বিজ্ঞাপন

ঘূর্ণিঝড়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন

May 19, 2020 | 6:53 pm

সাইদুল করিম মিন্টু

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে নতুন নয়৷ ইতিহাস বিবেচনা করলে বহুবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ৷ প্রাণহানি হয়েছে অনেক৷ তবে দুর্যোগ মোকাবিলা করে ঘুরেও দাঁড়িয়েছে মানুষ৷

বিজ্ঞাপন

তবে এইবার মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যেই এক যুগ আগের প্রলয়ঙ্করী অগ্নিচক্ষু সিডরের মতো ভয়াল শক্তিতে ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’। অবিশ্বাস্য গতিতে ধাবমান বিধ্বংসী ক্ষমতার সাইক্লোনটির মুখ ও স্থলভাগে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশের সুন্দরবন। আজ মঙ্গলবার শেষ রাত কিংবা আগামীকাল বুধবার সকাল নাগাদ আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে।

এরমধ্যে দেশের ১৪টি জেলা এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। জেলাগুলো হলো— সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম। বুলেটিনে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

২১ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উপকূলের দিকে ধেয়ে আসার প্রেক্ষাপটে ৫১ লাখ ৯০ হাজার মানুষের জন্য ১২ হাজার ৭৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে আম্ফান মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রয়োজন সচেতনতা এবং পূর্ব প্রস্তুতি। আতঙ্কিত না হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের আগে-পরে এবং ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় কিছু কাজ করা এবং কিছু বর্জন করা উচিত।

ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে করণীয়-

১. অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়া: যে কোনো গুজবে বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে পোস্ট দেখে আতঙ্কিত না হয়ে টেলিভিশন অথবা এফএম রেডিওতে খবর শুনুন। রেডিও, অনলাইন এবং টেলিভিশনে ভেরিফায়েড নিউজ পাবেন। বিপদে শান্ত থেকে সমাধানের চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

বিজ্ঞাপন

২. ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ সচল রাখা: পাওয়ার ব্যাংক, চার্জার লাইট, টর্চ লাইটে চার্জ ফুল রাখুন। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আইলার জন্য ১ দিনের বেশি বিদ্যুৎ, গ্যাস, মোবাইল ফোনের সার্ভিস পাওয়া যায়নি। শহরে আছি বলে কিছু হবে না, এমন মনে করা বোকামি। ব্যাকআপ হিসেবে মোমবাতি এবং লাইটার রাখা ভালো। তবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আগুন সব সময়ই লাস্ট অপশন।

৩. ফার্স্ট এইড বক্স: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ডায়রিয়া, জ্বরের জন্য স্যালাইন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহে রাখুন।

৪. নিরাপদ আশ্রয়: বাসা টিনশেড হলে বা নিচ তলায় হলে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস ওয়াটারপ্রুফ বক্সে টেপ এবং পলিথিন পেঁচিয়ে রাখুন। ফ্লোরে মাল্টিপ্লাগ রাখবেন না।

৫. শুকনো খাবার: নিরাপত্তার জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন লাইন বন্ধ থাকতে পারে। রাস্তা বন্ধ থাকতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার সংগ্রহে রাখুন।

বিজ্ঞাপন

৬. ফুলের টব, নির্মাণ সামগ্রী নিরাপদ স্থানে রাখুন: ফুলের টব নিরাপদ স্থানে রাখুন। খোলা জায়গায় নির্মাণ সামগ্রী রাখবেন না। বাসার পাশে নির্মাণাধীন ভবন থাকলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।

ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে করণীয়-

১. রাস্তায় থাকলে শপিং মল, মসজিদ, স্কুল বা যেকোনো পাকা ইমারতে আশ্রয় নিন। কোনোভাবেই খোলা আকাশের নিচে থাকা যাবে না।

২. রাস্তায় যানজটে পড়লে গাড়ির পাশে জায়গা রেখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন যেন বিপদের মুহূর্তে দরজা খোলা যায়।

৩. বাড়ির বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের মেইন লাইন বন্ধ করে দিন।

৪. দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন যাতে বাইরে থেকে ময়লা বা ভারী কিছু উড়ে এসে আঘাত করতে না পারে।

৫. টিনশেড বাসা হলে বা নিচু জায়গায় হলে নিরাপদ কোথাও আশ্রয় নিন।

৬. ইন্টারনেট ব্যবহার না করে ফোনে রেডিও শুনতে হবে। ডাটা কানেকশন অন রেখে ফেসবুক স্ক্রল করলে ব্যাটারিও দ্রুত শেষ হবে, নেটওয়ার্কও বেশি ব্যস্ত থাকবে।

৭. কোনোভাবেই ট্যাপের পানি সরাসরি খাওয়া যাবে না। ফুটিয়ে বা ভালো ফিল্টার ব্যবহার করতে হবে।

৮. খুব বেশি জরুরি না হলে রাস্তায় বের হওয়া নিরাপদ নয়।

৯. কল করে নেটওয়ার্ক বিজি না রেখে এসএমএস ব্যবহার করে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করুন। ডাটা কানেকশন অফ রাখুন।

সর্বোপরি উদার হওয়ার চেষ্টা করুন। বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করার সুযোগ থাকলে সাহায্য করুন। নিজে উপরতলায় থাকলে নিচতলার বসবাসকারীদের দিকে খেয়াল রাখুন। বাসার পাশের টিনশেডের বসবাসকারীদের আশ্রয় দিন।

ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পরে করণীয়-

১. ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে প্রবেশ করবেন না।

২. যত দ্রুত সম্ভব সুরক্ষিত স্থানে চলে যান।

৩. ছিঁড়ে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে হাত দেবেন না।

এই ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে থাকুন। আর সচেতন হোন। বাংলাদেশ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন মোকাবিলায় রোল মডেল হয়েছে। আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ মোকাবিলা করে ঘুরে দাড়াবে। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তাই চিন্তিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করুন। সবাই সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন