বিজ্ঞাপন

ট্রাফিক পক্ষে ৫ কোটি জরিমানা, শৃঙ্খলা ফিরল?

February 2, 2019 | 7:51 am

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েই চলেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক ইউনিট। সর্বশেষ ১৬ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আরও একবার ট্রাফিক পক্ষ পালন করেছে তারা (সর্বশেষ খবর অনুযায়ী এর মেয়াদ আজ ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে)। এই সময়ের মধ্যে ট্রাফিক আইন ভাঙার জন্য বিভিন্ন ধরনের যানবাহন, চালক ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হলেও সড়কের অবস্থা তথৈবচ। এখনও যত্রতত্র বাস থেমে যাত্রী ওঠানামা চলছে। রয়েছে বেপরোয়া গতি, ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রাক্রসিং ব্যবহার না করার মতো নিয়ম ভাঙার প্রবণতা।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ট্রাফিক পক্ষ চলাকালে প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার করে মামলা দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। এসব মামলা থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। কিন্তু এতেও সড়কে পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফেরার জন্য যথেষ্ট সাড়া মিলছে না বলে দাবি করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। যদিও তারা এ-ও মনে করছেন, এখনই কোনো সুফল না মিললেও দীর্ঘ মেয়াদে এসব জরিমানা ও মামলার সুফল পাওয়া যাবে।

আর নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশ যা করছে, তা রোগীকে সঠিক ওষুধ না দিয়ে আরও অসুস্থ করার মতো এক ধরনের ব্যবস্থা। এভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। তারা বলছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশ মামলা আর জরিমানার মধ্যেই আটকে আছে। কিন্তু এটি করার আগেই অবকাঠামোগত সমস্যাগুলোর সমাধানে নজর দেওয়া প্রয়োজন ছিল।

বিজ্ঞাপন

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ট্রাফিক পক্ষ কার্যক্রমে জানুয়ারির শেষ অর্ধে ১৬ দিনে মামলা হয়েছে ৯৫ হাজার ৮৩৫টি। এসব মামলায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৪ কোটি ৯২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫০ টাকা। এসময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ডাম্পিং করা হয়েছে ৪০৭টি এবং রেকার করা হয়েছে ১২ হাজার ৭২০টি পরিবহন।

ডিএমপি থেকে আরও জানা যায়, ট্রাফিক পক্ষ চলাকালে মোটরসাইকেল চালকদেরকে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়। এর সংখ্যা মোট ৪০ হাজার ৭৫৩টি। এছাড়া, গণপরিবহনে ২০ হাজার ৮২৬টি, সিএনজিতে ১২ হাজার ৪৭টি, মাইক্রোবাস ও পিকআপে ১৬ হাজার ৩৪০টি এবং হিউম্যান হলারের ২৭৯টি পরিবহনের নামে মামলা করা হয়। যানবাহনের কাগজপত্র না থাকা এবং যাদের আছে অধিকাংশই মেয়াদ উত্তীর্ণ, যানবাহনের ফিটনেস না থাকা ও বীমা না থাকার কারণে বেশিরভাগ মামলা হয়। সেই সঙ্গে পরিবহনে অতিরিক্ত মালামাল বহন করা ও উল্টোপথে চলাচলের অপরাধেও বড় একটি অঙ্কের মামলা হয়েছে। তবু সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা।

বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) সরেজমিনে রাজধানীর কাওরান বাজার, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা, শান্তিনগর, কাকরাইল, পল্টন, গুলিস্তান ও শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগের মতোই যত্রতত্র রাস্তার মাঝখানে থেমে যাত্রী ওঠানামা করছে গণপরিবহনগুলো। পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার করছেন পুলিশের সামনেই। কোথাও কোথাও পথচারীদেরকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হতেও দেখা গেছে। আর এসব অনিয়মের সঙ্গে সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশকেও তৎপর দেখা গেছে মামলা দেওয়ার বিষয়ে। যেন তাদের কাজ মামলা দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান সারাবাংলাকে বলেন, কিছুদিন পর পর ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে মামলা ও জরিমানার পরিমাণ বাড়বে। কিন্তু সমাধান আসবে না। কারণ সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী অবকাঠামোগত যেসব সমস্যা, সেগুলো সমাধান না করতে পারলে মামলা আর জরিমানার পরিমাণ কেবল বাড়বেই, সমাধান মিলবে না। যে শহরে পথচারীদের চলাচলের ফুটপাত ফ্রি লাইসেন্সে হকারদের দখলে থাকে, সে শহরে পথচারীদের সচেতন করার যৌক্তিকতা কতটুকু? এসব সমস্যার সমাধান না করে কিছুদিন পর পর ট্রাফিক সপ্তাহ বা পক্ষ পালন করতে থাকলে একসময় ট্রাফিক পুলিশ ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা হারাবে।

একই মত দেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হকও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সিস্টেমকে বিশৃঙ্খল রেখে কেবল পথচারীদের বা ব্যবহারকারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিএমপির যে উদ্যোগ, তাতে মানুষ নিয়ম সম্পর্কে অবগত হবে, কিন্তু মানবে না। মামলা-জরিমানার পরিমাণ রেকর্ড ছাড়ানো তারই প্রমাণ।

অবশ্য বিশেষজ্ঞদের এসব কথার সঙ্গে একমত নয় ট্রাফিক পুলিশ। তারা মনে করছে, সড়কে শৃঙ্খলা কিছুটা হলেও ফিরেছে। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ আহমেদ এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, চলমান ট্রাফিক পক্ষে যে মামলা ও জরিমানা হয়েছে, তাতে বুঝা যায় অনিয়ম কতটা ছাড়িয়ে গেছে। তবে এসব মামলা ও জরিমানায় সড়কে শতভাগ না হলেও অন্তত অর্ধেক শৃঙ্খলা ফিরেছে বলে মনে করি। যে কারণে এসব অনয়িমকে নিয়মে ফেরাতে সময় লাগলেও ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

মফিজ আহমেদ আরও বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ২৯টি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। এরই মধ্যে এসব নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানো হয়েছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সড়কে শতভাগ শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন