বিজ্ঞাপন

নওগাঁর মন্টুসহ ৪ আসামির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত সম্পন্ন

November 30, 2017 | 9:14 am

সারাবাংলা প্রতিবেদক

বিজ্ঞাপন

একাত্তর সালে সংঘটিত হত্যা নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নওগাঁ জেলার জামায়াতের সাবেক আমির মো. রেজাউল করিম মন্টুসহ চার জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন  করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। শিগগিরই এ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমণ্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান,  জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিনসহ তদন্ত সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

এ মামলায় চার আসামি হলেন, নওগাঁর মো. রেজাউল করিম মন্টু (৬৮), মো. নজরুল ইসলাম (৬৪), মো. শহিদ মণ্ডল (৬২) ও মো. ইসহাক (৬২)। তাদের মধ্যে মো. ইসহাক (৬২) তদন্ত চলার সময়ই গ্রেপ্তার অবস্থায় মারা যান। বাকি তিন আসামির মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক রয়েছে।

সাতজনকে হত্যাসহ অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করার অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। পাঁচটি ভলিউমে মোট ৬১৩ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানায় তদন্ত সংস্থা।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হান্নান খান বলেন, এ প্রতিবেদনটি তদন্ত সংস্থার ৫৫তম প্রতিবেদন। মামলাটি তদন্ত করতে একবছর সময় লেগেছে। এর মধ্যে এ মামলার গ্রেফতার এক আসামির মৃত্যুও হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরে তিনি বলেন, আসামি মো. রেজাউল করিম মন্টু ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী জয়পুরহাট জেলার আমির ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছিলেন। ওই সময় থেকেই তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি নিজ বাড়িতে চলে আসেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে তিনি আত্মগোপন করেন।

বাকি আসামিরাও জামায়াতের সমর্থক বলে জানান তদন্ত সংস্থার প্রধান হান্নান খান।

পরে জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক বলেন, ১৯৭১ সালে  মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা নওগাঁর (সাবেক রাজশাহী জেলার নওগাঁ মহকুমা) বদলগাছী থানায় অপরাধ সংঘটন করে।

গত বছরের ১৮ অক্টোবর মামলাটির তদন্ত শুরু হয়। এক বছর ধরে চলা তদন্তে মোট ৩১ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তদন্ত চলাকালে মো. ইসহাক আলীর মৃত্যু হওয়ায় অভিযোগ থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আসামি রেজাউল করিম মন্টুকে ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে জয়পুরহাট দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়।

আসামি শহিদ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয় ১২ ফেব্রুয়ারি, আসামি ইসহাক আলীকেও ওইদিন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির করে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।’

আসামি রেজাউল করিম মন্টুর বর্তমান জয়পুর হাট সদরের বাসিন্দা। জেলা শহরের প্রফেসর পাড়ার রাজাকার বিল্ডিং নামে পরিচিত বাসায় থাকতেন। আর পলাতক নজরুল ইসলাম ঢাকায় তেজগাঁওয়ে থাকতেন। শহিদ মণ্ডলের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী থানার চাঁপাডাল গ্রামে।

আসামিদের বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগ হচ্ছে :

অভিযোগ-১ : এ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর বিকেল আনুমানিক চারটা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সময়ে আসামিরা নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের রানাহার গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র সাহেব আলী, আকাম উদ্দিন, আজিম উদ্দিন মণ্ডল, মোজাফফর হোসেনকে হত্যাসহ ওই সময় ১০-১২টি বাড়ি লুট করে অগ্নিসংযোগ করে।

অভিযোগ-২ : এ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সময়ে আসামিরা নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খোজাগাড়ী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র মো. নুরুল ইসলামকে হত্যা করে। এসময় তারা ১৫-২০টি বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ করে।

অভিযোগ-৩ : এ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর বিকেল আনুমানিক পাঁচটা থেকে পরদিন অর্থাৎ ৯ অক্টোবর আনুমানিক বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সময়ে নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের মো. কেনার উদ্দিন এবং মো. আক্কাস আলীকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করে। পরে অপহরণ করে জয়পুরহাটের কুঠিবাড়ি ব্রিজে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। এই সময়ের মধ্যে আসামিরা ৪০-৫০টি বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ করে।

সারাবাংলা/একেজেড/এমএ/নভেম্বর ৩০, ২০১৭

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন