বিজ্ঞাপন

‘দুদকেও দুর্নীতি আছে, শুধু কর-কাস্টমসকে টার্গেট করলে হবে না’

November 11, 2018 | 7:04 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বেশি অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিবেচনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কেবল কর ও কাস্টমস বিভাগকে টার্গেট করলে হবে না; বরং নিরপেক্ষ তদন্তে দুদকেরও অনেক দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

কর ও কাস্টমসে দুর্নীতি বেশি— দুদকের এ সম্পর্কি রিপোর্ট হাতে পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি দুদকের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। কারণ হলো— আপনি যদি একেবারে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেন, তাহলে দুদকেরও যে কত ধরনের দুর্নীতি আছে, তা জানা যাবে। আমাদের দেশে সবারই দুর্নীতি আছে। এই প্রবণতা বদলানোর জন্য সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির দায়ে দুদকের হাতে আটক হয়েছিলেন সাবেক এই সেতু সচিব। পরে অবশ্য দুদকের দায় থেকে তিনি খালাস পান। এদিকে, সম্প্রতি আয়কর বিভাগের দুর্নীতি প্রতিরোধে ১৩টি উৎস চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে ২৩ দফা সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি এনবিআরেও পাঠানো হয়েছে। রোববার (১১ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবনে আয়কর মেলা-২০১৮ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে এনবিআর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কেন্দ্রীয়ভাবে ১৩ নভেম্বর শুরু হবে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা, চলবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। সারাদেশে থাকবে এ মেলার আয়োজন। ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে সাত দিন, জেলা শহরগুলোতে চার দিন, ৩২ উপজেলায় দুই দিন ও ৭০ উপজেলায় একদিন করে ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’ স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’।

আয়কর মেলায় বিলাসবহুল প্রচারণা বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আগের মতো বিলাসবহুল প্রচারণা এখন আর নেই। এ সময় এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, সারাদেশে এবারের আয়কর মেলার বাজেট মাত্র ২২ কোটি টাকা।

গত বছর চালু করা সাধারণ করদাতাদের কর কার্ড দেওয়া বন্ধ করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ট্যাক্স কার্ড দিতে গিয়ে যত অর্থ ও শ্রম খরচ হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তার কোনো উপযোগিতা কিন্তু নেই। এসময় এনবিআরের এক সদস্য জানান, ট্যাক্স কার্ড দেওয়া বন্ধ হয়নি। প্রকল্পটি অল্প সময়ের সিদ্ধান্তে মাত্র একবছরের জন্য চালু করা হয়েছিল। পরে তা আবারও চালু হতে পারে। আর গত বছর কেবল ঢাকাতেই ৯৬ হাজার কর কার্ড দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি কর কার্ডে খরচ পড়েছিল ৩৯ টাকা।

বিজ্ঞাপন

করনেট বাড়াতে কাজ চলছে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করনেট বাড়ানোর একটা প্রচেষ্টা চলছে। ইউপি পরিষদের সদস্যরা ঠিকমতো আয়কর রিটার্ন জমা দেন কি না— তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। বিভিন্ন বাড়িতে জরিপ চালানো হবে। সিটি জরিপের সঙ্গে এগুলো নিয়েও এগিয়ে যাব।

করনেট বাড়ানোর লক্ষ্য হিসেবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে ২০ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দেন। ভবিষ্যতে তা ৩৫ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। আর এখন ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ৩৫ লাখ। কয়েক বছরের মধ্যে তা ৫০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে এনবিআরের।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, আমরা জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। নতুন কিছু অফিস জেলা-উপজেলা পর্যায়েও করব। বর্তমানে কর অঞ্চল ও সার্কেল বেড়েছে। জনবল বাড়লে রাজস্ব আদায় আবারও লাফ দিয়ে ওপরের দিকে উঠবে।

নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীদের কর নিবন্ধন বা কর বিষয়ক ক্লিয়ারেন্স লাগবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর আমাদের তো কিছু করার নেই। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচনের পেছনে আমরা দৌড়াতে চাই না। নির্বাচনের আগে আমরা কোনো দ্বন্দ্বে যেতে চাই না। তবে এবার তা করা সম্ভব না হলেও সামনে থেকে তা (প্রার্থীদের কর বিষয়ক ক্লিয়ারেন্স) বাধ্যতামূলক করা হবে।

বিজ্ঞাপন

পরে ওই সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে এনবিআর ভবনের সামনে থেকে দু’টি পিকআপ ভ্যানের শোভাযাত্রা শুরু হয়। ফিতা কেটে তা উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তারা। কেন্দ্রীয়ভাবে এবারের আয়কর মেলা হবে অফিসার্স ক্লাবে। থাকবে আগের মতোই সব সুবিধা। তবে এবার চমক হিসেবে থাকছে ভিজ্যুায়াল পদ্ধতিতে কর প্রশিক্ষণ। এছাড়া তেমন কোন নতুনত্ব নেই এবারের কর মেলায়। নেই কর আদায়েও সুর্নিদিষ্ট কোনো লক্ষ্যও।

সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএএম/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন