বিজ্ঞাপন

দিল্লির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে গুরুত্ব পাবে এনআরসি

December 11, 2019 | 10:36 pm

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দ্য ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওরা) সম্মেলনে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ভারতের নয়া দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবেন। এই সম্মেলনের ফাঁকে নয়া দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, দুই মন্ত্রীর বৈঠকে এনআরসি (ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি), সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়, সমুদ্রসীমায় রাডার স্থাপন সংক্রান্ত আলোচনা গুরুত্ব পাবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, এনআরসি’র ফলে সম্প্রতি ভারতের আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ। দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নেতারা বলছেন, সারাদেশেই এনআরসি চূড়ান্ত হবে। বিজেপি নেতাদেদের এমন বক্তব্যে ভারতজুড়ে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে, দেশের উত্তর পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে হঠাৎ করেই অনুপ্রবেশ বেড়ে গেছে। ঝিনাইদহের আইন-শৃঙ্খলার বাহিনীর হিসেবে, নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়েছেন।

ঢাকা-নয়াদিল্লি সূত্রগুলো জানাচ্ছে, আসন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এনআরসি ইস্যুটি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হবে। পাশাপাশি এই ইস্যুতে দেওয়া অঙ্গীকারের কথা নয়া দিল্লিকে মনে করিয়ে দেবে ঢাকা। এরই মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাসের সঙ্গে এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত সপ্তাহে আলোচনা করেছেন।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা কোনো বিদেশি নেব না, যাচাই-বাছাই করে দেখব তারা বাংলাদেশি কি না, কেননা একটি সিস্টেম আছে। আমাদেরও ভেরিফাইয়েড করার বিষয় আছে। আমরা যখন দেখব যে, তারা আমাদের লোক, আমরা তখন নিয়ে আসব। পুশ-টুশ এগুলো শুনতে ভালো লাগে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এ সময়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এত সুন্দর সম্পর্ক। সবসময়ই কোনো কোনো দুষ্টু লোক চান এদের সম্পর্কটি আরও ত্যক্ত হোক। এর জন্য কেউ কেউ একেকটি বিষয় উসকে দেয়। এনআরসি বিষয়টি ভারতের একান্ত অভ্যন্তরীণ। সুতরাং এটি যেন কোনোভাবে আমাদের প্রভাব না ফেলে সেটির জন্য আমরা নতুন করে অঙ্গীকার চাইব।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান সারাবাংলা’কে বলেন, ‘এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু এটির একটা স্পিল ওভার (শঙ্কা বা নেতিবাচক পরিস্থিতি) প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে যে, ভারতের রাজনীতিবিদরা যা বলছেন আর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে যা বলেছেন তার মধ্যে একটা অসামঞ্জস্য রয়েছে। এনআরসি ইস্যু আসলে কোনদিকে যাচ্ছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। ফলে এই ইস্যুটি স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার বিষয়।’

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক সাহাব এনাম খান আরও বলেন, ‘আবার এই বিষয়টি সুরাহার জন্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যাওয়ার মতো অবস্থা এখনো আসেনি। তবে যেহেতু ভারত বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ তাই এই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয়। ভারতের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত এই কারণে যে, এনআরসি ইস্যুতে বাংলাদেশের নাম জড়ানো হচ্ছে। ফলে ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশ বিদ্বেষী মনোভাব সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। রাজনীতিবিদরা এই বিষয়ে বাংলাদেশকে জড়িয়ে কথা বলছেন, তাই জনগণের মাঝেও এর একটা প্রভাব কাজ করবে। বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে এমন নেতিবাচক প্রভাব কাজ করলে তা দুই-দেশের বাণিজ্য, অর্থনীতিসহ সার্বিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে। তাই বাংলাদেশকে কোনোভাবেই এনআরসি ইস্যু হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।’

এর আগে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের একাধিকবার বলেছেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ঢাকা সফরে এসেছিলেন তখন তার সঙ্গে এই বিষয়ে আলাপ হয়েছে। আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) সামনেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, বিষয়টি একান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমি ভারতের মন্ত্রীর এই কথা বিশ্বাস করি। ভারতের মন্ত্রী আমাকে আরও বলেছেন যে, তাদেরকে কখনোই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না।’

প্রসঙ্গত, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ আগস্ট আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে তালিকায় স্থান পেয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ নাগরিক। অর্থাৎ প্রায় ১৯ লাখ বসবাসকারী চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।

আসামে অবৈধ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করতে নাগরিক বিল প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫১ সালে। এরপর বিভিন্ন সময়ে এই তালিকা সংশোধন করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর থেকে যে সমস্ত ‘বাংলাদেশি’ নাগরিক বেআইনিভাবে ভারতে এসে বসবাস করছেন তাদের তালিকা সংশোধনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

বিজ্ঞাপন

তবে যে সমস্ত বসবাসকারী ভারতের নাগরিক বলে বিবেচিত হবেন না তাদের কপালে কি ঘটবে তা অনিশ্চিত। বিভিন্ন সংগঠন এ সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারতের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পাস হলো ‘বিতর্কিত’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এখন থেকে এ বিলটি ভারতের আইনে পরিণত হলো।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ভারতের রাজ্যসভায় এ বিলটি পেশ করেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহা। দিনভর উত্তপ্ত বিতর্কের পর ১২৫-১০৫ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাস হয় রাজ্যসভায়।

সারাবাংলা/জেআইএল/একে

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন