বিজ্ঞাপন

‘৬ মাস সমুদ্রে যাব না, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই’

May 16, 2024 | 5:30 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

নওগাঁ: ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৩ দিন পর বাড়ি ফিরেছেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার নওগাঁর এ এস এম সাইদুজ্জামান।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৫ মে) দুপুরের দিকে নিজ গ্রামে ফিরেছেন এতে খুশির বাঁধ ভেঙেছে পরিবারের মাঝে। সাইদুজ্জামান’র বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার পলিটেকনিক অ্যাভিনিউ এর দুবলহাটি রোডে পাশে।

সাইদুজ্জামান বলেন, আগামী ছয় মাস আর সমুদ্রে যাব না, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই, মানে একটু রিলাক্স (আরাম-আয়েশ) জীবন কাটাতে চাই। পড়ে হয়তো আবার সমুদ্রে ব্যাক (ফিরব) করব।

তিনি বলেন, মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লার কার্গো নিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম দুবাইয়ের এয়ারপোর্টে। আমরা ওখানে সোমালিয়া জোন থেকে অনেক নিরাপদ স্থান দিয়ে যাচ্ছিলাম। তাদের এরিয়া থেকে প্রায় সাড়ে ৪০০ নটিক্যাল মাইল, যেটা মাইলের হিসেবে প্রায় ৫৫০ মাইলের কাছাকাছি হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ দুর্ভাগ্যবশত গত মার্চের ১২ তারিখে ছোট বোর্ডের মতন যেটা তাদের ডাকাতি করে আনা। হঠাৎ করেই সেখান থেকে এসে আমাদের জাহাজে অ্যাটাক করে।

বিজ্ঞাপন

আমরা যেহেতু সেইফ জোনে ছিলাম, সেক্ষেত্রে আমরা বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে তারা আক্রমণ চালাবে। তারা আমাদেরকে থামানোর জন্য গুলি ছুড়ছিল। জাহাজে উঠে আমাদের একজন নাবিককে তারা জিম্মি করে ফেলে। আমাদের নিয়ম- যে কেউ যদি জিম্মি হয় তাহলে আমাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আমরা তখন গোপন কক্ষে ছিলাম। তখন তাদের কমান্ডে আসা ছাড়া কিছু করার ছিল না। তারা আমাদের আশেপাশে প্রায় ৬০/৬৫ জনের মত থাকতো কিন্তু যখন আমাদেরকে ডাকাতরা ছেড়ে দেয়, তখন ৬৬ জনকে গুণেছিলাম।

জানতে চাইলে সাইদুজ্জামান বলেন, আমরা বন্দি অবস্থায় যতোই মনোবল ধরে রেখেছিলাম। এমনও ঘটনা আছে, যেখান থেকে নাবিকরা আর ফিরে আসতে পারে নাই। এমন ও রেকর্ড আছে, বাংলাদেশের কিছু ছেলে অন্য একটা বিদেশি কোম্পানিতে ছিল, তারা প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন বছর জাহাজে থাকার পরে তাদের জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। আবার তাদেরকে সাগরে ফেলে দিয়েছিল, তারা সাঁতার কেটেও পালিয়ে এসেছিল।

বিজ্ঞাপন

আমরা এখন থেকে যে আসতে পেরেছি বা মুক্তি হতে পেরেছি, এজন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করি। বাংলাদেশের সবাই আমাদের জন্য দোয়া করেছেন, রোজার মাস ছিল, এজন্য আল্লাহ আপনাদের দোয়া শুনেছেন আমরা ফিরে আসতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, দেশে আসার পরে যখন দেখলাম সত্যিই বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন আমরা আরও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছি। পরিবারের কাছে যখন ফিরে এসেছি, সেটার আনন্দের ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। যেখানে আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, সেখানে একটা কিছু মিসিং হবে সেখান থেকে ফিরে এসে সবাই খুশি।

সাইদুজ্জামানের স্ত্রী মাননা তাহরীন বলেন, সবার প্রথমে সৃষ্টিকতার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত ১২ মার্চ বেলা ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল।

মুক্তিপণ পরিশোধের পর গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জলদস্যুরা নেমে যাওয়ার পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত উপকূল থেকে সোমালিয়ার সীমানা পার করে দেয়।

জাহাজটি ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৪টায় আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। পরদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নোঙর করে জেটিতে। সেখানে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা খালাসের পর ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় সেটি চুনাপাথর বোঝাই করার জন্য মিনা সাকার বন্দরে যায়। চুনাপাথর বোঝাই শেষে আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দর থেকে জ্বালানি নিয়ে ৩০ এপ্রিল দেশের পথে পাড়ি দিতে শুরু করে এমভি আব্দুল্লাহ।

জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তির একমাস পর ১৩ মে দুপুরে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় কক্সবাজারে পৌঁছে জাহাজটি। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ সেটা কুতুবদিয়ায় পৌঁছে নোঙর ফেলে। জাহাজটিতে নতুন নাবিক পাঠানো হয়। লাইটারেজ জাহাজে চড়ে নতুন নাবিকদের একটি দল জাহাজটির দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন ওই ২৩ নাবিক।

নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

আরও পড়ুন:

সারাবাংলা/এনইউ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন