশের আবহাওয়ার এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসার পাঠদান আগামী বৃহস্পতিবার (২ মে) পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বতঃপ্রণেদিত হয়ে এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশ মেনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার পাঠদান বন্ধে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও দফতর থেকে নোটিশ জারি করা হয়। সে নোটিশ মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পাঠদান বন্ধও রেখেছে। কিন্তু এই নির্দেশ না মেনে খোলা ছিল কিন্ডারগার্টেনগুলো।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন খবর আসার পর সত্যতা যাচাইয়ে খোঁজ নেয় সারাবাংলা। খোঁজ নিতে গিয়ে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকার বিসমিল্লাহ গলিতে অবস্থিত ব্লু-বার্ড কিন্ডারগার্টেনে ক্লাস নিতে দেখা যায়। অভিভাবকরা সারাবাংলাকে বলেন, গরমে ঘরে থাকাই কঠিন। সেখানে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে আসা বিপদ হয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার সন্তান নার্সারিতে পড়ে। স্কুলে আসতে হচ্ছে। স্কুলে কোনো এসি নেই। তার ওপর রুমে একটি মাত্র ফ্যান, যা এতগুলো শিক্ষার্থীর জন্য যা পর্যাপ্ত না। এখন স্কুল খোলা রাখলে তো না এসেও উপায় নেই।’

বিজ্ঞাপন

আরেক অভিভাবক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রিন্সিপালকে বারবার বলেছি স্কুল বন্ধ করে দিতে। তিনি শোনেননি। ঈদের ছুটি কাটিয়ে যে স্কুল খোলা হয়েছে, তা এখনো চলমান।’

মিরপুরের মনিপুরে ইকরা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজও খোলা ছিল মঙ্গলবার। এখানকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাহিদ জিহান জানান, ইকরা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঈদের ছুটি কাটিয়ে দুই দিন ক্লাস নেওয়ার পর সরকারি নির্দেশ আসায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে খুলে দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্লাস চলছে। হাইকোর্টের নির্দেশের পরও বন্ধ দেওয়া হয়নি।

নাহিদ জিহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি স্কুলটির অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এই গরমে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে স্কুল বন্ধ রাখতে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু অফিস থেকে বলেছে, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না। অফিসের ওপর নির্দেশ রয়েছে, স্কুল খোলা রাখতে হবে।’

সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কিন্ডারগার্টেন খোলা রাখার তথ্য পাওয়া গেছে মিরপুরের কালশিতে আরেকটি স্কুল রোজ গার্ডেন গ্রামারের বিরুদ্ধেও। ব্লু-বার্ড, ইকরা বা রোজ গার্ডেনের প্রিন্সিপ্যালদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তারা কেউ ফোন ধরেননি। তবে ব্লু-বার্ড কিন্ডারগার্টেনের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সামনে সামার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার কারণে স্কুল খোলা রাখার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, কিছু কিছু কিন্ডারগার্টেন সরকারের নির্দেশ অমান্য করে স্কুল খোলা রেখেছে। আমরা কয়েকটি স্কুলে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওই বিদ্যালয়গুলো আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নয়।’

মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত কোনো স্কুল খোলা রাখেনি। আমরা সবাইকে ২ মে পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখতে নোটিশ দিয়েছি। যারা সরকারের নির্দেশ মানছে না, সরকার যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।’

সরকারি নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, নীতিমালা না থাকায় কিন্ডারগার্টেনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাইকোর্ট সব ধরনের স্কুল বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে স্কুল বন্ধের নোটিশ দিয়েছি। তবে আমরাও সংবাদপত্রে দেখেছি, বেশকিছু এলাকায় কিন্ডারগার্টেন স্কুল খোলা রেখেছে। কিন্তু কিন্ডারগার্টেনের ক্ষেত্রে যে অসুবিধা রয়েছে, তাহলো নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় আইনিভাবে এ সব প্রতিষ্ঠানকে কিছু বলা যাচ্ছে না। কিন্ডারগার্টেনগুলোকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতেই নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

সারা দেশে কতগুলো কিন্ডারগার্টেন রয়েছে, তার সঠিক হিসাব কারও কাছে না থাকলেও ধারণা করা হয়, দেশে এমন স্কুলের সংখ্যা ৫৭ হাজার। এ সব বিদ্যালয় অনেকটা নিজেদের নিয়মেই পরিচালিত হয়ে থাকে। একেক স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি-ও ভিন্ন ভিন্ন। এ নিয়ে কোনো অভিযোগ করার স্থান নেই অভিভাবকদের। এ সব বিষয় মাথায় রেখেই একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নীতিমালাটি চূড়ান্ত হওয়ার পথে।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন