বিজ্ঞাপন

আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি, কথাটা মনে রাখবেন

May 30, 2018 | 6:27 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : চলমান মাদকবিরোধী অভিযান বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি যখন কাউকে ধরি, ভালো করেই ধরি। এটা মনে রাখবেন।’

দুইদিনের ভারত সফর শেষে গণভবনে অভিজ্ঞতা জানানোর সময় বুধবার (৩০ মে) এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

ওই সাংবাদিক মাদকবিরোধী অভিযানে অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। পাশাপাশি মাদক ব্যবসার গডফাদারদের ধরতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাকে গডফাদার বলছেন? কে গডফাদার, কে ডন, কে কার ভাই, কে কার চাচা এগুলোর বিচার করছি না। তবে যে যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি।’

বিজ্ঞাপন

মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদক সমাজে একটা ব্যাধির মতো, আপনারাই পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন এটি। আপনারা কি চান অভিযান চলুক, না বন্ধ হয়ে যাক?’

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন অভিযান করে তখন এটিই স্বাভাবিক যে, এ ধরনের অভিযান চালাতে গেলে কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে। এ পর্যন্ত যে কয়টা ঘটনা হয়েছে, আপনারা একটা ঘটনা দেখান যে, নিরীহ কেউ এ ঘটনার শিকার হয়েছেন?’

অভিযানে এই পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানে কোনো নিরীহ ব্যক্তি শিকার হলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এই অভিযান হঠাৎই শুরু হয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য নিয়ে নজরদারি চালিয়েছে। এরপরই এই অভিযান চালানো হচ্ছে।’

সফরে সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে : শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। উন্নতদেশ হিসেবে বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার পেছনে ভারত সবসময় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পাশে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই ভবন উভয় দেশের সংস্কৃতির প্রসারে অবদান রাখবে।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন। কারাগারেও শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে রবীন্দ্র রচনাবলি থাকত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সহযোগিতার কথা স্মরণ করেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘২৬ মে বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সম্মানসূচক ডি.লিট গ্রহণ করি। আমি এটি সমগ্র বাঙালিদের নামে উৎসর্গ করেছি। আমি কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি। আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। তাকে ধন্যবাদ দিই এই কারণে যে, তিনি নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন। আসানসোলের দুর্গাপুরে নজরুলের নামে বিমানবন্দর করেছেন।’

কারও আশ্বাসে ভরসা রেখে চলি না : তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বাস দিয়েছেন। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাংবাদিক আবেদ খান জানতে চান এই মেয়াদে চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কারও আশ্বাসে ভরসা রেখে চলি না। তিস্তা চুক্তি নিয়ে কথা বলার জন্য জয়েন্ট রিভার কমিশন (জিআরসি) আছে। এ নিয়ে জিআরসি আছে। তারা আলোচনা করছে। এ সফরের উদ্দেশ্য তিস্তা চুক্তি ছিল না। তবে তিনি (মোদি) যখন আশ্বাস দিয়েছেন অপেক্ষা করেন।’

অপর একজন সাংবাদিক জানতে চান মোদি ও মমতার সঙ্গে তিস্তা নিয়ে কী কথা হয়েছে?

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে যেখানে আমি গিয়েছিলাম বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করতে ও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দিতে।’

পরে প্রধানমন্ত্রী আবার বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন। আপনারা সেখানেই থাকেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি নদীর ড্রেজিং করছি, জলাধার তৈরি করছি। পানি যেন আপদকালীন মজুদ রাখা যায় সে ব্যবস্থা করছি।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতার বিকল্প প্রস্তাব ভারত সরকার বিবেচনা করছে। এই বিকল্প প্রস্তাব কী সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব কথা এখন জানার দরকার নেই। এটা ভারতের বিষয়। সেটা তাদের কাছে জানতে চান। আমার কাছে নয়।’

প্রধানমন্ত্রী তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রাখেন। বলেন, ‘আপনি করলেন কিসের জন্য? আপনি জানতেন না এখানে ব্যারাজ করলে পানির সমস্যা হবে?’

‘তিস্তা ব্যারাজ তো আমরা নিজেরা করেছি। এখন নিজেরা পানি নেই, পানি নেই করছেন কেন? এর উত্তর আমাকে কে দিবেন?’

‘তারা (ভারত) কথা দিয়েছে, কথা যখন দিয়েছে অপেক্ষা করেন।’

তবে পানি নিয়ে সরকার নিজেরাই ব্যবস্থা করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন,‘ সেই পানি না এলে চলবে না, সেটা না। নিজেরা ড্রেজিং করছি।’

‘ব্রহ্মপুত্র নদ, ধরলা নদী, তিস্তা নদী থেকে শুরু করে কুশিয়ারা, মেঘনা, যমুনা, সবগুলো যেন ড্রেজিং হয়, তার ব্যবস্থা করছি। যার ফলে আমাদের পানির সমস্যা নিজেরা যেন সমাধান করতে পারি, তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

নোবেল পুরস্কারের ইচ্ছা নেই : নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য লবিস্ট নিয়োগের কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত বলে ওই সংবাদ সম্মেলেনে মন্তব্য করেন গোলাম সারওয়ার। এ সময় লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি ভাবতে বলেন সমকালের সম্পাদক।

এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের প্রক্রিয়া চালানোর কোনো প্রবণতা আমার নেই।  লবিস্ট রাখার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই। সামর্থ্য থাকলেও এসব আমি সমর্থন করি না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে শান্তি দিতে পারলাম কি না সেটাই বড় বিষয়। গরিব-দুঃখি মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে পারলেই এটিই আমার বড় পুরস্কার। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে অনেক পুরস্কারের প্রস্তাব পড়ে আছে। অনেক পুরস্কার দেওয়া হয়েছে যেটি আমি আগে জানিও না। চাইও নাই।’

রিজভীকে এক বালতি পানি পাঠান : প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এক বালতি পানিও আনতে পারেননি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মন্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে এক বালতি পানি পাঠানো উচিৎ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা তো বলল আমি এক বালতি পানিও আনতে পারিনি। এক বালতি পানি রিজভীকে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। একজনকে দায়িত্ব দাও ওকে কয়েক বোতল পানি পাঠিয়ে দিক। রোজার মাস, কাজে লাগবে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো অনেক বোঝে তাহলে আর বলার দরকার নাই। তারাও তো কম যায় নাই। খালেদা জিয়া কি ভারতে যায় নাই? জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করার ২ বছরের মধ্যেই ভারতে গিয়েছিল। কেন গিয়েছিল? সেটা বিএনপিকে জিজ্ঞেস করেন, ক্ষমতা দখল করেই ভারত গিয়েছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি এখন তিস্তার পানি কথা বলে, বিএনপি নেতাদের কি মনে নাই উনাদের নেত্রী ভারত সফরে গিয়েছিলেন। সফর শেষে এসে বলেছিলেন, ওহ গঙ্গার পানি। সেটার কথা বলতে তো ভুলেই গিয়েছিলাম।’

ভারতকে যা দিয়েছি সারাজীবন মনে রাখবে : আমরা কোনো প্রতিদান চাই না। আমরা ভারতকে যা দিয়েছি সেটি তারা সারাজীবন মনে রাখবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজারে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে করা সাংবাদিক নেত মনজুরুল আহসান বুলবুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারও কাছে প্রতিদান চাওয়ার অভ্যাস আমার কম। আমি পারলে মানুষকেই দিই। ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারাজীবন মনে রাখবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু ভারতে যাইনি। জিয়াউর রহমান কি যাননি? বেগম খালেদা জিয়া কি যান নি? ২০০১ সালে খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল ভারতের কাছে। কিন্তু আমি বলেছিলাম, গ্যাসের মালিক জনগণ। ৫০ বছরের গ্যাস মজুদ থাকবে তারপর গ্যাস বিক্রি চিন্তা-ভাবনা করা যাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় আসার জন্য মুচলেকা দেয় আমি সেই দলের না। ক্ষমতায় আসার জন্য আমি মুচলেকা দেই নাই। তখন আমি শুধু বলেছিলাম আল্লাহ জন দেখে ধন দেন। তারা গ্যাসও পায়নি, গ্যাস বিক্রিও করতে পারেনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ছিল। এ দেশে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় থেকে তাদের মদদ দিয়েছে। আপনাদের মনে নেই ১০ ট্রাক অস্ত্রের কথা? আপনারা ভুলে গেছেন? আপনারা ভুলে যান আমি ভুলি না।’

সীমান্ত হত্যার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সীমান্ত হত্যা নেই বললেই চলে। সেটি কমিয়ে এনেছি আমরা।’

গত ২৫ মে দুইদিনের সফরে ভারতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সফরের প্রথম দিন তিনি বিশ্বভারতীকে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেন। ভবনের উদ্বোধনীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকও করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সফরের দ্বিতীয় দিন পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি অর্জন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

সফর শেষে ২৬ মে রাতে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/একে

আরও পড়ুন

নজরুল-শেখ মুজিব পাশাপাশি দুটি নাম: প্রধানমন্ত্রী
বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সব সমস্যার সমাধান করতে পারব: প্রধানমন্ত্রী
নজরুলের সাম্যবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ নজরুল পেলেন ডি.লিট
বঙ্গবন্ধুর নামে ভবন হবে পশ্চিমবঙ্গে : মমতা
এ মেয়াদে তিস্তার মীমাংসা হচ্ছে না

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন