বিজ্ঞাপন

‘নির্বাচন কমিশনের সংকট-ই রাষ্ট্রীয় সংকট’

October 20, 2018 | 2:38 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একজন কমিশনারের সঙ্গে অন্য কমিশনারদের যে মতবিরোধ বা মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে, সে বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের এই সংকটটিই রাষ্ট্রীয় সংকট।’

শনিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে সেগুনবাগিচা স্বাধীনতা হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের একজন কমিশনার প্রকাশ্যে বলে দিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিনি যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছিলেন, সে প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে না। আরেকজন কমিশনার বলছেন, অসাংবিধানিক কথা বলছেন ওই কমিশনার।

বিজ্ঞাপন

‘নির্বাচন কমিশন নিজেরাই তো বিভক্ত হয়ে পড়ছে। অথচ নির্বাচন কমিশন একটিই থাকতে হবে। তাদের যা কিছু বক্তব্য, তা নির্বাচন কমিশনের। এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আলাদা স্ট্যাটাস থাকবে না। তিনি প্রধান বটে, কিন্তু অন্য কমিশনারদের সঙ্গে তাকে কাজ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, এই সকটটিই রাষ্ট্রীয় সংকট,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের এক বৈঠকে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বেরিয়ে আসেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। পরে তিনি মিডিয়াকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতকগুলো প্রস্তাব আমি দিয়েছিলাম, সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না।’

মাহবুব তালুকদারের এই বক্তব্যের জবাবে আরেক কমিশনার কবিতা খানম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তার প্রস্তাবগুলো সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তার প্রস্তাব অসাংবিধানিক।’

বিজ্ঞাপন

একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নির্বাচন কমিশন সকল প্রকার আইন-কানুন তৈরি করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুর ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২০১৪ মতো একটা নির্বাচন করে ফের ক্ষমতায় চলে যাবেন, সেটা পারে না। নির্বাচন কমিশন সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে না। যদি তারা করে, তাহলে সংবিধানের বিরুদ্ধে কাজ করবে, জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করবে। যে শপথ তারা নিয়েছে, সেই শপথের বাইরে তারা চলে যাবে। সেটা নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ হবে।’

নির্বাচন কমিশন যোগ্য কমিশন নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এরা নির্বাচন করতে পারবে না। এই নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজন হলে যে কোনো মন্ত্রণালয়কে, সরকারি কর্মকর্তাকে নিজের অধীনে নিতে পারবে। প্রয়োজন হলে বদলি করতে পারবে, দরকার হলে আনতে পারবে।’

‘কিন্তু পুরোটাই নির্ভর করছে সরকারের ওপরে, সরকারি কর্মকর্তাদের ওপরে। যে সরকার ইতোমধ্যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে ফেলেছে, ডিএনএ টেস্ট করে সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে। বিরোধী দলেল এতটুকু গন্ধ যদি থাকে, তাহলে তাকে আর কোথাও নিয়োগ দেওয়া হয় না’— বলেন বিএনপির মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবের কথা শুনলে মনে হয়। সেই বোধ হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে মনে হয় সব চেয়ে অসহায় ব্যক্তি। তিনি সকালে একটা বলেন, বিকেলে একটা বলেন,। সাত দিন আগে এক কথা বলেন, সাত দিন পরে আরেক কথা বলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে তার পার্থক্য বেশি না।’

বিজ্ঞাপন

এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘তাকে আমরা বলেছিলাম নির্বাচনের আগে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করুন। তিনি বললেন, আমার কিছু করার নেই। অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া ছাড়া তা কোনো কাজ নেই।’

‘আমি শুধ একটা কথা বলতে চাই, দেশের মানুষকে বোকা ভাববেন না। এ দেশের মানুষকে সব সময় নীরব ভাববে না না। এ দেশের মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে বার বার রাস্তায় নেমে এসেছে। এই ধরনের শক্তিকে পরাজিত করেছে’—বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছি একটি মাত্র কারণে। সেটা হলো- আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে।’

ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের মাতাকে জেলে আটকে রেখে নির্বাচন করবেন? সেই নির্বাচন হবে না। গোটা বাংলাদেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা এই সরকারের পরিবর্তন চায় নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ম্যাডামকে জেলে আটকে রাখবেন, হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেবেন, বিরোধী দলকে কোনো সভা সমিতি করতে দেবেন না— তা হবে না।’

সরকারি টাকায় এরশাদ সমাবেশ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘২৩ তারিখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিলেটে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল। তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে নাশকতা হতে পারে। সেখানে ইসলামী আন্দোলনকে সভা করতে দিয়েছে। আজকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে সরকারি টাকা-পয়সা গাড়ি-ঘোরা দিয়ে মানুষ এনে সমাবেশ করছে।’

‘দয়া করে সোজা রাস্তায় আসুন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তার সঙ্গে আলাপ করুন, বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ করুন। কথা বলে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করুন। এ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা বার বার বলছি, এখনো বলছি, আসুন বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করুন। অন্যথায় যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির দায় আপনাদেরকেই বহ করতে হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জাগপার সহসভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, জাগপার কেন্দ্রীয় নেতা প্রোকৌশলী রাশেদ প্রধানসহ অন্যরা।

আরও পড়ুন-

আবারও ইসির সভা বর্জন মাহবুব তালুকদারের

‘নোট অব ডিসেন্টে’ যা লিখেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব

ইভিএমের বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুবের সভা বর্জন

আমেরিকায় যাচ্ছেন মাহবুব তালুকদার, ফিরবেন তফসিলের আগেই

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন