বিজ্ঞাপন

অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল

May 9, 2024 | 3:11 am

স্পোর্টস ডেস্ক

ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আবারও প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখল রিয়াল মাদ্রিদ। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে আলফোন্সো ডেভিসের গোলে লিড নেয় বায়ার্ন মিউনিখ। একটা সময় ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তবে শেষের আগে হার মানোট নারাজ রিয়াল। ঠিক ৮৮ মিনিটে হোসেলুর গোলে ম্যাচে ফেরে রিয়াল। আর নির্ধারিত সময় শেষে যোগ করা সময়ের এক মিনিটের মাথায় আবারও গোল করে রিয়ালকে লিড এনে দেন ওই হোসেলুই।

বিজ্ঞাপন

গোটা ম্যাচ বায়ার্নকে খেলায় ধরে রাখা ম্যানুয়েল নয়্যারই শেষ পর্যন্ত ভুল করে বসলেন। অমার্জনীয় এক ভুল করে বসলেন শত পরীক্ষায় বিজয়ী মানুয়েল নয়ার। এরপর রিয়াল মাদ্রিদকে আর ঠেকায় কেন। আরেকটি প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠল কার্লো আনচেলত্তির দল। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ২-১ ব্যবধানে জিতেছে রিয়াল। আর দুই লেগ মিলিয়ে রিয়ালের জয় ৪-৩ গোলে। প্রথম লেগ হয়েছিল ২-২ ড্র।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গোটা ম্যাচজুড়েই ছড়ি ঘুরিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। বায়ার্নের গোলের উদ্দেশ্যে ১৯টি শট যার মধ্যে ৭টিই ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে বায়ার্নের ৮টি শটের ভেতর লক্ষ্যে ছিল ৫টি। আক্রমণাত্মক রিয়াল, কিছুটা রক্ষণাত্মক বায়ার্ন-শুরুর চিত্র ছিল এমনই। ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগটি পায় স্বাগতিকরা তবে দানি কারভাহালের গোলমুখে বাড়ানো বলে প্রয়োজনীয় টোকাটা দিতে পারেননি কেউ। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে অন্যপাশে ভীতি ছড়ায় বায়ার্ন, তবে সার্জ গ্ন্যাব্রির দূরের পোস্টে বাড়ানো বলে শট নেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না।

ম্যাচের ১৩ মিনিটের মাথায় দুবার হতাশায় পুড়তে হয় রিয়ালকে। ভিনিসিয়াস জুনিয়রের দারুণ শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও পোস্ট এড়াতে পারেনি। ফিরতি বল ছয় গজ বক্সে পেয়ে শট নেন রদ্রিগো, এবার দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন নয়ার। ২৩তম মিনিটে সতীর্থের পাস ধরে একজনকে কাটিয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণ শাণান রদ্রিগো। বাইলাইনের কাছ থেকে ডি বক্সের মাঝে খুঁজে নেন স্বদেশি ফরোয়ার্ডকে কিন্তু ভিনিসিয়াস বল নিয়ন্ত্রণেই নিতে পারেননি। প্রতিপক্ষের প্রবল চাপে সেভাবে আক্রমণেই উঠতে পারছিল না বায়ার্ন।

বিজ্ঞাপন

প্রথম ২০ মিনিটে রিয়াল যেখানে গোলের জন্য চারটি শট নিয়ে দুটি লক্ষ্যে রাখে সেখানে বায়ার্ন এই সময়ে পারেনি কোনো শট নিতেই। কঠিন এই অবস্থার মধ্যেই ২৬তম মিনিটে বড় একটা ধাক্কা খায় বায়ার্ন। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন জার্মান ফরোয়ার্ড গ্ন্যাব্রি। বদলি নামেন আলফোন্সো ডেভিস। ২৮তম মিনিটে প্রথম শটেই গোল পেতে পারতো সফরকারীরা। বক্সের বাইরে থেকে জোরাল নিচু ভলি করেন হ্যারি কেইন, ঝাঁপিয়ে এক হাত দিয়ে বল বাইরে পাঠান আন্দ্রে লুনিন।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে ম্যাচের ৪০তম মিনিটে আবারও বায়ার্নকে বাঁচায় ম্যানুয়েল নয়্যার। বক্সের বাঁ দিক থেকে ভিনিসিয়াসের বাঁকানো শটে বল সবাইকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যেই ছিল, শেষমুহূর্তে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান জার্মান গোলরক্ষক।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে বায়ার্ন। বাঁ দিক দিয়ে ভিনিসিয়াস বক্সে ঢুকে ছয় গজ বক্সের মুখে ফেদে ভালভেরদের উদ্দেশ্যে বল বাড়ালেন, তার আগেই প্রতিহত করলেন এরিক ডায়ার। পরের মিনিটে বিপদে পড়তে পারতো রিয়াল, পাল্টা আক্রমণে ডেভিসের শটে কারভাহালের পায়ে লেগে বল উঁচু হয়ে ক্রসবার ঘেঁষে উপরের জালে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই দারুণ আক্রমণ করতে থাকে বায়ার্ন। সুযোগও আসে ৫৩তম মিনিটে কেইনের কাছে। তবে তার আরেকটি প্রচেষ্টা ঝাঁপিয়ে রুখে দেন লুনিন। দুই মিনিট পর ভিনিসিয়াসের পাস গোলমুখে পেয়ে ফ্লিক করেন রদ্রিগো, দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায় বল। খানিক বাদে দারুণ দুই সেভ করে জাল অক্ষত রাখেন নয়্যার। ৫৯তম মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে রদ্রিগোর রক্ষণপ্রাচীরের ওপর দিয়ে নেওয়া ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে ঠেকান জার্মান গোলরক্ষক। পরের মিনিটে তিনি ভিনিসিয়াসের জোরাল শট অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় কর্নারের বিনিময়ে রুখে দেন।

এরপর ৬৬তম মিনিটে দারুণ সুযোগ তৈরি করে বায়ার্ন। বক্সে কারভাহালকে কাটিয়ে জোরাল শট নেন জামাল মুসিয়ালা, দারুণ নৈপুণ্যে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন লুনিন। এর দুই মিনিট পরই বার্নাব্যুকে স্তব্ধ করে দেয় বায়ার্ন। প্রতি আক্রমণে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ডেভিস, আন্টোনিও রুডিগারকে কাটিয়ে জায়গা বানান। বাধা দিতে ছুটে আসেন কারভাহাল, দুই ডিফেন্ডারের মধ্যে দিয়ে জোরাল কোনাকুনি শটে দূরের পোস্ট দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন কানাডার ফরোয়ার্ড ডেভিস। ইউরোপ সেরার মঞ্চে এটাই ডেভিসের প্রথম গোল।

ম্যাচের তখনও বাকি আরও প্রায় ২০ মিনিটের বেশি। গোল হজম করে রিয়াল দুটি পরিবর্তন আনে। টনি ক্রুস এবং অরেলিয়ে চুয়ামেনিকে তুলে নিয়ে মাঠে নামান লুকা মদ্রিচ এবং এডুয়ার্ড কামাভিঙ্গাকে। মদ্রিচ মাঠে নামার পরেই রিয়ালের আক্রমণের ধার বেড়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি কর্নারের ফলশ্রুতিতে জালে বল পাঠিয়ে সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছিল রিয়াল। তবে বল জালে যাওয়ার আগ মুহূর্তে জসুয়া কিমিখকে মুখে ধরে নাচো ফার্নানেদজ ফেলে দেওয়ায় স্বাগতিকদের উল্লাস থেমে যায়, ভিএআরের সাহায্যে গোল দেননি রেফারি।

নির্ধারিত সময় শেষ হতে যখন আর মাত্র মিনিট দুয়েক বাকি, তখনই অবিশ্বাস্য ভুলটি করে বসেন তারকা গোলরক্ষক নয়্যার। ভিনিসিয়াসের সোজাসুজি দুর্বল শট ঠেকাতে গিয়ে তালগোল পাকান তিনি, আর ছুটে এসে আলগা বল জালে পাঠিয়ে দেন ৮১তম মিনিটে ভালভার্দের বদলি নামা হোসেুল। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটেই দলকে জয়ের সুবাস পাইয়ে দেন মৌসুমের শুরুতে এস্পানিওল থেকে ধারে বার্নাব্যুতে পাড়ি জমানো হোসেলু। বাঁ দিক থেকে রুডিগারের ছয় গজ বক্সের মুখে বাড়ানো বল দারুণ এক টোকায় জালে পাঠান স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো বার্নাব্যু।

বিজ্ঞাপন

এরপরও বায়ার্নের ঘুরে দাঁড়ানোর যথেষ্ট সময় অবশ্য ছিল, যোগ করা সময় ৯ মিনিট দিলেও নানা বিঘ্নতায় শেষ পর্যন্ত ঘড়ির কাঁটায় ১৫ মিনিটে গিয়ে ঠেকে। কিন্তু বায়ার্ন আর পারেনি ঘুরে দাঁড়াতে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রেকর্ড ১৫তম শিরোপার লক্ষ্যে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ। আগামী ১ জুন লন্ডনের ওয়েম্বলিতে হবে ফাইনাল।

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন