বিজ্ঞাপন

প্রভাতফেরির গানে শ্রদ্ধা ভাষাশহিদদের স্মৃতির মিনারে

February 21, 2020 | 2:47 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মায়ের মুখের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দেওয়া সেই বীরদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের আপামর মানুষ।

বিজ্ঞাপন

অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় আগে ভাষার জন্য রাজপথে রক্ত ঢেলে দিয়ে তারাই বাঙালির চেতনায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আর লাল-সবুজের পতাকার ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। সেই পথ ধরে লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে বাংলা। সেই ভাষা বাংলা এখন শুধু স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রভাষাই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও। বাঙালির চেতনায়-স্বত্ত্বায় অমর একুশে এখনও সমানভাবেই বহমান। এখনও একুশের ভোরে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গাইতে গাইতে নগ্ন পায়ে হাতে ফুল নিয়ে বাঙালি ছুটে যায় স্মৃতির মিনারে।

প্রতিবছরের মতো এবারও একুশের প্রভাতফেরিতে বন্দরনগরীর সব পথ এক হয়ে যেন মিশেছিল এক মোহনায়, চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। নারী-পুরুষ, শিশু, শ্রেণী-পেশা, রাজনীতি- নেই কোনো ভেদাভেদ। সবাই সারি বেঁধে গিয়েছিলেন শহিদ মিনারে। কারও কণ্ঠে একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। আবার কারও কন্ঠে স্লোগান। কারও হাতে ব্যানার, কেউ বা নিয়েছিলেন লাল-সবুজের পতাকা- ভাষার জন্য আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে পতাকা পেয়েছে বাঙালি।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোর শুরুর আগ থেকেই চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। একপর্যায়ে প্রভাতফেরীর দীর্ঘ সারি শহিদ মিনারের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা ছাড়িয়ে যায়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ায় শুধু বাংলাদেশি নন, চট্টগ্রামে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদেরও দেখা গেছে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারি হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জীও গিয়েছিলেন শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে। এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাতৃভাষার জন্য তরুণরা জীবন দিয়েছে, এটা বিরল ঘটনা। আমার এজন্য গর্ব হয় যে, আমি যে ভাষায় কথা বলি, সে ভাষার জন্য তরুণরা জীবন দিয়েছে। বাংলা আমার মাতৃভাষা, আমার গর্ব।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ, উত্তর-দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপি শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্রলীগ, ছাত্রদলও উপস্থিত ছিল শ্রদ্ধার মিছিলে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল নবী ও সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা এবং ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি আবু হানিফ ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলা যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, যুবমৈত্রী, ছাত্রমৈত্রীর নেতাকর্মীরাও শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

বিজ্ঞাপন

সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী, চট্টগ্রাম শহিদ মিনারে ফুল দেওয়ার পর অদূরে দাঁড়িয়ে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে। প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, বোধন আবৃত্তি পরিষদও শহিদ মিনারে ফুল দিয়েছে। চট্টগ্রামের সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নেতারা শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড.অনুপম সেন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থাপিত শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা ছিলেন। বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্টে ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দেন।

এদিকে সারাবাংলা’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন,শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিণ আখতার। আরও শ্রদ্ধা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি,অফিসার সমিতি,সকল অনুষদের ডিন, হলের প্রভোস্ট, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর, বিভাগীয় সভাপতি এবং ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, চবি অফিসার্স সমিতি, চবি মহিলা সংসদ, সমন্বয় কর্মকর্তা বিএনসিসি, চবি কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়ন, চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, চবি ছাত্রলীগ, চবি ছাত্র ইউনিয়ন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এর আগে সকাল সোয়া ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্ট থেকে প্রভাতফেরি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার গিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর উপাচার্য শিরিণ আখতারের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু চত্বরে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চত্বরের সামনে ‘ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চবি জাদুঘরের উদ্যোগে আয়াজিত সাতদিন ব্যাপী ‘দশ দশ বর্ণমালা ও একুশের সংকলন’ শীর্ষক প্রদর্শনীও উদ্বাধন করেন তিনি।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড অ্যানিমেল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রথম প্রহরে ক্যাম্পাসে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজ ক্যাম্পাসে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

এদিকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি কবিতা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজনে বন্দরনগরীতে মহান একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হচ্ছে।

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/জেএএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন