বিজ্ঞাপন

বিদ্রোহী প্রার্থীরা সরে যাওয়ায় ফেনীতে মহাজোটে স্বস্তি

December 27, 2018 | 9:18 am

।। মুহাম্মদ আরিফুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ফেনী: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ ও ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সরে দাঁড়িয়েছেন নির্বাচন থেকে। এতে স্বস্তি ফিরেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে। স্থানীয়রা বলছেন, স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থিতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগ নেতারা সরে দাঁড়ানোয় এখন নৌকা-ধানের শীষের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফিরে এসেছে।

ফেনী-১ আসনে নৌকা প্রতীকে মহাজোটের প্রার্থী হয়েছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা শিরীন আখতার। তবে এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আবদুল্লাহও আপেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এতদিন পর্যন্ত ছিলেন নির্বাচনের মাঠে। ভোটাররা বলছিলেন, এর ফলে এই আসনটিতে ছিল নৌকা-ধানের শীষ-আপেলের ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে এর মধ্যেও মূল লড়াইটি ছিল আপেল আর ধানের শীষের।

এদিকে, ফেনী-৩ আসনেও ছিল একই চিত্র। এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মহাজোটের প্রার্থিতা পেয়েছেন লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। তবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার আপেল প্রতীকে ও তার ছেলে ইসতিয়াক আহমেদ নোঙর প্রতীকে এই আসনে ভোটের মাঠেই ছিলেন এতদিন। ফলে ধানের শীষের প্রার্থীর সঙ্গে সঙ্গে দলের বিদ্রোহী এই দুই প্রার্থীকে নিয়েও মাথা ব্যাথা ছিল মহাজোটের।

বিজ্ঞাপন

শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) দুই আসনেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন ভোটের মাঠ থেকে। ফলে স্বস্তি ফিরেছে মহাজোট শিবিরে।

পরশুরাম-ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-১ আসনটি খালেদা জিয়ার আসন হিসেবেই পরিচিত। দুর্নীতির মামলায় দণ্ড পেয়ে এবার তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। এই আসন থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপনসহ কয়েকজন। তবে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। একপর্যায়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন খায়রুল বাশার মজুমদার তপন। তবে শেখ আবদুল্লাহ’র আপেল প্রতীকের জোর প্রচারণা ছিল এলাকায়। শিরীন আখতার নৌকা প্রতীক পেলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত।

বিজ্ঞাপন

জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনায় নির্বাচন থেকে দাঁড়ান শেখ আবদুল্লাহ। এতে তার সমর্থক অংশটি হতাশ হয়ে পড়ে এবং তারা নৌকার পক্ষেও কাজ করবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শেষ পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা দফায় দফায় বৈঠক-আলোচনার মাধ্যমে শেখ আব্দুল্লাহ ও তার নেতাকর্মী-সমর্থকদের ভেড়ান নৌকায়। মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) ফেনীর পরশুরামে এক নির্বাচনি জনসভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী ও আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের উপস্থিতিতে শেখ আব্দুল্লাহ ঘোষণা দেন, নৌকার পক্ষেই শেষ পর্যন্ত থাকবেন তিনি।

সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে শিরীন আখতার সারাবাংলাকে বলেন, নৌকা নিয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই। সবাই একসঙ্গে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। নৌকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতীক, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে, অসাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এই প্রতীকে সবাই ঐক্যবদ্ধ।

একটি মহল নৌকাকে হারাতে এখনও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নৌকা জিতলে জিতবে বাংলাদেশ, আর নৌকা হারলে হারবেন শেখ হাসিনা। সব ভেদাভেদ ভুলে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবার কাছে নৌকায় ভোট চাই।

এ বিষয়ে জানতে শেখ আব্দুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও তার পক্ষে কাজ করা ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, আগে যা কিছুই হোক না কেন, এখন আমরা সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করছি। নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ফেনী-৩ (সোনাগাজী -দাগনভুঞা) আসনের মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার ও তার ছেলে ইসতিয়াক আহমেদ। আবুল বাশার আপেল ও তার ছেলে ইসতিয়াক আহমেদ নোঙর প্রতিকের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় ছিলেন। জানা গেছে, দলীয় প্রধানের নির্দেশে  সভানেত্রীর নির্দেশে মঙ্গলবার সকালেই মাসুদ চৌধুরীর ঢাকার বাসভবনে বৈঠকে বসেন তারা। সেখান থেকেই তারা সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

এই আসনটিও বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাদ দিলে এর আগের পাঁচটি নির্বাচনেই এই আসনে জয়ী হয়েছে বিএনপি। এ অবস্থায় আসনটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে লাঙ্গল প্রতীকে মহাজোট প্রার্থীর জয় পাওয়াটা চ্যালেঞ্জিং হতো বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। আবুল বাশার ও তার ছেলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় আসনটিতে মহাজোটের জয় পাওয়াটা সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

আবুল বাশারের এমন সিদ্ধান্তে অভিনন্দন জানিয়ে মঙ্গলবারই সোনাগাজী ও দাগনভুঞায় আনন্দ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আবুল বাশার সারাবাংলাকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হিসেবে দলীয় প্রধানের সিদ্বান্তই আমার সিদ্বান্ত। তিনি সোনাগাজী ও দাগনভুঞার দলীয় নেতাকর্মীদের মাসুদ চৌধুরীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশে দিয়েছেন। আমরাও আছি তার সঙ্গে।

জানতে চাইলে মহাজোটের প্রার্থী মাসুদ চৌধুরী বলেন, ফেনী-৩ আসনে মনোনয়ন প্রাত্যাশীদের মধ্যে যুবনেতা আবুল বাশার যোগ্য ও জনপ্রিয়। আমরা এখন থেকে সোনাগাজী ও দাগনভুঞার উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করব।

সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ দীন মোহাম্মদ, দাগনভুঞা উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক শাহজাহানসহ অন্যরাও যুবলীগ নেতা আবুল বাশারকে তার সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ জানান।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন