বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য বিবেচনায় রেখে ঈদ উদ্‌যাপনের পরামর্শ

June 17, 2024 | 8:30 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঈদ মানে স্বজনদের সঙ্গে কাটানো খুশির সময়। ঈদ মানে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি আর আড্ডা দিয়ে বেড়ানোর সুযোগ। ঈদ মানেই আনন্দের উচ্ছ্বাস। ঈদুল আজহা হওয়ায় এর সঙ্গে কোরবানির পশুর মাংসও অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। তার সেই অনুষঙ্গ প্রসঙ্গেই চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্য সচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদুল আজহা উদ্‌যাপনে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। বিশেষ করে যারা এরই মধ্যে নানা ধরনের রোগ বা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে সচেতন থাকার বিকল্প নেই।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত বছর দেশে এক কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কোরবানি হয়েছিল। এ বছর পশু কোরবানি হতে পারে এক কোটি ১০ লাখ। এর প্রায় অর্ধেকই গরু। আর ঈদুল আজহায় কোরবানি করা পশুর সংখ্যা দেশে সারা বছর জবাই হওয়া পশুর প্রায় অর্ধেক। স্বাভাবিকভাবেই তাই কোরবানির সময় মাংস খাওয়া নিয়ে বাড়তি আগ্রহ কাজ করে থাকে। কেউ কেউ আবার স্বাস্থ্যের কথা ভেবে কোরবানির মাংসও একেবারেই মুখে তোলেন না। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, মাংস সাধারণত যে কেউ খেতে পারে, তবে তা পরিমিত মাত্রায়। পাশাপাশি পশু কোরবানির সময়ও সচেতন থাকতে হবে।

ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, কোরবানি করা পশুর মাংস গ্রহণে কোনো ক্ষতি নেই। মাংস হচ্ছে প্রাণিজ প্রোটিনের অন্যতম উৎস। তবে খাদ্য সচেতনতা জরুরি। বিশেষ করে যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগেন, তাদের মনেও খাবার নিয়ে থাকে অনেক সংশয়। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, দুয়েকদিন বেশি খেতে যদিও খুব বাধা নেই, তবু খাওয়া উচিত রয়ে-সয়ে।

বিজ্ঞাপন

কোরবানির পশুর সিংহ ভাগই গরু ও খাসি, যেগুলোর মাংসকে বলা হয় ‘রেড মিট’। বিশেষ করে যারা হৃদরোগে আক্রান্ত বা যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি বা যাদের এরই মধ্যে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (হৃৎকম্পন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়েছে, তাদের জন্য এ ধরনের মাংস খাওয়ার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কিডনিজনিত রোগ, হাইপারটেনশন বা ডায়াবেটিস রোগীদেরও রেড মিট খাওয়ার সময় সচেতন থাকতে হবে। সচেতন থাকতে হবে তাদের, যারা দীর্ঘমেয়াদি পেটের পীড়া বা খাদ্য হজমজনিত জটিলতায় ভুগছেন। ঈদে দুধের তৈরি নানা খাবারও পরিবেশন করা হয়। এসব খাবার নিয়েও সচেতন থাকতে হবে।

অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ বলেন, বেশি মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। যাদের অ্যানাল ফিশার ও পাইলসজাতীয় রোগ আছে, মাংস বেশি খেলে তাদের পায়ু পথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ইত্যাদি বাড়তে পারে। এমনকি পায়ু পথে রক্তক্ষরণও হতে পারে। তাই মাংস খেলে সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুষি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি খেতে হবে। যাদের আইবিএস আছে, তারা দুগ্ধজাত খাবার পরিহার করুন।

মাংস রান্নায় চর্বির ব্যবহার নিয়ে সচেতন থাকার কথা জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, অতিরিক্ত চর্বি খাওয়া এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কোরবানির সময় এ বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, রান্না সুস্বাদু হবে মনে করে মাংসে বেশ কিছু চর্বি আলাদাভাবে যোগ করা হয়। এসব পরিহার করা উচিত। মাংস খাওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রেখে পরিমিত পরিমাণে এবং চর্বি ছাড়িয়ে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, অনেকেরই গরুর মাংসে এলার্জির ঝুঁকি থাকে। তাদের গরুর মাংস এড়িয়ে চলাই যুক্তিযুক্ত। যদি কেউ খেতে চান, আগে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী খেতে পারেন। যাদের রক্তে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টারল আছে কিংবা যারা উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক বা হৃদরোগের মতো রোগে আক্রান্ত, তারা খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সারা বছর যে ধরনের নিয়মকানুন পালন করেন, কোরবানির ঈদের সময়ও সেভাবে চলাই ভালো।

অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ বলেন, যারা কিডনির সমস্যায় ভোগেন, যেমন ক্রনিক রেনাল ফেইলিওর, তাদের প্রোটিনজাতীয় খাদ্য কম খেতে বলা হয়। তাই মাংস খাবার ব্যাপারে তাদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক হবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সারাবছরের মতো ঈদের সময়ও একই খাবার খেলেই ভালো হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান সারাবাংলাকে বলেন, মাংসের পুষ্টিগুণ বিবেচনায় ছোটদের সবাই পছন্দমতো খেতে পারবেন। বড়দের যারা কোনো অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত না, তারাও অবশ্যই খেতে পারবেন। স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভের জন্যেই যেহেতু কোরবানি, তাই ক্যালরি হিসেব করে মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে আসলে বাধা নেই।

তিনি বলেন, হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ বা ইউরিক এসিডজনিত সমস্যা যাদের আছে বা যারা বিভিন্ন দীর্ঘ মেয়াদি রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য চর্বি কমজাতীয় মাংস খাওয়া ভালো। এ ক্ষেত্রে চর্বি কম এমন মাংস ছোট ছোট করে কেটে গরম পানিতে সিদ্ধ করে খেতে পারেন। ভাজাপোড়া বা তৈলাক্ত খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।

বিজ্ঞাপন

ডা. মোস্তফা জামান আরও বলেন, যদি কেউ মনে করেন মাংসের সঙ্গে সবজি মিশিয়ে খাবেন, সেটা ভালো। ঈদের দিনে যেহেতু মাংস খাওয়াই হবে, সেক্ষেত্রে তিনবেলা পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন কোরবানির খাওয়াটা ভূরিভোজ ধরনের অতিরিক্ত হয়ে না যায়।

স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়ে ডা. মোস্তফা বলেন, যেহেতু এখন আবহাওয়া গরম, তাই নিয়মিত প্রচুর পানি পান করতে হবে। যারা অসুস্থ তারা যেন সরাসরি কোরবানির পশু কাটার সঙ্গে সংযুক্ত না থাকেন। আবহাওয়ার সঙ্গে শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে আমরা যদি ঈদ উদযাপন করি, সেটা সবার জন্যিই মঙ্গলজনক। সুস্থ থাকলে সবার ঈদ আনন্দ থাকবে। এর ব্যতিক্রম হলে কিন্তু সেটা কারও জন্যই আর উৎসব থাকবে না।

তিনি বলেন, ঈদে অনেকে মিষ্টি খেতে চান। এ ক্ষেত্রে পরিমিত মাত্রায় খাওয়া ভালো। এ ছাড়াও খাওয়ার পাতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করা উচিত। অনেকেই পোলাও খেতে চান। এ ক্ষেত্রে তেলের পরিমাণ যেন কম হয়। অর্থাৎ চিনি, তেল ও লবণের মাত্রা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে ঈদের খাওয়া-দাওয়ায়, সেদিকটা নিশ্চিত করতে হবে।

এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, কোরবানির মাংসে তেল বা ঘিয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিলে, ভুনা মাংসের বদলে শুকনো কাবাব করে খেলে, কোমল পানীয় ও মিষ্টি একেবারে কমিয়ে খেলে কোরবানির ঈদের সময়ও ভালোই থাকা যায়। সেই সঙ্গে হালকা ব্যায়াম বা বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি কমিয়ে নিতে পারলে আরও ভালো।

তিনি বলেন, মধ্যবয়সী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি ইত্যাদি না থাকা সত্ত্বেও এই বয়সের মানুষের ঈদের খাবারের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকা দরকার। অতি ভোজনে তাদের পেট ভরা ভাব, অস্বস্তিকর অনুভূতি, বারবার ঢেঁকুর ওঠা এমনকি বুকে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। বেশি মাংস খেলে তা পরিপূর্ণভাবে হজম হতে সময় লাগে।

তিনি আরও বলেন, চর্বিজাতীয় খাদ্য অতিমাত্রায় খাওয়া বিপজ্জনক। মাংসের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সবজি খাওয়া যেতে পারে। টাটকা সবজি পাকস্থলীকে সাবলীল রাখে। পরিমিতিবোধ যেখানে রসনা সংবরণ করতে পারে, সেখানে ভয়ের কিছু নেই।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন