বিজ্ঞাপন

প্রেডিকশন: ফ্রান্স ২ ক্রোয়েশিয়া ১

July 15, 2018 | 11:08 am

||মাহমুদ মেনন, নির্বাহী সম্পাদক||

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের ৩৫০ কোটি ফুটবল ভক্তের ৭০০ কোটি চোখ এখন একটি ফাইনাল ম্যাচের অপেক্ষায়। রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় মস্কোর লুঝনিকি মাঠে যে লড়াইটি হবে সেটিকে শেয়ানে শেয়ানে লড়াই বললেই যথার্থ বলা হবে। কারণ বিশ্বকাপের এবারের আসরের শুরু থেকেই দুটি দল তাদের সকল শক্তি দেখিয়েই ফাইনালে পৌঁছেছে।

ফুটবলের দৈত্যদের হারিয়ে ক্রোয়েশিয়া এসেছে ফাইনালে। নিজেদের মাতৃভূমিকে দেশ হিসেবে পাওয়ার মাত্র ২৭ বছরে এসে ক্রোয়েটরা এই অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছে। ওদের ফুটবলই বলে দেয় ওরা দেশের জন্য খেলে। প্রতিটি খেলোয়াড়ই দেশটির সমান বয়সী। যুগোস্লাভ যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে বেড়ে উঠতে উঠতে তারা ফুটবল শিখেছে। তাদের স্যালুট।

আর বিশ্বকাপে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ফ্রান্স এবার পুরোদস্তুর তারুণ্য নির্ভর দল- জুলেরিমে কাপখানি নিজ ঘরে ফিরিয়ে নিতে চায় তারা। মাঝে চলে গেছে ২০টি বছর। সেই ১৯৯৮ এর কাপ নিতে যে দিদিয়ের দেশম দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনিই এবার দল পরিচালনার দায়িত্বে। খেলার মাঠে প্রতিটি ম্যাচে দেশম শিষ্যরা দেখিয়েছেন তাদের ফুটবল পারঙ্গমতা। ফুটবল মেধায় পূর্ণ দুটি দলের খেলা ভীষণ জমবে তাতে নেই সন্দেহ মাত্র। সুতরাং একটি জমজমাট ফাইনাল ম্যাচ অপেক্ষা করছে ৭০০ কোটি চোখের জন্য।

বিজ্ঞাপন

আসুন তবে দুটি দলকে একটু ব্যবচ্ছেদ করে দেখা যাক।

প্রথমেই দেখে নেওয়া যায় ফুটবল প্রতিভায় কে কতটা এগিয়ে? দুই পক্ষেই রয়েছে অসাধারণ সব ফুটবলার। দুই দলের অন্তত ১০ জন খেলোয়াড় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুটবল লিগ লা লিগায় খেলেন বড় বড় অংকের বিনিময়ে। তবে আশা করি কেউ দ্বি-মত করবেন না এই কথায় যে- ফ্রান্সের দলে ফুটবল প্রতিভা অপেক্ষাকৃত বেশিই রয়েছে। সদ্য টিনেজ অতিক্রান্ত কিলিয়ান এমবাপ্পে কিংবা অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যানের মধ্যমাঠ থেকে অ্যাটাকিং জোন অবধি দাপিয়ে বেড়ানোর দৃশ্য এখন সবার চোখচেনা। আর মধ্যমাঠে তাদের সবসময়ে শক্তি যোগান আরেক বিশ্বখ্যাত মিডফিল্ডার এনগোলো কান্তে, সাথে থাকেন পল পগবা। সুতরাং আর কী লাগে? হ্যাঁ লাগে তো বটেই। রক্ষণভাগের বিষয়টিও তো গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ফ্রান্সের পক্ষে আট গজের রাজা বিশ্বের সেরা গোলকিপারদের একজন হুগো লোরিস। আর সেন্ট্রাল ডিফেন্সে বার্সা স্টার খ্যাত সামুয়েল উমতিতি ও রিয়েল মাদ্রিদের রাফায়েল ভারানে রয়েছেন। এর প্রতিটিই একেকটি প্রতিভার নাম। এমন অনেকগুলো নাম ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে বলা যাবে না, যারা এরই মধ্যে বড় নাম কুড়িয়েছেন। তবে রক্ষণভাগে তাদের দেজান লোভার্নের নামটি বলে যাওয়া ভালো। সব মিলিয়ে ফুটবল প্রতিভা কিন্তু ফ্রান্সেরই বেশি।

গোল রক্ষণে আগেই বলেছি হুগো লোরিসের কথা। তবে ক্রোয়েশিয়া দানিজেন সুবাসিচ অসাধারণ গোলরক্ষক, তাতে সন্দেহমাত্র নেই। মোনাকোর হয়ে অসাধারণ সব গোল ফেরানোর অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। এমনকি প্যানাল্টি কিকেও তিনি কিভাবে ঝলসে উঠতে পারেন তাও দেখিয়েছেন এই বিশ্বকাপের আসরে। কিন্তু হুগো লোরিস একটু ভিন্ন প্রকৃতির। টোটেনহ্যামের এই ফুটবলার বিশ্বের সেরা তিন কিংবা পাঁচের মধ্যে রয়েছেন। সুতরাং এক্ষেত্রে এগিয়ে রাখতেই হবে লোরিসকে।

বিজ্ঞাপন

রক্ষণভাগে ফ্রান্সের উমতিতি ও ভারানে সন্দেহাতীতভাবেই ক্রোয়েশিয়ার দোমাগোজ ভিদা ও লোভার্নের চেয়ে বড় নাম ও দক্ষতর খেলোয়াড়। ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগকে দুর্বল বলা যাবে না… কোনওভাবেই, তবে ফরাসি রক্ষণভাগ তার দেয়ে অনেক বেশিই শক্তিশালী। সুতরাং এতেও লেস ব্লুসরা এগিয়ে।

মধ্যমাঠে একটা সমানে সমান অবস্থা। এদিকে কান্তে ওদিকে লুকা মদ্রিচ। মদ্রিচ ও র‌্যাকিটিচ মিলে যখন আক্রমনটা সাজিয়ে মাঝ মাঠ থেকে এগিয়ে যান তখন তাদের রুখে দেওয়া কঠিন একটি কাজ। ফ্রান্সের সে বিবেচনায় বলা যায় মাঝ মাঠ থেকে আক্রমন সাজানো অপেক্ষাকৃত দুর্বল। এখানে তারা একটু রক্ষণাত্মক অ্যাপ্রোচেই থাকেন। বলকে নিয়ন্ত্রণে রেখে টানা ৯০ মিনিট যখন তখন খেলায় গতি এনে দিতে কিংবা বলটিকে নিখুঁতভাবে সতীর্থের পায়ে ঠেলে দিতে মদ্রিচের জুড়ি নেই। তবে ফাইনাল ম্যাচে কান্তে হয়তো ছেড়ে কথা বলবেন না।

এবার আসি আক্রমনভাগে। পুরো বিশ্বকাপে আমরা ফ্রান্সের ম্যাচগুলোতে যেমন আক্রমন দেখেছি, ক্রোয়েশিয়াকেও দেখেছি দুর্দান্ত সব আক্রমনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ফেলতে। এদের গ্রিজম্যান অসাধারণ, অলিভার জিরুদ গত ম্যাচে কাজের কাজ কিছু করতে না পারলেও ফুটবলে তার সলিড কিছু অর্জন রয়েছে এবং সবাই জানে জিরুদ কি পারেন। কিলিয়ান এমবাপ্পে যে এরই মধ্যে একজন সুপারস্টার তা অতিবড় শক্রও স্বীকার করবে। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়ার রয়েছে সবচেয়ে বিপজ্জনক মারিও মান্দজুকিচ ও ইভান পেরিসিচ। ইন্টারমিলান স্টার পেরিসিচ যে কোনও ম্যাচে যে কোনও সময় প্রতিপক্ষের গোলে বল জড়িয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন।

বিশ্বকাপে বরাবরই দেখা গেছে কোচ একটি ফ্যাক্টর হয়ে কাজ করে। এখানেও দুই দলের কোচদ্বয়ের মধ্যে কেউ কারো চেয়ে কম নন। দিদিয়ের দেশম দেশের হয়ে বিশ্বকাপে চুমু খেয়েছেন। তার হাতে এবার ছেলেরা বিশ্বকাপ ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার সব দিক্ষা নিয়েই এগুচ্ছে। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ পরিচালনার রেকর্ডও তার ঝোলায়। তবে জ্যালাদকো দালিচকে ক্রোয়েশিয়ানদের এক অনন্য বিষ্ময়কর গুরু মনে হয়। চুপচাপ সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। চোখের অভিব্যক্তিই বলে দেয় কতটা তিক্ষ্ণ হতে পারে তার নির্দেশনাগুলো।

বিজ্ঞাপন

আসুন তবে হয়ে যাক প্রেডিকশন। প্রতিভায় ভরপুর ফ্রান্সই জিতবে এবারের বিশ্বকাপ। ফ্রান্স ২, ক্রোয়েশিয়া ১।
সত্যিকারে কি ঘটে তা জানতে আজ রাত ৯টার পর খেলা দেখতে হবে আরও ৯০ মিনিট।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন