বিজ্ঞাপন

‘ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণে আনব’

October 24, 2018 | 9:01 pm

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

সিলেট থেকে: ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের মালিকানা আদায় ও রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান উদ্যোক্তা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। অন্যদিকে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা। ঐক্যফ্রন্টের অন্য নেতাদের বক্তব্যেও একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে।

বিজ্ঞাপন

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএম ব্যাবহার না করা, খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তিসহ সাত দফা দাবিতে এ সমাবেশ আয়োজন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সংবিধানের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। কিন্তু সেই মালিকানা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আবার মালিক হবো। এই রাষ্ট্র আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনব।’

তিনি বলেন, এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ঘরে ঘরে, গ্রামে গ্রামে, ইউনিয়ন ইউনিয়নে, থানায় থানায়, জেলায় জেলায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সাত দফা আদায়ে দলের সঙ্গে দলের ঐক্য নয়, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ছোট মাঠে ঐক্যফ্রন্টের ‘বড়’ সমাবেশ

স্বৈরাচারের প্রজা হওয়ার হাত থেকে মুক্ত হতে জনগণকে আহ্বান জানিয়ে সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে ড. কামাল হোসেন বলেন, স্বাধীন দেশের মালিক হলো জনগণ। জনগণ মালিক না থাকলে প্রকৃত অর্থে আমরা স্বাধীন থাকি না।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে না থাকলে তারা স্বৈরাচারের প্রজা হয়ে যায়। এই স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হতে হলে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে— যেটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যমে আমরা সেই মালিকানা ফিরিয়ে আনব।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, আমাদের লক্ষ্য সার্বিক উন্নতি, সকলের মধ্যে সমতার উন্নয়ন। কিন্তু এগুলো এখন উপেক্ষিত। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান থেকে মানুষ বঞ্চিত। খালি বলা হয় উন্নয়ন, উন্নয়ন, ‍উন্নয়ন। কার উন্নয়ন? সব মানুষের উন্নয়ন না— কতিপয় মানুষের উন্নয়ন? যারা টাকা পাচার করে, তাদের উন্নয়ন?’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়ন। সেই সত্যিকার উন্নয়নের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমরা বাঙালি যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, তখনই বিজয়ী হয়েছি। এটা মনে রাখবেন। বিজয়কে সামনে রেখে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ইনশাল্লাহ ক্ষমতার মালিক আমরা হবো। আশা দিতে চাই, ঐক্যবদ্ধ হোন, বিজয় আমাদের অনিবার্য।’

বিজ্ঞাপন

‘তবে বিষয়টি এত সহজ না। আমরা যে জিনিসটি (গণতন্ত্র) হারিয়েছি, সেটি অনেক বড় জিনিস। সেটা সহজে পাওয়া যাবে না। এটাকে ফিরে পাওয়ার জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হবে,’— বলেন ড. কামাল হোসেন।

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দাবি আদায়

সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের পরিষ্কার দাবি— নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, ইভিএম ব্যাবহার করা যাবে না এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।’

‘আমরা কোনো অশান্তি চাই না। সবাইকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের দাবি আদায় করব’— বলেন বিএনপির মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের ইতিহাস রচিত হচ্ছে শাহজালালের পূণ্যভূমি থেকে। আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনা, বাংলাদেশকে একটি কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র হিসেবে নির্মাণ করা। আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আজকে সিলেটের মানুষ যেভাবে শত বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে ছুটে এসেছেন জনসভায়, তারা প্রমাণ করেছেন— এ দেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরে চায়। আমি সিলেটের জনগণকে অভিবাদন জানাই।

খালেদাকে মেরে ফেলার ব্যবস্থা

সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি রেখে মাত্র দুই কোটি টাকা দুর্নীতি মামলায় দেশের সবচেয়ে বড় দলের নেত্রীকে কারাগারে রাখা হয়েছে। একটি স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে তাকে বিনা চিকিৎসায় রেখে দেওয়া হয়েছিল। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও পছন্দের চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। মূলত বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়াকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা।’

ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুলতান মো. মনসুর বলেন, রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকতে পারে, মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু মিথ্যা মামলায় বড় একটি রাজনৈতিক দলের নেতা খালেদা জিয়াকে আটক করে রাখা হয়েছে। এটা আমরা মানি না। তাকে মুক্তি দিতে হবে। পরে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা

এর আগে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তি চাই না, ২১ আগস্টের পুনরাবৃত্তি চাই না, জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক ঘটনারও পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা শান্তির বাংলাদেশ চাই। তাই আগামী ৪ নভেম্বর বনানী কবরস্থানে গিয়ে ১৯৭৫-এর শহীদদের কবর জিয়ারত করে সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে চাই। সেখান থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিককৃতিতেও শ্রদ্ধা জানাতে চাই। এটা আমার প্রস্তাব।

আ. লীগকে একঘরে করার হুমকি

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নাকি লাখ-কোটি টাকার উন্নয়ন করেছে। তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে তাদের সমস্যা কোথায়? আওয়ামী লীগকে আমরা জানিয়ে দিতে চাই, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার মাধ্যমে তাদেরকে একঘরে করে ফেলব।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সৌদি আরব থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ছাল-বাকল দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, দ্রুত পদত্যাগ করুন। নইলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে টের পাবেন। জনগণের দাবি মেনে না নিলে আপনাদের ছাল-বাকলও থাকবে না।

সিলেট সিটি করপোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মো. শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, এলডিপির মহাসচিব ডা. রেদোয়ান আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীন, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, জেএসডির নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতনসহ অন্যরা।

ছোট্ট জায়াগায় আয়োজিত এ সমাবেশে ৫/৭ হাজার লোকের সমাগম হয়। আয়োজকদের অভিযোগ, পুলিশ ধরপাকড় ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করায় অনেকেই সমাবেশে আসতে পারেনি। আবার কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই সমাবেশ নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ ছিল না বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে।

দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হলেও ১টা পর্যন্ত সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়নি। ২টার পর থেকে মূলত নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। বিকেল ৩টা নাগাদ ৩/৪ হাজার লোক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন রেজিস্ট্রি মাঠ ছাড়িয়ে সমাবেশ গিয়ে পৌঁছায় সামনের সড়কে। এতে করে শহরের বন্দরবাজার সুরমা পয়েন্ট সড়কে যানজট তৈরি হয়।

ছবি: হাবীবুর রহমান

আরও পড়ুন-

আ. লীগকে একঘরে করার হুমকি ড. মঈনের

‘খালেদাকে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করেছেন হাসিনা’

আকাশপথে কামাল-ফখরুল-মান্না, সড়কপথে রব

প্রথম সমাবেশেই বিশেষ বার্তা দিতে চায় ঐক্যফ্রন্ট

‘জনগণের দাবি মেনে না নিলে ছাল-বাকলও থাকবে না’

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে চান ডা. জাফরুল্লাহ

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দাবি আদায় করা হবে: মির্জা ফখরুল

ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে ‘জয় বাংলা’য় শেষ সুলতান মনসুরের

সিলেটে দুই আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করলেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন