বিজ্ঞাপন

রূপগঞ্জের অগ্রসরতা ও গাজী দস্তগীরের গল্প মুখে মুখে

September 23, 2018 | 7:00 pm

।। শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জ: রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার অগ্রসরতার গল্প এখন সবার মুখে মুখে। রাজধানী শহরের মতোই সেখানে এখন উড়াল সেতু, ঝকঝকে দালান-কোঠা, সুপ্রশস্ত সড়ক, দীর্ঘ সেতু, বড় বড় শিল্প-কারখানা, আর অনেকেরই প্রিয় অভিজাত আবাসস্থল।

গত ১০ বছরে রূপগঞ্জ তার চেহারা পাল্টে এক আধুনিক রূপ নিয়েছে। অথচ স্বাধীনতা-উত্তর অন্তত সাড়ে তিন দশক এখানে ছিলো না কোনো উন্নয়ন। সম্পূর্ণ অবহেলিত ও উপেক্ষিত জনপদ ছিলো এই রূপগঞ্জ। এলাকাবাসীর দাবি, তাদের অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষকে প্রতিনিধি হিসাবে পাওয়ার পর থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে রূপগঞ্জের চেহারা। সে মানুষটিকে তারা চেনেন সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই। তিনি গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই রূপগঞ্জ কৌশলগত অবস্থানের কারণেই ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা এই রূপগঞ্জে অবস্থান করে রাজধানীতে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন চালাতেন। ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী ছিলেন তাদের অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার সাহসিকতার গল্প রূপগঞ্জবাসীর জানা। যুদ্ধ জয়ের পর রূপগঞ্জ বাসী সবচেয়ে বেশি গর্বিত ছিলো এই গোলাম দস্তগীর গাজীকে নিয়ে। আর সে কারণেই নিজেদের এই কৃতী সন্তানকে প্রথম সুযোগ পেয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠায় জাতীয় সংসদে।

বিজ্ঞাপন

এলাকাবাসীর ভালবাসার প্রতিদান তিনি দিয়েছেন তাদের জন্য উন্নয়নের ছোঁয়া এনে দিয়ে।

গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক অবশ্য বলেন অন্য কথা। তিনি বলেন, এই ভালোবাসার কোনো প্রতিদান হয় না। আমি আসলে আমার কর্তব্যগুলোই পালন করে যাচ্ছি। এলাকার মানুষ তথা দেশের মানুষ খুশি থাকলেই একজন রাজনীতিক সবচেয়ে খুশি থাকেন। আর আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, দেশ স্বাধীন করার পর দেশ গঠন করাও আমার দায়িত্বের অংশ। রূপগঞ্জবাসী সেই সুযোগ করে দিয়েছে, সে জন্য আমি এলাকাবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে এই খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ঢাকায় আমরা যে অপারেশনগুলো চালাতাম রূপগঞ্জবাসীর সহায়তা ছাড়া তার অনেকগুলোই সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, এখানকার মানুষগুলো যখন যে সাহায্য প্রয়োজন হয়েছে তা দিয়েছেন, মা-বোনেরা আমাদের রান্না করে খাইয়েছেন, যুদ্ধ জয়ের পর আমাদের মাথায় তুলে আনন্দ করেছেন, সে কথা আমি কখনোই ভুলবো না।

বিজ্ঞাপন

একজন গোলাম দস্তগীর গাজী হয়ে ওঠার জন্য এই রূপগঞ্জবাসীর যে ভূমিকা ও ত্যাগ, তার তুলনায় রূপগঞ্জবাসীর জন্য আমি সামান্যই কিছু করতে পেরেছি, বলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

সামান্য কিছুর খতিয়ানটি এমন- রূপগঞ্জ উপজেলায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালে (চলমান) ৮৭০টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৪০৯ কোটি ৯২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

উপজেলার নাওরা, নগরপাড়া, কামশাইর, বরুনা, দ‌ক্ষিণপাড়া, কেওডালা, চনপাড়া, দীঘিবরাব, বরাব, মুগরাকুল, বরপা, বরাব রসুলপুর, লাভরাপাড়া, পশ্চিমগাঁও, রূপসী, মঙ্গলখালী, রূপগঞ্জ গ্রাম, পূর্বগ্রাম, ইছাখালী, সাওঘাট, বলাইখা, ভায়েলা, পাড়াগাঁও, ঠাকুরবাড়ির টেক, কাঞ্চন, জাঙ্গীর, পিতলগঞ্জ, শিমু‌লিয়া, কেন্দুয়া, খাদুন, পবনকুল, যাত্রামুড়া, কালনী, ভোলানাথপুর, বা‌ড়িয়াছ‌নি, টেক নোয়াদ্দা, ইছাপুরা, বাঘ‌বেড়, মুশুরী, বেলদী, আতলাপুর, হাটাব, দ‌ড়িকা‌ন্দি, গঙ্গানগর, মা‌ছিমপুর, ব্রাহ্মনগাঁও, গন্ধর্বপুর, তারাব দ‌ক্ষিণপাড়া, সুলতানবাগ, টাটকী, হোড়গাঁও, ডহরগাঁও, দাউদপুর, ভোলাব, কায়েতপাড়া, মোড়াপাড়া, ভুলতাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে এর সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া চোখে পড়লো।

ফ্লাইওভার, রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্টতো রয়েছেই, এসব এলাকায় পৌঁছে গেছে ঘরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস। আর নির্মাণ হয়েছে মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।

বিজ্ঞাপন

আর এসব উন্নয়ন ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। ফলে বদলে যাচ্ছে সার্বিক অবকাঠামোর দৃশ্যপট।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেলো, ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে। শিগগিরিই তা শেষ হবে। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কারণে সৃষ্ট যানজটের কবল থেকে বাঁচবে রূপগঞ্জবাসী। নির্মিত হচ্ছে বীর প্রতীক গাজী সেতু। যার উদ্বোধন এই অক্টোবরেই।

এছাড়াও রয়েছে তারাব পৌরসভায় সড়ক ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, মুড়াপাড়া বাজারে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ, গাজী অডিটরিয়াম নির্মাণ, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ।

রূপগঞ্জের উন্নয়ন বিষয়ে রূপসী এলাকার আইনাল হক ভুঁইয়া (৫৬) সারাবাংলাকে বলেন, এমপি গাজীর কারণে আমাদের পুরো রূপগঞ্জ বদলে গেছে। আমাদের সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে পাই এমপিকে। তিনি যেভাবে রূপগঞ্জের উন্নয়ন করেছেন অতীতে কোনো জনপ্রতিনিধি এভাবে উন্নয়ন করেননি। এমনকি আগের এমপিকে আমরা মাসে একবার চোখেও দেখতে পারিনি। আমরা চাই এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক।

আগামীতে আবারও গোলাম দস্তগীর গাজীকে আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় সংসদে পাঠাতে চাই কেননা তিনি জনপ্রতিনিধি থাকলে আমরা আমাদের সুখ দুঃখের কথা জানাতে পারি, বলেন আইনাল হক।

সারাবাংলার কথা হচ্ছিলো রূপগঞ্জ উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলার সঙ্গে। তিনি বলেন, গোলাম দস্তগীর গাজী এমপির কর্মতৎপরতায় বর্তমান সরকারের আমলে রূপগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর যানজট নিরসনে রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালান তিনি। পরে ‘ভুলতা ৪ লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। এছাড়া মোড়াপাড়া ও কায়েতপাড়ার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বীর প্রতীক গাজী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আরও শতশত উন্নয়ন তো আছেই।

‘আমাদের রূপগঞ্জের উন্নয়নের রূপকার গোলাম দস্তগীর গাজী এমপি। তিনি না থাকলে আমাদের রূপগঞ্জের এতো উন্নয়ন কখনো সম্ভব হতো না, বলেন ফেরদৌসী আলম।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) এমপি সারাবাংলাকে আরও বলেন, কোনও উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে সরকারের ধারাবাহিকতাও প্রয়োজন। কেবল রূপগঞ্জ নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গোটা দেশেই আজ উন্নয়ন দৃশ্যমান। আমাদের নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু হচ্ছে, বিদেশি সহায়তায় পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, মেট্রোরেল হচ্ছে। এমন আরও বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। আশা করি দেশবাসী আওয়ামী লীগকে আবারও তাদের উন্নয়ন সেবা করার সুযোগ দেবে।

রূপগঞ্জের উন্নয়ন সাধনে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এই এমপি আরও বলেন, এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তাহলে রূপগঞ্জে আরও উন্নয়ন হবে এবং রূপগঞ্জবাসীর ভাগ্যের আরও পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে।

এসজে/এমএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন