বিজ্ঞাপন

‘ভবিষ্যতে ভর্তুকি নয়, বিদ্যুৎ খরচ পুরোটাই গ্রাহককে দিতে হবে’

September 6, 2018 | 1:49 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সরকার এখন বিদ্যুতে ভর্তুকি দিলেও ভবিষ্যতে এ সুযোগ আর নাও থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে খরচ, সেই খরচটি এখন আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে নিচ্ছি না। ভবিষ্যতে হয়তো এই সুযোগ থাকবে না। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি যত হবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ পুরোটাই দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার ( ৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ ২০১৮’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রতি কিলোওয়াটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতি কিলোওয়াটে একটা খরচ হয়। আর এই খরচটা বর্তমানে হয় গড়ে। আমরা বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছি। কারণ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে হবে। গড়ে আমাদের প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে ছয় দশমিক ২৫ পয়সা অর্থ্যাৎ ৬ টাকা ২৫ পয়সা। কিন্তু আমরা বিদ্যুৎ বিক্রি করছি মাত্র ৪টা ৮২ পয়সায় (প্রতি কিলোওয়াট)। অর্থাৎ আমরা ভতুর্কি দিচ্ছি।’

এ ব্যাপারে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিন্তু ভতুর্কি দিয়ে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে খরচ সেই খরচটা এখন গ্রাহকদের কাছ থেকে নিচ্ছি না। তবে ভবিষ্যতে হয়তো এই সুযোগ থাকবে না।’ এক্ষেত্রে দেশবাসীকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া ও বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে এতেও আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন সরকারের দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক বা আঞ্চলিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ আমদানির পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা যত বেশি আমদানি করতে পারি, আমাদের জন্য ভালো। যদি কিছু পয়সা বেশি দিয়েও আমদানি করি, তাতে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই। কারণ একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা, সেটাকে রক্ষণাবেক্ষণ করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ও খরচসাপেক্ষ।’

এ সময় বিমসটেক সামিটে নেপালের সাথে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে চুক্তি হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিমসটেক সোলার গ্রিড লাইন করে দিচ্ছি। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

বিমসটেক বিদ্যুৎ গ্রিড লাইন নিয়ে এরই মধ্যে চুক্তি সই করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিদ্যুৎ গ্রিড লাইনের মাধ্যমে আমরা আমাদের আন্তঃদেশীয় যে বিদ্যুৎ, কে কত বেশি উৎপাদন করতে পারে এবং অন্য দেশ কিভাবে কিনবে— এটা আমরা স্পষ্ট করে ফেলেছি।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ খাতে প্রিপেইড মিটার স্থাপন, অনলাইনভিত্তিক সেবার মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরই মধ্যে ১৪ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ দেশের গ্রামীণ এলাকায় সরবরাহের ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে। গ্রামের মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছে, এটাই হচ্ছে মূল কথা।

এছাড়াও এলএনজি টার্মিনালগুলো যেন স্থলভিত্তিক হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কাতার, রোমান থেকে এলএনজি আমদানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট স্বাবলম্বী হয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করি। সরকার গঠন করে মাত্র ১৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম। তখন চারদিকে হাহাকার। এ দেশের অধিকাংশ মানুষের ঘরে আলো ছিল না। সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করবার জন্য সর্বপ্রথম আইন করে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করি এবং এই খাতকে উন্মুক্ত করে দেই। আমরা মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বিদ্যুতের উৎপাদন ১৬শ মেগাওয়াট থেকে চার হাজার তিনশ মেগাওয়াটে উন্নীত করতে সক্ষম হই।

গত ৯ বছরে মোট ২৪ হাজার তিনশ ৫১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৩৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি সই করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই সময়ে প্রায় মোট ১২ হাজার দুইশ ৫০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে এবং ১০১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প অতিরিক্ত চালু করেছি। ২০০৯ সালের আগে যেখানে একশ বছরের বেশি সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিল মাত্র ২৭টি, সেখানে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ। বতর্মানে তা ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এখন ৯০ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন।

সারাবাংলা/এনআর/জেএএম

অারও পড়ুন

‘২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে’

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন