বিজ্ঞাপন

জিকিরে জিকিরে ইজতেমার প্রস্তুতি

January 6, 2018 | 10:55 am

আবদুল জাব্বার খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   

বিজ্ঞাপন

টঙ্গি থেকে ফিরে : কেউ মাটিতে গর্ত খুঁড়ছেন, কেউবা বাঁশ এনে তাতে বসিয়ে দিচ্ছেন, আবার কেউ মই দিয়ে উপরে উঠে সামিয়ানা টানানোর কাজে ব্যস্ত। মুখে আল্লাহর জিকির আর হাতে ময়দান প্রস্তুতির কাজ। যে যতটুকু পারছেন সেভাবেই কাজে সহযোগিতা করছেন। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে এভাবেই স্বেচ্ছাশ্রমে বিশাল ইজতেমা ময়দান প্রস্তুত করছেন শত শত তাবলিগ জামাতের কর্মীরা।

গতকাল শুক্রবার (৫ জানুয়ারি)  টঙ্গীর তুরাগতীরে ইজতেমা ময়দানে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়, ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন।

৫২তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হতে আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। লাখো মুসল্লির পদভারে মুখরিত হবে টঙ্গীর এ তুরাগ তীর। এ লক্ষ্যে শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে খুব জোরেশোরে। ৫৬০ একর জায়গার বিশাল ময়দানে চলছে সামিয়ানা টাঙ্গানো, প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ। সেই সঙ্গে চলছে খুঁটি পোতা, রাস্তাঘাট মেরামত, মাঠ সমতল করা, বিদ্যুৎ লাইন টানা, পানির লাইন পরীক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও মাঠ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।

বিজ্ঞাপন

এরইমধ্যে ময়দান প্রস্তুতির প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বী প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ইজতেমা আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। বাকি কাজ ১১ জানুয়ারির আগেই সম্পন্ন হবে ইনশাল্লাহ।’

আগামী ১২ জানুয়ারি শুরু হবে তাবলিগ জামাতের এ বিশ্ব ইজতেমা। ওই দিন ফজরের নামাজের পর আম-বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। ১৪ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। এরপর ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। শেষ হবে ২১ জানুয়ারি।

বিজ্ঞাপন

ইজতেমার মাঠে গিয়ে দেখায় যায়, শত শত স্বেচ্ছাসেবী শীতকে উপেক্ষা করে আমিরদের পরামর্শে কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো ধরণের পারিশ্রমিক ছাড়াই। শুধু ইহকালে শান্তি ও পরকালের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে তারা কাজ করছেন।

পুরান ঢাকার চানখারপুলের বাসিন্দা সাহেল আহমেদ জানান, ফজর নামাজের পর তিনিসহ তার এলাকা থেকে প্রায় ৫০জন এসেছেন ময়দান তৈরির কাজে অংশ নিতে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই তারা করছেন বলে জানান।

নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর এলাকা আসা মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের দেশে ইজতেমা হচ্ছে এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটি নিয়ামত। এখানে এসে কীভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি সেটাই আমাদের কাম্য। আল্লাহর ও রাসুল (স.) সন্তুষ্টির জন্যই আমরা এসব কাজ করছি।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে ময়দান ঘুরে দেখা যায়, বিদেশি মুসল্লিদের থাকার জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের পাড়ে টিন-চট দিয়ে বিশেষ কামরা নির্মাণের কাজও শেষপর্যায়ে।

নিরাপত্তার জন্য পুরো ময়দানকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত বছরের চেয়ে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। তুরাগ নদীতে নেওয়া হয়েছে নৌ টহলের ব্যবস্থাও। ইজতেমা চলাকালে থাকবে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ইজতেমা ময়দানে জায়গা কম থাকায় ২০১১ সালে ৬৪ জেলাকে দুই ভাগে ৩২ জেলা করে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। এতেও স্থান সংকুলান না হওয়ায়  ২০১৬ সাল থেকে  ১৬ জেলা করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। অর্থাৎ চার ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে এ বছর যে ৩২ জেলা আসবে পরের বছর বাকি ৩২ জেলার লোকজন আসবে। যা ২০১১ সালের আগে এক ধাপে অনুষ্ঠিত হতো বিশ্ব ইজতেমা।

২০১৮ সালে বিশ্ব ইজতেমায় যে ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, চট্রগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পঞ্চগড়, ঝিনাইদহ, জামালপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নরসিংদী, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, ফেনী, ঠাকুরগাঁও, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা এবং পিরোজপুর জেলা।

সারাবাংলা/এজেডকে/টিএম/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন