বিজ্ঞাপন

ধীর গতিতে  ট্রাইব্যুনাল : পুরো বছরে রায় মাত্র দুটি

December 30, 2017 | 8:28 am

আব্দুল জাব্বার খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ পর‌্যন্ত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুণাল থেকে ২৯টি মামলার রায় হয়েছে। তবে ২০১৭ সালে ট্রাইব্যুনাল থেকে দুটি মামলার রায় হলেও আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধীর একটি মামলারও চুড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।

প্রতিবছর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় দিয়ে আলোচনার শীর্ষে থাকলেও এবার বলা যায় এক রকম স্থবির ও নিরব ছিল ট্রাইব্যুনাল।

টানা ৯২ দিন বিচার কাজ বন্ধ থাকার পর বছরের শেষের দিকে এসে বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হলে কাজে গতি ফেরে।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় আসছে নতুন বছরে ট্রাইব্যুনালে এমনকি আপিলে মামলাজট সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেক্ষেত্রে অকার্যকর করে রাখা দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালটিও কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ বছর যুদ্ধাপরাধের কোনো মামলার বিচার আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়নি। তিনি বলেন, “এ বছর উল্লেখযোগ্য কোনো যুদ্ধাপরাধীর বিচার না হওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন। আমি চাই যুদ্ধাপরাধের মামলা যেগুলা আপিলে পেন্ডিং আছে, সেগুলো শেষ করতে। শেষ হওয়া উচিত বলেও মনে করি। এবার কয়েকটি মামলা কার্যতালিকায় ছিল কিন্তু শুনানি হয়নি। আমি চাই দ্রুত শেষ করে ফেলতে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন সারাবাংলাকে বলেন, বহুদিন ধরে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন না। এ কারনেই মামলা নিষ্পত্তির হার তেমনটি হয়নি। এখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে আশা করি মামলার নিষ্পত্তির হার বাড়বে। তবে সার্বিক ভাবে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল কার্যকর করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

তবে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় এ বছরে তদন্ত সংস্থার কার্যক্রম অনেক বেশি গতিশীল ছিল। এ বছরে আমরা অধিক সংখ্যক মামলার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। তবে ট্রাইব্যুনাল যেহেতু একটি কমে গেছে।  দীর্ঘ ৯২ দিন ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ না চলায় মামলা নিষ্পত্তি একটু কমে গেছে। অবশ্য পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল পুনগঠনের পর মামলার কাজ জোরেসোরে চলছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি আগামী দিনে আমাদের যে জনবল সংকট আছে সেটি কেটে গেলে বিচার কাজে গতি বৃদ্ধি পাবে। বিচারপ্রার্থীদের মত আমরাও আশা করছি আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হোক। যে সমস্ত মামলা এখন বিচারের অপেক্ষায় আছে সেগুলো যেন আগামী বছর শেষ করা যায়।’

ট্রাইব্যুনালের মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আপিলে একটি বিশেষ বেঞ্চ করা উচিৎ দাবি করে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ এই কর্মকর্তা বলেন, “কারণ এই মামলাগুলো হচ্ছে একটি বিশেষ মামলা। এই মামলাই একমাত্র মামলা, যা সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ দ্বারা সংবিধিবদ্ধ।’

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সারাবাংলাকে জানান, “এ বছর ট্রাইব্যুনালে মামলা শুনানির ক্ষেত্রে কিছুটা ধীর গতি আমরা পেয়েছি। তবে সেটা খুবই যৌক্তিক কারণেই হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান অনেকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। যে কারণে আদালত নিয়মিত বসতে পারেনি। তারপর উনার মৃত্যুর পর বেঞ্চ গঠন হতে সময় লেগেছে। একদিকে এটা যেমন সত্য কথা আরেক দিকে প্রসিকিউশন বা তদন্ত সংস্থা আমরা কিন্তু অনেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যেটা এখন রিফ্লেক্ট হচ্ছে। এখন তো প্রায় ৪০টির মত মামলা পাইপলাইনে। এই মামলাগুলো আমরা গোছাতে পেরেছি।”

বিজ্ঞাপন

নতুন বছরে মামলার জট কমাতে ট্রাইব্যুনাল-২ কার্যকর করার প্রয়োজন হতে পারে বলেও মনে করেন এ প্রসিকিউটর।

আপিলে একটিও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কেন আপিলে ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে না, তা আমি জানি না। তবে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক একটি ব্যাপার। যেহেতু আমরা এত বছর পর বিচার শুরু করেছি তাই আপ্রাণ চেষ্টা করে ট্রাইব্যুনালে মামলা শেষ করার চেষ্টা করেছি।’

মামলার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদী, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ৯টি হেভিওয়েট মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর‌্যন্ত প্রত্যেক বছরে ছয়টি করে মামলার রায় হয়েছে। কিন্তু ২০১৭ সালে রায় এসেছে মাত্র দুটি মামলার।

সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬১ আসামির বিরুদ্ধে ২৯টি মামলার রায় ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল।

এই ৬১ আসামির মধ্যে বিচারধীন অবস্থায় দুই আসামির মৃত্যু হয়। ফলে ২৯টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৫৯ জন।

এই ৫৯ জনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ৩৭ জনকে, আমৃত্যু দিয়েছে ২১ ও যাবজ্জীবন দিয়েছে ১ জনকে। ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া একমাত্র আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা। আপিলে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়।সাজাপ্রাপ্ত এই ৫৯ আসামির মধ্যে ২৮ জন এখনও পলাতক।

আপিলের চূড়ান্ত রায়ে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর দুই সহকারী সক্রেটোরি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামী, শুরা সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আর জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

অন্যদিকে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি চলার সময় জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলেরও নিষ্পত্তি হয়ে যায়।

ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ১৪১ আসামির বিরদ্ধে ৩২টি মামলা চলছে। রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ আছে একটি মামলা।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে সদস্য করে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এ টি এম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ২০১২ সালের ২২ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এরপর মামলার সংখ্যা কমে আসলে ট্রাইব্যুনাল-২ নিস্ক্রিয় করে রাখা হয়। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। আর সদস্য হিসেবে আছেন বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারক মো. আবু আহমেদ জমাদার।

সারাবাংলা/এজেডকে/জেডএফ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন