বাজেট বক্তৃতায় ‘ফিনিক্স পাখি’র গল্প শোনালেন অর্থমন্ত্রী
৯ জুন ২০২২ ১৬:৫২
ঢাকা: জাতীয় সংসদ ভবনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে এক ‘ফিনিক্স পাখি’র গল্প শোনালেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মা-বাবা, ভাইসহ আপন আত্মীয়দের হারিয়েও এই ‘ফিনিক্স পাখি’ উঠে এসেছেন ধ্বংসস্তূপ থেকে। তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন বাংলার আপামর মানুষের কল্যাণে।
আ হ ম মুস্তফা কামালের সেই ‘ফিনিক্স পাখি’র নাম শেখ হাসিনা। তিনি সংসদ নেতা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তার প্রসঙ্গে বলেছেন— এ দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন অভিযাত্রায় একের পর এক লক্ষ্য অর্জনে যেন— কবিগুরুর ভাষায় বলতে হয় ‘আলোর নৌকা ভাসিয়ে দিয়েছেন আকাশপানে চেয়ে।’
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এদিন বিকেলে ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।
আরও পড়ুন-
- একনজরে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট
- সংসদে অর্থমন্ত্রী, হাতে বাজেটের ব্রিফকেস
- কোন সরকার ও অর্থমন্ত্রী কয়টি বাজেট দিয়েছেন
- বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে প্রাধান্য দিতে হবে
- ৭৮৬ কোটি থেকে ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট
- মন্ত্রিসভায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন
- কর দিলে বৈধ হবে পাচার করা টাকা, কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবেন না
- রেকর্ড ঘাটতি নিয়ে আসছে ৬ লাখ ৭৮ কোটি টাকার বিশাল বাজেট
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অধিবেশনে উপস্থিত রয়েছেন জানিয়ে তার অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে বাজেট পেশ করার আহ্বান জানান স্পিকার। এরপর অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল রাষ্ট্রপতির কাছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করার অনুমতি চান। রাষ্ট্রপতি অনুমতি দিলে তিনি বাজেট পেশ শুরু করেন।
বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অর্থমন্ত্রী। একইসঙ্গে পঁচাত্তরের কালরাতের সব শহিদ, জাতীয় চার নেতা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, সেই ৩০ লাখ শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের শিকার ২ লাখ মা-বোনের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ‘ফিনিক্স পাখি’ শেখ হাসিনার জীবনের এক সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। শৈশব ও কৈশোরের ‘হাসু’র শিক্ষাজীবন, রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়গুলোও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার ও জন্মসূত্রে রাজনীতিক। শৈশব থেকেই বাবাকে দেখেছেন জেলজীবন কাটাতে। আর্থিক টানাপোড়েনে একজন সাদাসিধে গৃহিণী মায়ের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেছেন মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবেশে। বাবার রাজনীতির সুবাদে বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সহযোগী রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা ও বিচরণ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছিল ছোটবেলাতেই।
স্বাধীনতার আন্দোলন-সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়েও শেখ হাসিনার সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরেন মুস্তফা কামাল। এরপর পঁচাত্তরের কালরাতে জাতির জীবনে নেমে আসা ঘোর অমানিশার কথাও উল্লেখ করেন। বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সবাইকে হারিয়ে শেখ হাসিনাকে শরণার্থীর মতো বিদেশ-বিভূঁইয়ে থাকতে হয়েছিল ছয় বছর। ওই সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, ঐক্য-অনৈক্যের মধ্যে ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকতে হয়।
আরও পড়ুন-
- দাম বাড়বে যেসব পণ্যের
- মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ৬ এর নিচে
- সার্বজনীন পেনশন চালুর ঘোষণা
- জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সাড়ে ৭ শতাংশ
- কৃষিখাত ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ
- ময়দা আমদানিতে কমছে শুল্ক, কমতে পারে দাম
অর্থমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগে ঐক্য ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দলের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে দলীয় সভাপতি মনোনীত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী আওয়ামী লীগের তখন বড় দুর্দিন। তাদের একজন নির্ভরযোগ্য কাণ্ডারির প্রয়োজন। এরকম পরিবেশে সামরিক সরকারের সব বাধা ছিন্ন করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।
তিনি বলেন, সেদিন শুধু ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর নয়, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মতোই তার কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে গোটা ঢাকা নগরী জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। বিমানবন্দর থেকে একটি ট্রাকে করে জাতীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জনস্রোতের ঢেউ পেরিয়ে তিনি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের জনসমুদ্রের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদলেন, সেই সঙ্গে জনসমুদ্রও হু হু করে কেঁদে উঠল, ঠিক যেন বঙ্গোপসাগরের উত্তাল জলরাশি সৈকতে মাথা ঠুকে আছড়ে পড়ছে। সেদিন আকাশ-বাতান ভেঙে ১৫ আগস্টের জমানো কান্নায় কেঁদে উঠেছিল প্রকৃতি।
দেশে ফেরার পর আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ হাসিনা আন্দোলন ও সংগ্রাম শুরু করেন বলে উল্লে করেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, কেবল দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন কামনা থেকেই তিনি দেশের জনগণের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করতে চান। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে তিনি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে।
আরও পড়ুন-
- শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে
- সোনার দাম কমাচ্ছে সরকার
- বাড়বে বিলাসবহুল গাড়ির দাম
- করমুক্ত আয় থাকছে ৩ লাখ টাকাই
- ট্রেনের প্রথম শ্রেণির টিকিটের ভাড়া বাড়ছে
এরপর বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবেও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন মুস্তফা কামাল। পরে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সেই সরকারের হাতে নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথাও তুলে ধরেন তিনি। দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নিবেদিতপ্রাণ শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে— সেসবের বিবরণও তুলে ধরেন। ২০০৯ সালে ফের সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ, যারা এখন পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। এই ১৩ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের যে উন্নয়ন-অগ্রগতি ঘটিয়েছে, তারও সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয় বাজেট বক্তৃতায়।
শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে এবং সরকারপ্রধান হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কার, স্বীকৃতি, সম্মাননা অর্জন করেছেন। তার বিবরণ তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আর্থসামাজিক খাতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান ও অগ্রযাত্রা এখন সারাবিশ্বে স্বীকৃত। তিনি আমাদের অর্থনীতির আঙ্গিনায় অসীম সাহস ও দূরদশিতার প্রতীক, যার নির্দেশনায় গোটা জাতি আজ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাদের লক্ষ্য আজ অনেক দূর পর্যন্ত প্রসারিত।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সবকিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের হাল ধরেছেন বলে। শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ আজ শান্তি, সাম্য আর সম্প্রীতির দেশ। শেখ হাসিনা আছেন বলেই তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ। শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ আজ হতে যাচ্ছে উন্নত এক দেশ। আমরা, দেশবাসী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিনম্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আরও পড়ুন-
- নন-কটন রফতানিতে প্রণোদনা চাই
- বৃহস্পতিবার বাজেট পেশ— একটি রেওয়াজ
- রাজস্ব আহরণে আরও বেশি জোর দিতে হবে
- বাজেটে শিল্প কারখানার দিকে বেশি নজর দিতে হবে
- নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে মূল্যস্ফীতি, ঠান্ডা রাখতে হবে ডলারের বাজার
- সফটওয়্যার ও আইটিএস খাতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি রাখতে হবে
সারাবাংলা/টিআর
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধানমন্ত্রী ফিনিক্স পাখি বাজেট ২০২২-২৩ শেখ হাসিনা