বিজ্ঞাপন

জট ছাড়াই যান চলছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে

June 15, 2024 | 4:52 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঈদুল আজহা উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। ঠিক একদিন আগেই শুক্রবার (১৪ জুন) নানা কারণে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তিতে পড়ে বাড়ির পথে পাড়ি দেওয়া যাত্রীরা। তবে শনিবার (১৫ জুন) রাজধানী থেকে চট্টগ্রামের দিকে বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে ভোগান্তি ছাড়াই দুপুর পর্যন্ত বাড়ি ফিরছেন যাত্রীরা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৫ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিকেল ৩টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও বড় ধরণের যানজট ছাড়াই রাস্তায় যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

এদিন সকাল থেকেই রাজধানীর ফকিরারপুল, আরামবাগ এলাকার বিভিন্ন কাউন্টারে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। মতিঝিল, ইত্তেফাকের মোড়, টিকাটুলি সংলগ্ন এলাকায় গাড়ির কিছুটা ধীর গতি থাকলেও সেটি গরুর বাজার সংশ্লিষ্ট কারণে হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে সায়েদাবাদ, জনপদের মোড়, যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে যাত্রীদের চাপ। নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনীসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকার গাড়ি এখান থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে এসব এলাকায় গাড়ি পর্যাপ্ত থাকায় খুব একটা বেশি ভোগান্তি নেই যাত্রীদের। একইসঙ্গে দেখা গেছে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসও। তবে এখানে একাধিক পরিবহণে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচল করা এশিয়া লাইন পরিবহনের চালক রুবেল মিঞা সারাবাংলাকে বলেন, গত কাল দুই ট্রিপ মারতেই জান কাহিল হয়ে গেছে। তবে আজকে সারা রাস্তা বলা যায় ফাঁকা। কুমিল্লা থেকে সকালে ঢাকা এসে আবার এখন যাচ্ছি। আজকে আল্লাহ দিলে আরও দুই ট্রিপ মারতে পারবো। যাত্রীও আছে মোটামুটি। তবে মেঘনার পর থেকে ঢাকায় ঢোকার মুখে গাড়ি স্লো না হলে আরও বেশি ট্রিপ হতো।

সরেজমিনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকার মূল সড়কে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক দেখা যায়। তবে ঢাকার পথে থাকা শনির আখড়ার গরুর হাট এলাকা থেকে হানিফ ফ্লাইওভারের দিকে গাড়ি কিছুটা ধীর গতিতে চলতে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় লোকজন জানান, আগে তো মূল সড়কেই লোকাল বাস দাঁড়িয়ে থাকতো। কিন্তু এখন আলাদা লাইন হয়েছে লোকাল বাসের জন্য। আর তাই যারা ডাইরেক্ট গাড়িতে উঠছে তাদের খুব একটা বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। তাছাড়া এখন সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত থাকা মেডিয়ান গ্যাপগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে এখানে ইউলুপ সিস্টেম চালু করার কারণে কোনো পরিবহনের আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না।

সরেজমিনে মেঘনা ব্রিজ এলাকায় দেখা যায়, ধীরগতিতে হলেও রাস্তায় জট বাধা ছাড়াই গাড়ি চলছে। সোনারগাঁও-মোগরাপাড়া এলাকার রাস্তায় গরুর হাটের কারণে মাঝে মধ্যে গাড়ি কিছুটা ধীরগতিতে চলছে বলে জানান এশিয়া এয়ারকনের চালক মো. হাবিব।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সকাল ৫টা ৪০ মিনিটে ঢাকা থেকে বের হয়েছি কুমিল্লা উদ্দেশে যাওয়ার জন্য। সকাল ৭টার আগে পৌঁছে যাই কুমিল্লা। সেখান থেকে আবার ঢাকা আসি দুপুর ১২টার দিকে। দুপুর দুইটার দিকে আবার কুমিল্লার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছি। রাস্তা এতোটাই ফাঁকা যে আজকে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। অথচ গতকাল জ্যামের কারণে বসে থাকতে থাকতে বিরক্তি ধরে গেছিল।

দাউদকান্দি গোমতী ব্রিজ এলাকাতেও প্রায় সময়েই টোল প্লাজার ধীরগতির কারণে ধীরগতিতে গাড়ি চলার অভিযোগ থাকে। তবে শুক্রবার (১৪ জুন) এখানে প্রচুর জ্যাম থাকলেও শনিবার (১৫ জুন) সকাল থেকে তা ছিল না।

বিজ্ঞাপন

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. রিজিওনের আলম সারাবাংলাকে বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে শুক্রবার (১৪ জুন) রাস্তার কিছু স্থানে জট থাকলেও আজকে তা একদম নেই। দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায় শুক্রবার (১৪ জুন) মধ্যরাত থেকেই আর কোনো জ্যাম নেই। এর ফলে আজকে কোনো জ্যাম নেই কোনো দিকে।

কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় তেমন গাড়ির জ্যাম না থাকলেও সুয়াগাজীতে হওয়া সড়ক দুর্ঘটনার কারণে কিছু সময় জট সৃষ্টি হয়। তবে হাইওয়ে পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে গাড়িগুলো সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।

এছাড়া চৌদ্দগ্রাম, ফেনী মহিপাল, বারইয়ারহাট, সীতাকুন্ড এলাকায় গাড়ি ধীরগতিতে চললেও কোথাও জ্যাম দেখা যায়নি।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেও তাই দেখা গেছে উচ্ছ্বাস। মাইজদি যাওয়ার উদ্দেশে লাল সবুজ পরিবহনের যাত্রী সরল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, গত কাল থেকে ছুটি শুরু হলেও রাস্তার অবস্থা দেখে ভয়েও বের হয় নাই। তবে আজকে রাস্তা দেখছি পুরোই ফাঁকা। ইলিয়টগঞ্জের দিকে একটু ধীরগতিতে গাড়ি চললেও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় নাই।

বাসভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ থাকলেও অধিকাংশ যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে ঈদে ঝামেলামুক্ত ভাবে বাড়ি ফিরতে পারার এই উচ্ছ্বাস।

কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মহাসড়কে যাত্রীবাহী পরিবহন ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের পণ্যবাহী যান চলাচল করে। ঈদযাত্রায় এই মহাসড়কে যেনো যাত্রীদের কোনো দুর্ভোগ না হয় সেদিকে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।

তিনি বলেন, ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়কের যেসব স্থানে বাজার আছে সেগুলোসহ মূল রাস্তায় দেখা যায় একটি গাড়ি নষ্ট হলেই রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি হয়। আমাদের টিম সেগুলো খুব দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছে। অনেক সময় আবার দেখা যায় সাধারণ মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে ভুলভাবে। এক্ষেত্রে আসলে সব মিলিয়ে যে বিশৃঙ্খলাগুলো হয় তাতেই যানজট লেগে যায়।

তিনি আরও বলেন, এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা উদ্ধার কাজ চালানোর সময়টাও পাই না। অল্প সময়েই গাড়ি ভুল রাস্তায় ভিন্ন লেইনে চলে আসে। আর এগুলোর কারণে সৃষ্টি হয় জ্যাম। আর তাই এবার প্রতিটা মোড়ে আমাদের সদস্যরা নজরদারি করে যাচ্ছে।

কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের এই পুলিশ সুপার বলেন, এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক আছে। আশা করছি বাকি সময়ও এভাবেই চালাতে পারব আমরা। সজাগ দৃষ্টি রেখে আমরা রাস্তায় সবার ঈদযাত্রা সহজ করতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।

তিনি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে আমরা সচেষ্ট আছি। যাত্রায় কেউ যেন ছিনতাই ডাকাতের কবলে না পড়ে সেজন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে মহাসড়কগুলো। আগামী দুই তিন দিন মহাসড়কে যানবাহনের কিছুটা চাপ থাকলেও আমরা সেটা মোকাবিলা করতে পারবো।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনে ৪৪টি মোবাইল টীম, ৩৪ টি পকেট টিম, ঢাকা চট্টগ্রামের মহাসড়কের ২২ থানায় ২২ টি কুইক রেসপন্স টিম, ইন্টেলিজেন্স টিম রয়েছে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য, সরকারি এবং বেসরকারি রেকার মোতায়েন করা হয়েছে।

কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, নির্দিষ্ট গন্তব্য ব্যতীত কোরবানির পশুবাহী গাড়ি ভিন্ন কোনো জায়গায় জোরপূর্বকভাবে যেনো কেউ নামাতে না পারে সেজন্য আমাদের সদস্যরা তৎপর। চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ পাওয়া মাত্রই নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, যেসব ট্রাক বা পিকআপে করে মানুষ বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রওয়ানা দিচ্ছে তাদের দেখা মাত্র গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়ার কোনো অভিযোগ পেলেও আমরা সেটা সমাধানের চেষ্টা করবো।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন ও যানজট মুক্ত রাখতে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন ৩৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কে পৃথকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তারা।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী সারাবাংলাকে বলেন, মহাসড়কে যেনো কোথাও কোনো জট সৃষ্টি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং যাত্রী, চালক, শ্রমিক ও গাড়ীর মালিকদের সদিচ্ছায় ঈদ যাত্রায় নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, যাত্রী সাধারণের নানা ধরণের ভোগান্তি লাঘবে এবং যানজট নিরসনে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ কাজ করছে। এবছরের ঈদযাত্রা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও আনন্দময় হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

অননুমোদিত যানবাহনে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত না করার জন্যে তিনি যাত্রী সাধারণের প্রতি আহ্বান জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বলেন, যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে কেউ যেন যাতায়াত না করে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে।

সারাবাংলা/এসবি/এনইউ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন