বিজ্ঞাপন

মানুষকে সহযোগিতা করব, সেটি নিয়েও প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী

November 7, 2019 | 5:23 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অফিসে একটা চিঠি এসে গেল, কোন নীতিমালায় প্রধানমন্ত্রী অনুদান দেন, আমি বলেছি লিখে দেন, প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছার নীতিমালায় দেন। মানুষকে সহযোগিতা করব, সেটি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক ও নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা ভাতা ও চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন তিনি। এসময় তিনি তার সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে গণমাধ্যম উন্মুক্ত করে দেওয়াসহ গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যত বেশি উন্মুক্ত করে দেয় যত বেশি সুযোগ দেয়, ততবেশি সমালোচনারও সম্মুখীন হয়। আগে কথাও বলতে পারত না, কাজেই সে সমালোচনাও করতে পারত না। সেটা আমি চিন্তা করি না। আমি মনে করি যে কাজ করব দেশের জন্য এবং নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করি।

গত এক দশকে বাংলাদেশ আজকে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নতি করেছে, দেশ এগিয়ে গেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে ট্রাস্ট ফান্ডেও অনুদান দিয়েছি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমরা যে ট্রাস্ট ফান্ড করেছি এখানে কথা ছিল আমাদের টেলিভিশনের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল মালিকদের বলেছিলাম এই সব ট্রাস্ট ফান্ডে যেন অনুদান দেয়। কিন্তু ইত্তেফাক থেকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাহেব এবং স্কয়ার গ্রুপের মাছরাঙ্গা থেকে অঞ্জন চৌধুরী এই দুই জনেই বোধহয় অনুদান দিয়েছি। আর কেউ দিয়েছি কি না, জানি না।’

এসময় সামনে বসে থাকা একজন সম্পাদক অনুদান দেওয়ার কথা বলেলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবজারভার থেকে কত? …খুব কম। অথচ সবাই যদি একটু একটু করে দেয় এবং সবসময় যদি দিতে থাকে তাহলে কিন্তু ভালো একটা অ্যামাউন্ট জমা হয়। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সীড মানি যেটা সেটা দিয়ে ট্রাস্ট ফান্ড করে দিয়েছি।

গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরিতে অনিশ্চয়তা, বেতন-ভাতা, পেনশন, চিকিৎসা ভাতাসহ বিভিন্ন অস্থিরতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার চেষ্টা হচ্ছে, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এইভাবে ট্রাস্ট ফান্ড করে করে যাচ্ছি। কিন্তু এখানে যদি নিজেদের গরজ থেকেও কিছু দেওয়া হয় তাহলে কিন্তু একটা ভাল এমাইন্ডও জমা হয় এবং সেটা নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করে।’

বিজ্ঞাপন

‘আমি সরকারে যখনি এসেছি তখনই চেষ্টা করি, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী কল্যাণ ফান্ড আছে একটা। আবার সেটা দেই কেন? কাকে দেই? কেন দেই কোথা থেকে দেই? এই নীতিমালা কি? এই প্রশ্নেরও সস্মুখীন হতে হয়। যেমন আমাদের অফিসে একটা চিঠি এসে গেল? কোন নীতিমালায় প্রধানমন্ত্রী টাকা দেন, আমি বলেছি লিখে দেন, প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছার নীতিমালায় দেন’।

‘এই ধরনের প্রশ্ন ওঠে। যাই হোক, মানুষকে সহযোগিতা করব, সেটা নিয়েও প্রশ্ন? তারপরে আবার তারাই বলবে, কথা বলার অধিকার নেই। এমনকি কোর্ট থেকে স্বনামধন্য একজন আইনজীবী তথ্য চাইলেন, কোন নীতিমালার ভিত্তিতে দেওয়া হয়? আসলে সব কিছুর একটা নীতিমালা আছে, নিয়ম আছে, সব করাই আছে। কিন্তু তাদের এই ধরনের মানসিকতাটা আছে?,’- বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংবাদপত্র ও বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাই। জাতির পিতা এই দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই আমরা এদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করতে চাই।’

বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস, এটা তো একসময় মুছেই ফেলা হয়েছে। ৭৫’এ জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর সেগুলো মুছে ফেলা হয়।’

‘একাত্তরে নির্যাতিত মা-বোনদের কিন্তু এই কাহিনিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় আমাদের একটা সামাজিক অবস্থা ছিল, সেই সময় কোনো মেয়ে ধর্ষিত হলে মুখ ফুটে বলতে পারত না বা তার পরিবারও একথা বলতে পারত না। সামাজিকভাবে তারা অবান্তর হয়ে যেত, তাদেরকে অনেক ঘৃণার চোখে দেখা হতো। অথচ অপরাধ কিন্তু তাদের না। তাদের এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা। তবে আমাদের আস্তে আস্তে আমাদের যেমন নারী অধিকার বেড়েছে, নারীদের কথা বলার অধিকার বেড়েছে। সাথে সাথে আজকে মেয়েরা কোনোভাবে  যদি নির্যাতিত হয়, তাহলে বলতে পারে।’

গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অপরাধী তাদের নাম ঠিকানা তাদেরকে ফোকাস করতে হবে। তাদের কথা সামনে তুলে ধরতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধাপরাধীর বিচার করছি। তার ভিতর থেকে কিছু খবর বের হচ্ছে। কিন্তু তারপরও কিন্তু আরও অনেক ইতিহাস রয়ে গেছে। সে ইতিহাসগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্মের জানা উচিত, দেখা উচিত। আর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখেছি ২০০১ সালে। ১লা অক্টোবর নির্বাচন আর সেই নির্বাচনের পর একই কায়দায়, একইভাবে অত্যাচার নির্যাতন, ধর্ষণ হয়। অনেকেই সাহস করে বলেনি, অনেকে লজ্জার ভয়ে বলেনি। আমি যখন এই সমস্ত নির্যাতিত অঞ্চলে গিয়েছি, অনেক মহিলারা, মেয়েরা; এমনকি আদিবাসী মহিলা পর্যন্ত গোপনে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছে, মা; আমাদের প্রতি এইভাবে পাশবিক অত্যাচার হয়েছে। আমি তো লোক লজ্জার ভয়ে বলতে পারছি না, সেটা বললেও তো আমাদের সরকার করাই মুশকিল হয়ে যাবে।’

‘আমি মনে এইসব ঘটনাগুলোর তথ্যগুলো আপনাদের সংগ্রহ করা উচিত। এইগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা উচিত, প্রকাশ করা উচিত। যেন ভবিষ্যতে আর কখনো এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। কারণ যারা এর সঙ্গে জড়িত। তাদের মুখোশটা উন্মোচন করা উচিত। যতবেশি তাদেরকে উন্মোচন করা যাবে, ততবেশি সমাজে আর এই ধরনের ঘটনা কম হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আমার কথা জানেন যে, কেউ অপরাধ করলে অপরাধীকে অপরাধী হিসাবে দেখি, সে কোন দল করে, কি করে সেটা আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। অপরাধীকে কোনোমতেই রক্ষা করি না। আমার দলের সম্মান নষ্ট হবে বা আমার দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমি কিন্তু সেই চিন্তা করি না। আমার কাছে অপরাধী, অপরাধী হিসাবেই কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই এবং সেটা আমরা নিয়ে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী  একটি অনুষ্ঠানে রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ‘তারা (প্রথম আলো) কীভাবে এ ধরনের অবহেলা করতে পারে। স্কুল শিক্ষার্থীরা যেখানে ঘোরাফেরা করছে সেখানে এই ধরনের একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে তাদের কোনো দায়িত্বশীলতা ছিল না। এটি একটি গুরুতর অভিযোগ, এটি বরদাশত করা যায় না।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পাশে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন। তথ্য সচিব আবদুল মালেক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন