বিজ্ঞাপন

দুর্নীতি করে টাকা কামানো এটি কারও কারও রোগ: প্রধানমন্ত্রী

November 30, 2019 | 5:12 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দুর্নীতি করে টাকা কামানো এটি কারও কারও রোগ ও ব্যারামে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটিও একটা ব্যারাম, এটিও একটা অসুস্থতা। কারণ টাকা-পয়সা বানাতে থাকলে বানাতেই থাকে। কিন্তু ওই টাকার ফলে ছেলে-মেয়ে বিপথে যাবে, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা নষ্ট হবে, মাদকাসক্ত হবে, তা দেখারও সময় নেই। টাকার পেছনে ছুটছে তো ছুটছেই আর নিজের পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। এই ধরনের সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না। আমরা চাই, সৎপথে কামাই করে যে চলবে, সে সম্মানের সঙ্গে চলবে। সৎপথে কামাই করে থাকবে, সে সমাজে সম্মান পাবে।’

শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথি সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে জাতীয় সংগীতের সুরে সুরে জাতীয় পতাকা ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে ১ম অধিবেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর মঞ্চে উঠে আসত নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। এরপর মহানগর নেতা সালাহউদ্দিন বাদল মতিন ভুঁইয়ার পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হয়। সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে প্রধান অতিথিকে ফুলেল শুভেচ্ছা এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়াও সম্মেলন ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ধর্মীয় গ্রন্থপাঠের মধ্যদিয়ে বক্ততা পর্ব শুরু হয়। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন উত্তর ও দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক এম. সাইফুল্লাহ সাইফুল এবং গোলাম রাব্বানী বাবলু।

বিজ্ঞাপন

প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার কথা তুলে ধরে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম ইতিহাসের সমালোচনা করেন। শেখ হাসিনা তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এ দলগুলোর সৃষ্টি হয়েছে যারা অবৈধভাবে হত্যা ক্যু-ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে, ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতায় উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে এই দলগুলো গঠন করা হয়েছে। এরা বিরোধীদলে থেকে গড়ে ওঠেনি। এরা মানুষের কথা চিন্তা করে গড়ে ওঠেনি। এরা অবৈধ ক্ষমতা দখল করে তাদের অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করণের একটা মাধ্যম হিসেবে এই দলগুলো গঠন করা হয়েছিল। কাজেই চরিত্র হচ্ছে আলাদা। এরা সুবিধাবাদী, খাওয়াপার্টি। এরা মানুষকে কিছু দিতে পারে না।’

কিন্তু আওয়ামী লীগ একটা নীতি আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠেছে দাবি করে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলীয় প্রধান বলেন, ‘জনগণের কথা চিন্তা করেই প্রথম বিরোধী দল হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গড়ে ওঠে। কাজেই এই আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছে। এই আওয়ামী লীগ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই আমাদের নীতি আদর্শ হচ্ছে, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা, জনগণের জীবনমান উন্নত করা। জনগণকে একটু উন্নত জীবন দেওয়া যায়, এটি জাতির পিতার সবসময় স্বপ্ন ছিল। তিনি নিজের দিকে তাকান নাই। নিজে কি পাবেন, না পাবেন সে চিন্তা করেন নাই।’

বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্বের পদ ছেড়ে দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়েছিলেন শুধু দলকে সুসংগঠিত করবার জন্য। দেশের মানুষের জন্য সকল ধরনের আত্মত্যাগে তিনি সবসময় প্রস্তুত ছিলেন বলেও যোগ করেন শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই তারই আদর্শের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সেই আদর্শ বুকে ধারণ করে জনগণের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণকে কী দিতে পারলাম সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণের কল্যাণ কিসে হবে সেই চিন্তা করতে হবে। আজকে আমরা সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি এবং অব্যাহত রাখব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান আমরা অব্যাহত রেখেছি। এটাও অব্যাহত থাকবে। কারণ জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ জনগণের কল্যাণে ব্যয় হবে। কারো ভোগ-বিলাসের জন্য না। কারণ ভোগ বিলাসের জন্য এটা ব্যয় হবে না।’

‘কেউ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করবেন। বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন। আর যে সৎভাবে জীবনযাপন করবে, যে সাদাসিধা জীবনযাপন করবে, তার জীবনটাকে নিয়ে সে কষ্ট ভোগ করবে, এটা কিন্তু হতে পারে না। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরানী খাওয়ার থেকে, আর কোন ব্র্যান্ড পরার থেকে সাদাসিধা জীবনযাপন করা অনেক অনেক সম্মানের।’

দুর্নীতি করে টাকা কামানো এটা কারও কারও রোগে পরিণত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আসলে তাদের মধ্যে একটা রোগ। এটিও একটি ব্যারাম, এটিও একটি অসুস্থতা। কারণ টাকা পয়সা বানাতে থাকলে বানাতেই থাকে। কিন্তু ওই টাকার ফলে ছেলে-মেয়ে বিপথে যাবে, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা নষ্ট হবে, মাদকাসক্ত হবে, সেটা দেখারও সময় নাই। টাকার পিছনে ছুটছে তো ছুটছেই আর নিজের পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। এই ধরনের সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না। আমরা চাই, সৎ পথে কামাই করে যে চলবে, সে সম্মানের সাথে চলবে। সৎ পথে কামাই করে থাকবে, সে সমাজে সম্মান পাবে।

‘আর চোরা টাকা অবৈধ টাকা দুর্নীতির টাকা অবৈধভাবে উপার্জনের টাকা দিয়ে যতই বিলাসিতা করুক, মানুষ মুখে হয়ত বাহবা দেবে, পেছনে একটা গালিও দেবে; এরা দুর্নীতিবাজ-চোর। সেই গালিটা হয়ত শোনা যাবে না, বোঝা যাবে না কিন্তু সেই গালিটা খেতে হবে। এই কথাটা মনে রাখতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা সারাজীবন সাদাসিধা জীবন যাপন করে গেছেন।কাজেই তার আদর্শের সৈনিক, তাদের সেইভাবেই চলতে হবে। তিনি এ দেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের কথা ভেবেছেন। তাদের কিভাবে সুন্দর জীবন দেবেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য কিভাবে গড়ে তুলে প্রত্যেকটা মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সেটার জন্যই সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন বলেও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি বলেই গত এক দশকে আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পাচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান ফিরে পেয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে পায়নি। আওয়ামী লীগ আসার পরেই পেরেছে। কাজেই এই সম্মানটা ধরে রাখতে হবে।’

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর দক্ষিণের আগামী দিনের নেতৃত্বের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে যারা নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন বা যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদেরকে সেই কথাটা মনে রাখতে হবে এবং আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। যে ত্যাগের মহিমা জাতির পিতা রেখে গেছেন। সেই ত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আজকে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের এই ধাপ ধরেই আমাদের উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলব।’

২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। আমরা আরও সামনে কর্মসূচি নিয়েছি। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০। আমরা শত বছরের প্ল্যান দিয়েছি। এই বাংলাদেশ যেন আর কখনো পিছনে ফিরে না যায়। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীব ন পায়, সমৃদ্ধ জীবন পায়,সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই পরিকল্পনা তৈরি করেছি এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

‘আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলার মানুষকে নিয়ে যুদ্ধ করে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন। কাজেই আমাদের কাজ হবে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দেশের উন্নয়ন করা। আর সেই উন্নয়ন কাজেই আমরা করে যাচ্ছি।”

‘আমরা চাই, আমাদের প্রতিটি নেতাকর্মী সেই আদর্শ নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ এগিয়ে যাবে। আর কখনো কোন হায়েনার দল এই বাংলাদেশের মানুষের টুঁটি চেপে ধরতে পারবে না, আর তাদের বুকের রক্ত চুষে খেতে পারবে না। আর কোন যুদ্ধাপরাধী, খুনী সন্ত্রাসী; আগুন দিয়ে যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে, তারা আর কখনো এই দেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ভবিষ্যতে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।’

মহানগর সম্মেলনের সফলতা কামনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের নেতা নির্বাচিত করবেন। সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। মনে রাখবেন জাতির পিতার হাতে গড়া এই সংগঠন। এই সংগঠন দিয়েই তিনি স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কাজেই সংগঠনকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। মহানগর আওয়ামী লীগ সবসময়েই যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে, যে কোনো অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। সেই ঐতিহ্য আপনারা ধরে রাখবেন।’

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ। সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন