বিজ্ঞাপন

সেদিনের বীরত্বগাঁথা শোনালেন তামিম

May 3, 2020 | 1:53 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে থমকে আছে গোটা বিশ্ব। সেই সঙ্গে স্থগিত হয়ে আছে বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনও। বাংলাদেশের গত মার্চ মাস থেকে চলছে লকডাউন আর সেই সঙ্গে স্থবির জনজীবন। তাই তো সতীর্থ ক্রিকেটার বন্ধুদের সঙ্গেও দেখা মিলছে না টাইগার ক্রিকেটারদের। আর নিজেদের মধ্যে আড্ডা দেওয়ার জন্য তাই তো বেছে নিতে হলো ইনস্টাগ্রামকে। শনিবার রাত সাড়ে দশটার পর বাংলাদেশের অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম ইন্সটাগ্রামের লাইভে আড্ডা দিয়েছেন।  সেখানে তামিম ইকবালের আকছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বীরত্বগাথা সেই কাহিনী জানতে চান মুশফিক। আর জাতীয় দলের সতীর্থ বন্ধুকে সেই গল্প শোনান তামিম।

বিজ্ঞাপন

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এশিয়া কাপের ম্যাচে হাতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তামিমকে। এরপর ড্রেসিংরুম থেকে সোজা হাসপাতালে আর সেখান থেকে হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে ফেরেন। জেনে গেছেন শেষ তার এশিয়া কাপ খেলা। তবে দলের ব্যাটিং ব্যর্থতায় যখন স্কোরবোর্ডে বল বাকি থাকতেও উঠে আসতে হচ্ছিল বাংলাদেশ দলকে। তবে সেই মুহুর্তে হাজির তামিম ইকবাল, ব্যান্ডেজ প্যাঁচানো হাত নিয়ে নেমে পড়লেন মুশফিককে সঙ্গ দিতে। কিছুটা ব্যাকফুটে গিয়ে সুরাঙ্গা লাকমালের বলটি ঠেকালেন। তামিমের ওই এক বল খেলার কারণে, পরের ১৬ বলে মুশফিকুর রহিম তুলেছেন ৩২টি রান। তাতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শক্ত লক্ষ্য দাঁড় করাতে পেরেছিল বাংলাদেশ।

যদিও শতক হাঁকিয়ে দলে অবদান রাখার কারণে ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছিল মুশফিকের ঝুলিতে, তবে সেদিন বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের নায়ক ছিলেন তামিম। মাঠে লংকান বোলারদের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন মুশফিক তাই তো ড্রেসিং রুমের ঘটনা কিছুই জানতে পারেননি তিনি। সময় সুযোগের অভাবে সেটা জানাও হয়ে ওঠেনি মি. ডিপেন্ডেবলের। অবশেষে ইনস্টাগ্রাম লাইভে তামিম জানালেন সেদিনের ঘটনা, ‘আমি হাসপাতাল যাচ্ছিলাম আর মোবাইলে স্কোর দেখছিলাম। আমাদের দুই-তিনটা উইকেট খুব তাড়াতাড়ি পড়ে গেল। তোর আর মিঠুনের একটা দারুণ জুটি হলো। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে এ পরিস্থিতি ছিল। আমি যখন আবার ফেরত আসছিলাম তখন আবার একটা ধ্বস নামলো আমাদের ব্যাটিংয়ে। আবারো হুট করে দুই-তিনটা উইকেট পড়ে গেল। ব্যাটসম্যানরা সবাই আউট। ড্রেসিংরুমে ঢুকে দেখি ‍তুই ব্যাটিংয়ে। আর দলের স্কোর কোনোমতে এগিয়ে যাচ্ছে।’

হাসপাতাল থেকে হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে যখন ড্রেসিং রুমে ফিরলাম ঠিক তখনই মাশরাফি বিন মুর্ত্তজা তামিমকে বলেছিলেন, ‘ব্যাটিংয়ে যা!’ অধিনায়কের এমন কথা শুনে চোখ কপালে তামিমের। ‘সে সময় কথা বলতে বলতে মাশরাফি ভাই আবারও আমাকে বললেন যা ব্যাটিং কর। আমি শুরুতে ফাজলামো হিসেবে নিয়েছিলাম।’

বিজ্ঞাপন

তামিম তখনও বিষয়টা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। তবে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যাটিংয়ে নামবেন। ‘নামবো নাকি নামবো না- এটা নিয়ে আলোচনা করতে করতে দেখি তুই (মুশফিক) মারা শুরু করেছিস। একশ’র কাছাকাছি হয়ে গেছে তোর স্কোর। তখন আলোচনা গুরুতর হয়ে গেল। আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসলাম, যদি মুশফিক স্ট্রাইকে থাকে এবং ওভার বাকি থাকে, তাহলে ওভাবেই আমি ব্যাটিংয়ে যাবো। আমাকে ডাক্তার বলেছিল, ওটা নিয়ে দৌড়ানো যাবে না। কারণ মাত্রই হাত ভেঙেছিল। রিপ্লেসমেন্টের ব্যাপার আছে। দুর্ভাগ্যবশত চার বা পাঁচ নম্বর (পাঁচ নম্বর) বলে মুস্তাফিজ আউট হয়ে গেল।’

এরপর তামিম জানালেন, ‘আমাদের সবার জীবনে এমন একটা সময় আসে, যখন পাগলামি ভর করে। হয়তো বা তুই নিজেও জানিস না যে, তুই কী করতে যাচ্ছিস। ওই পাঁচ সেকেন্ড আমার ওটাই হয়েছিল। আমি ব্যাট নিয়ে হাঁটা শুরু করেছিলাম। আমাদের কোচ স্টিভ রোডস পেছন থেকে দৌড়ে এসেছিল। আমাকে থামিয়ে বলে, ‘তুমি কী করতে যাচ্ছো? আমি বললাম, ‘আমি যাই।’ ও আমায় আবার বলল, ‘এটা তো পরিকল্পনা ছিলো না।’ আমি বললাম, ‘আমি ম্যানেজ করতে পারবো।’ তখন ও আমাকে আমার দায়িত্বে যেতে বললো।’

ব্যাটিংয়ে নামার সময় একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন বলে জানালেন তামিম। সে সময় এতটাই ঘোরের মধ্যে ছিলেন যে ভুলে গিয়েছিলেন মুশফিকের রান সংখ্যাটা কত। তবে তামিম পেরেছিলেন। মুশফিকের ১৪৪ রানে শেষ পর্যন্ত ২৬১ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পরে শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে যায় মাত্র ১২৪ রানেই। এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন