বিজ্ঞাপন

পল্টনের সেই চাঁদাবাজ স্বপন কারাগারে

May 25, 2018 | 5:09 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজধানীর পল্টনের কালভার্ট রোড এলাকায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার দায়ে গ্রেফতার হওয়া মাঈনুল ইসলাম স্বপনকে (৪০) কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

শুক্রবার (২৫ মে ) বিকেলে সত্যব্রত শিকদারের আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেন দেন। সেই সঙ্গে স্বপনকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও নির্দেশ দেন।

শুক্রবার দুপুরে পল্টন থানা পুলিশের এএসআই রহমত আলী ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে স্বপনকে আদালতে নেন। আদালতে আসা স্বপনের পাঁচজন আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চাইলে বিচারক জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠান।

বিজ্ঞাপন

গত ২৪ মে খিলগাঁও তিলপাপাড়ার বাসা থেকে স্বপনকে গ্রেফতার করে পল্টন থানা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ সারাবাংলা ডটনেটের কাছে চাঁদা চাওয়া এবং তা না পেয়ে এর দুই কর্মীকে মারধর করে স্বপন ও তার সহযোগীরা।

পুলিশ জানায়, স্বপন রাজধানীর পল্টনে কালভার্ট রোডের একটি বহুতল ভবনে কেয়ারটেকারের দায়িত্বে রয়েছেন। ওই দায়িত্বে থেকে ভবনের ভেতরে মদ-জুয়া-মাদকসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন বলে পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাস্তানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ। যখন-তখন ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর ও অফিস স্পেস কিনে নেওয়া মালিকপক্ষের লোকদের ওপর হামলা, মারধর করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারের পর স্বপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে পল্টন এলাকার নির্যাতিত লোকজন মুখ খুলতে শুরু করেন।

জানা যায়, রাজধানীর পল্টনের কালভার্ট রোড এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ত্রাস হিসেবে পরিচিত ‘টাকলা’ স্বপনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এই এলাকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, অ্যাপার্টমেন্ট মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছিলেন তিনি। চাঁদা দিতে না চাইলে দেওয়া হতো প্রাণনাশের হুমকি।

কালভার্ট রোডের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বপন ও তার অনুসারীদের ছত্রছায়ায় এই এলাকাতে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি গড়ে ওঠেছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করার কারণে এ এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

১. অবৈধ মাদক, জুয়া ও ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা : কালভার্টরোড এলাকায় অবৈধ মদ, জুয়া ও ক্যাসিনোর ব্যবসার প্রসার ঘটাতে স্বপনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। তবে সম্প্রতি পুলিশের অভিযানের কারণে এসব বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।

২. চাঁদা দাবি, না পেলে প্রাণনাশের হুমকি: কালভার্টরোড এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও অ্যাপার্টমেন্ট মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছিলেন স্বপন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হলেই মিলতো প্রাণ নাশের হুমকি। এনিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের পাহাড় জমেছে পল্টন থানায়।

৩. ইফতারের বাজারে চাঁদাবাজি: কালভার্টরোড এলাকায় বিকেল বেলা পবিত্র রমজান মাস থেকে ইফতারের সামগ্রীর জন্য যেসব দোকান ও বাজার বসছে, তাদের কাছে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেসব ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, তাদের জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে সারাবাংলার কাছে অভিযোগ করেছেন তারা।

প্রীতম-জামান টাওয়ারের পাশের ইফতার সামগ্রীর ব্যবসায়ী রমজান আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বপন ও তার দলের কয়েকজন তাদের কাছে নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তিনি প্রথমে দিতে অস্বীকৃতি জানান, এরপরেই তার ওপর নানা ধরনের নির্যাতন শুরু হয়। পুলিশ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে তিনি কোনো প্রতিকার পাননি।’

৪. জামান টাওয়ারের ত্রাস: কালভার্ট রোডের জামান টাওয়ারের সবার কাছে নিজেকে ত্রাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্বপন। ভবনটির নিরাপত্তা ও অবৈধ ব্যবহার রোধে স্বপনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে মতিঝিলের উপ-পুলিশ কমিশনার, রাজউক চেয়ারম্যান, রমনার নির্বাহী প্রকৌশলী ও পল্টন মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) চিঠি দিয়েছে জামান টাওয়ার স্পেস মালিক কল্যাণ সমিতি।

এ বিষয়ে জামান টাওয়ার স্পেস মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামান টাওয়ারের নির্বাহী ব্যবস্থাপক মো. মশিউজ্জামানের ভাগ্নে পরিচয় দেওয়া এমআই স্বপন প্রায়ই মালিকদের স্টাফদের মারধর করে। তার বিরুদ্ধে থানায় কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এছাড়া মালিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন