বিজ্ঞাপন

আমনের বীজতলায় ক্ষতি, অধিদফতর বলছে শঙ্কার কিছু নেই

September 2, 2019 | 6:03 am

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বন্যায় দেশের ৩১ জেলায় আমনের মোট বীজতলার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ শতাংশের বেশি বীজতলা। মৌসুমের শেষ দিকে এসে দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ধানের চারা সংকট হওয়ারও তথ্য এসেছে। এতে উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন চাষাবাদ সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, এরই মধ্যে ৮০ ভাগ জমিতে ধানের চারা রোপণ শেষ হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় আপৎকালীন বীজতলাও তৈরি ছিল। সেখানে উৎপাদিত ধানের চারা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে মৌসুমটিতে তেমন কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা নেই।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক মীর নূরুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে আমনের বীজতলার কোনো সংকট নেই। যেখানে বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল সেখানেও অতিরিক্ত চারা রয়েছে। অনেকেই বলছে চারা আর লাগবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। আপৎকালীন সময়ের জন্য ৭৫ একর বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে উৎপাদিত চারা বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে বিতরণ করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

মীর নূরুল আলম আরও বলেন, ‘আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে কোথাও কোথাও আমন ধান উঠতে শুরু করবে। আমন রোপণের অগ্রগতিও ৮০ শতাংশের বেশি। পরবর্তীতে আর কোনো দুর্যোগ না হলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলেই আমরা প্রত্যাশা করছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, সারাদেশে এবার আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ লাখ ৪৯ হাজার ২১৯ হেক্টর। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত রোপণ হয়েছে ৪১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮৬ হেক্টর জমিতে। আবাদের ক্ষেত্রে শতকরায় অগ্রগতি ৭৫ ভাগের বেশি। আর সারাদেশে আমনের বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৯৮ হেক্টর। বীজতলা তৈরি হয়েছে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯০৫ হেক্টরের। বীজতলা তৈরির অগ্রগতির হার প্রায় ১২০ শতাংশ।

তবে বন্যায় এবার দেশের ৩১ জেলায় বিভিন্ন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে বীজতলারও। বন্যায় আক্রান্ত ওই ৩১ জেলায় ১ লাখ ৬ হাজার ৫১৯ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। এর মধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৬৫৫ হেক্টরের বীজতলা। আমনের বীজতলার মধ্যে ৯ হাজার ৭৫ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ও ৭ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতির শতকরা হার ১১ ভাগেরও বেশি।

বিজ্ঞাপন

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের কৃষক মো. মোস্তাফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে আমন ধানের চারা রোপণ শেষ করেছি। যেখানে পানি বেশি ছিল অর্থাৎ নিচু জমিতে এখন আমন ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। এবার বীজের তেমন কোনো সংকট হয়নি। চারার সংকটও দেখা দেয়নি।’

একইরকম কথা বলেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার হরশি গ্রামের কৃষক হিমেল। সারাবাংলাকে তিনি জানান, ভালোভাবেই তিনি আমন ধানের চারা রোপণ শেষ করেছেন।

 

বিজ্ঞাপন

এদিকে কুড়িগ্রামে বীজতলার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি কৃষকরা। আমন রোপণে চারা সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। গাইবান্ধা থেকে ৪ মণ ধানে এক পোন চারা বিক্রি হওয়ার তথ্য এসেছে। আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চারা সংকটের খবর এসেছে দেশের আরও কয়েকটি অঞ্চল থেকে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, বীজতলার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন তারা। বন্যাকবলিত এলাকায় গত কয়েকবছরের মতো এবারও ভাসমান বীজতলা তৈরি ছিল। আপৎকালীন বীজতলাও তৈরি করে রেখেছিল সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে এখন আমনের চারাও বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে সারাদেশে আমনের বীজতলায় কিছুটা ক্ষতি হলেও সামগ্রিক উৎপাদনে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান সারাবংলাকে বলেন, ‘আমনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারিভাবে বীজতলা তৈরি ছিল। এছাড়া কৃষকও অনেক সময় উঁচু জায়গায় বীজতলা তৈরি করে। বর্তমানে ভাসমান বীজতলা তৈরির পদ্ধতিও আছে।’ ফলে বন্যায় বীজতলার ক্ষতি হলেও উৎপাদনে এর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন এই কৃষিবিদ।

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন