বিজ্ঞাপন

বাড়বে বীজ সরবরাহ, আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে কৃষকের

February 14, 2019 | 8:20 am

।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: মানসম্মত বীজের অভাবে আবাদ হলেও অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফলন মিলছে না। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়েও বীজ পৌঁছায় না কৃষকের হাতে। ফলে কৃষিতে নিয়োজিত থেকেও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে না কৃষকের। এ প্রেক্ষাপটে উন্নত মানের ধান, গম ও পাটের বীজ কৃষকের কাছে সরাসরি সরবরাহের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ’ নামের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে থাকবে কৃষি মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সঠিক সময়ে ও সঠিক মূল্যে কৃষকদের কাছে সঠিক জাতের উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ সহজলভ্য করা সম্ভব হবে। এতে করে ফসলের উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনি কৃষকও আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের ২৯ অক্টোবর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেওয়া বিভিন্ন সুপারিশ প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)।

বিজ্ঞাপন

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে নগরায়ন ও অন্যান্য কারণে প্রতিবছর আবাদযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। দেশের টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য তা হুমকিস্বরূপ। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হেক্টর প্রতি দানাদার ফসলের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেবল মানসম্মত বীজের ব্যবহারই ফসলের ফলন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়াতে পারে। পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের বীজের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনসহ (বিএডিসি) বিভিন্ন বীজ কোম্পানি কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী এলাকা-উপযোগী জাতের বীজ সরবরাহ করতে পারে না। তাই কৃষকরা স্থানীয় বা বিদেশি জাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এদিকে, গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য উদ্ভাবিত সম্ভাবনাময় জাতগুলো কৃষক পর্যায়ে যেতে পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় নেয় এবং প্রয়োজনের তুলনায় এর পরিমাণও অনেক কম থাকে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আউশ ও গমের আবাদের এলাকা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু অনেক জেলাতেই ভালো জাত বা বীজের অভাবে কৃষক কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছে না। এখনও কৃষক আউশ মৌসুমে ব্রি ধান ৪৮ ও ব্রি ধান ৬৫-এর পরিবর্তে বোরো মৌসুমের জাত ব্রি ধান ২৮ জাতের আবাদ করছে। আবার কৃষক তার চাহিদামতো বারি গম ২৮, বারি গম ২৯, বারি গম ৩০ ও বারি গম ৩১-এর বীজ পাচ্ছে না। তাই রোগ সংবেদনশীল ও কম ফলনশীল জাত যেমন শতাব্দী, প্রদীপ, সৌরভ জাতের গম আবাদ করতে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে বিএডিসি’র সরবরাহ করা পাটবীজ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল এবং বেসরকারি বীজ কোম্পানি পাটবীজও কৃষক পর্যায়ে সময়মতো ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছায় না। আর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের নতুন জাতগুলো কৃষকের কাছে সময়মতো পৌঁছাতে পারছে না।

বিজ্ঞাপন

ধান, গম ও পাট— তিনটি ফসলই ‘নোটিফায়েড ফসল’ হওয়ায় এবং পরিমাণে বেশি লাগে বলে এসব বীজ বাজারজাত করতে বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলোর আগ্রহ কম থাকে। তারা এসব ফসলের বীজের উন্নতমান ধরে রাখতেও সক্ষম নয়। এ জন্য কৃষক পর্যায়ে ধান, গম ও পাট বীজ সরবরাহ বাড়ানো ও সহজলভ্য করার জন্য এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

এই প্রকল্পের আওতায় ৩৪ হাজার ৮৮০টি বোরো, রোপা আমন, আউশ, গম ও পাটবীজ উৎপাদন ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ১৬ হাজার ৭৪০ ব্যাচ কৃষক ও ২১০ ব্যাচ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে। এর বাইরেও ২৫ হাজার ৭৭০টি বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ উপকরণ কেনার প্রস্তাবনা রয়েছে এই প্রকল্পে।

এ বিষয়ে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে একনেকের জন্য তৈরি সারসংক্ষেপে উল্লেখ করেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নতমানের ধান, গম ও পাটবীজ সহজলভ্য করে ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি বীজ বাজার ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

বিজ্ঞাপন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন