বিজ্ঞাপন

অসময়ে হায় হায় কেউ মুশি’র নয়!

February 4, 2020 | 3:49 pm

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

মুশফিকের ব্যাটে যখন বাংলাদেশ হাসে তখন তাকে নিয়েই টিম ম্যানেজমেন্টের নাচানাচি। পারলে তাকে মাথায় তুলে রাখেন। ভাবখানা এমন মুশফিকের আবার বিকল্প হয় নাকি? কিন্তু যখন তিনি বিপদে পড়লেন তখন তার পাশে নেই কেউ! সবাই যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন! এই মিডল অর্ডারের হাত ধরেই এদেশ অসংখ্য জয়ের মুকুট পরেছে সবাই যেন তা বেমালুম ভুলে বসে আছেন। এমনকি যে বোর্ড সভাপতি মুশফিককে অযুতবার দেশ সেরা উপাধি দিয়েছেন তিনিও তার এমন ঘোরতর বিপদে নিশ্চুপ। নির্বাচক মন্ডলী ও হেড কোচের কথা তো বলাই বাহুল্য। মুশফিককে বাদ রেখেই তারা আগামির টিম কম্বিনেশন সাজাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

মুশফিকের অপরাধ? পারিবারিক কারণে পাকিস্তান সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন দেশ সেরা এই ব্যাটসম্যান। আরও পরিষ্কার করে বললে, ভীতি থেকেই পরিবার তাকে মৃত্যু উপত্যকা পাকিস্তানে যাওয়ার অনুমতি দেননি। এটাই তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার এই সিদ্ধান্তে টিম ম্যানেজমেন্ট বিরক্ত। এমনও শোনা গেছে, তারা ক্রিকেটাঙ্গনে জনে জনে বলে বেড়িয়েছেন, ‘আর কারও পরিবার নেই, শুধু তারই পরিবার আছে?’ এবং ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, যেহেতু পাকিস্তান সফরে তিনি যাননি সেহেতু আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজেও একমাত্র টেস্টে তাকে দলে রাখা হবে না।

এক্ষেত্রে তারা যুক্তিটিও দেখিয়েছেন চমৎকার- শুধু মাত্র তার কারণে পাকিস্তানে দুই টেস্ট ও ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে তিন রকম একাদশ খেলাতে হবে। এটা খুব ভালো কিছু হবেনা।

বিজ্ঞাপন

কই তামিম ইকবাল তো প্রায় দু’মাস ছুটি কাটিয়ে বহাল তবিয়তেই দলে নিজের জায়গা ফিরে পেলেন। নিষিদ্ধ সাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রেও তাই দেখা গেছে। বিশ্বকাপের পরে প্রায় দেড় মাস ছুটিয়ে দোর্দন্ড দাপটেই দলে ফিরলেন। তাহলে মুশফিকের সঙ্গে এমন বিমাতাসুলভ আচরণ কেন?

সেটা জানতেই মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশারের সঙ্গে কথা বলেছিল সারাবাংলা। আলাপনের প্রাক্কালেই মুশফিককে নিয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে বললেন, ‘আমরা আপাতত পাকিস্তানের সঙ্গে প্রথম টেস্ট ম্যাচটি নিয়েই ফোকাস করছি। এসব নিয়ে ভাবতে চাইছি না।’

বিজ্ঞাপন

হাবিবুল

তবে শেষটা করলেন মুশফিককে প্রশংসা বাক্যে ভাসিয়েই। কিন্তু চলতি মাসেই জিম্বাবুয়ে সিরিজে তাকে স্কোয়াডে ফেরানো হবে কিনা সে ব্যাপারে কিছুই বললেন না। ‘ বাংলাদেশ ক্রিকেট আজকের যে অবস্থানে সেখানে মুশফিকের ভূমিকা কোনো অংশেই কম নয়।’

এদিকে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সুরেই সুর মেলালেন। ‘ডমিঙ্গো যেটা বলেছে, জিম্বাবুয়ে সিরিজে ওকে দলে নিলে তিন ম্যাচে টিম কম্বিনেশন তিন রকমের হবে সেটাই ঠিক। তাছাড়া ওতো ফিট নেই। হ্যামিস্ট্রিংয়ের চোটে বিপিএলের পরে আর কোনো ম্যাচই খেলেনি। আগে ফিট হয়ে বিসিএল খেলুক। সেখানে কেমন পারফর্ম করে দেখি। তারপর আমরা বিবেচনা করব।’

বিজ্ঞাপন

তার কথাতেই পরিষ্কার মুশফিকের সময় কতটা খারাপ যাচ্ছে। অথচ এই তো সেদিন, ভারত সিরিজে তার ব্যাটে ভর করেই ভারতের মাটিতে পরাশক্তি দলটির বিপক্ষে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি জিতল। টেস্টেও পাদ প্রদীপের আলোয় ছিলেন তিনিই। শামি, ইশান্ত আর উমেশের পেস তোপে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া দলে তিনি একাই বুক চিতিয়ে লড়লেন। আর তাকে নিয়ে নাকি ভাবতে হবে!

ও ভালো কথা। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়েছিলেন মুশফিক। সেই চোট তাকে ছিটকে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ থেকে। তবে আশার কথা হলো, মুশফিক এখন পুরোপুরি সেরে উঠেছেন।

আজ তার ফিটনেস পরীক্ষা ছিল। সেই পরীক্ষায় তিনি পাস করেছেন বলেও জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী। ‘ও আজকে পরীক্ষা দিয়েছে। ওর ফিটনেস ঠিক আছে। বিসিবিএলের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে খেলতে পারবে।’

এবার আসুন দেখে নেই গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে যাওয়ার আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সম্মেলন কক্ষে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো মুশফিককে নিয়ে কি বলেছিলেন। ‘আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মুশফিক সবশেষ ম্যাচে রান পেয়েছে। আবার একই সঙ্গে আমাদের এটাও বিবেচনা করতে হবে যে, একটা ব্যাটিং লাইনআপ ঠিক করা, এক ম্যাচের জন্য এর পরিবর্তন করা আবার তৃতীয় টেস্টের জন্য পরিবর্তন করা। আমি ছেলেদের টানা খেলার সুযোগ দিতে চাই, আবার আমাদের এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে, ভারতে মুশফিক ছিল আমাদের সেরা খেলোয়াড়।’

কোচের মুখে একথা শোনার পর গতকালই আন্তর্জাতিক এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় মুশফিক বলেছেন, ‘আমি সাকিব, তামিমের মতো ওত বড় প্লেয়ার নই। আমি নিজেকে সবসময়ই ছোটই ভাবি। আমি সবসময় যেটা বলি, আমি সবসময় ভাবি পরের সিরিজটা কি করে খেলব। তাই কোচের কথায় আমি বিরক্ত হইনি। আমার কাছে স্বাভাবিকই মনে হয়েছে।’

মুশফিকের মতো ক্রিকেটারকে নিয়ে নোংরামি আর যাই হোক এদেশের ক্রিকেটে সুখকর কোনো ফলাফল বয়ে আনবে না। একজন মুশফিক ১শ বছরে একজনই জন্মান। কথাটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ভাল করেই জানার কথা।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন