বিজ্ঞাপন

৩ টুকরো লাশ: বন্ধুত্বই কাল হলো হাফেজ হেলালের

June 23, 2020 | 8:30 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কোরআনের হাফেজ ছিলেন হেলাল। স্টেশনারি পণ্যের দোকান ছিল তার। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য খাতা-কলম ও স্টেশনারি পণ্যের পাশাপাশি বিক্রি করতেন খেলনা, মোবাইলেরি সিম। ফ্লেক্সিলোড সুবিধাও ছিল। ওই দোকানেই আড্ডা দিতেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বন্ধু চার্লস রুপম সরকার। হেলালকে কখনো কোনো কাজে বাইরে থাকতে হলে দোকানে বেচাবিক্রিও করেছেন রুপম। তাতে যতটুকু বিক্রি করেছে, তাতে তার ধারণা চিল দোকানে লাভের পরিমাণ খুব একটা কম নয়। আর তাতেই লোভে পড়ে যান রুপম। স্ত্রী মনি সরকার আর শ্বাশুড়ি রাশেদা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে হেলালকে খুন করার পরিকল্পনা করেন। হেলাল ঘুণাক্ষরেও বুঝতেও পারেননি, যে বন্ধুর ওপর ভরসা করে দোকান ছেড়ে দিয়ে যেতেন, সেই বন্ধুই কি না তার কাল হয়ে দাঁড়াবে!

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর দক্ষিণখানে চাঞ্চল্যকর হেলাল হত্যা মামলার মূল হোতা রুপমকে গ্রেফতারের পর সাংবাদিকদের সামনে এসব তথ্য তুলে ধরেন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা। রোববার (২১ জুন) সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার (২২ জুন) দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি উত্তর) পক্ষ থেকে ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়।

আরও পড়ুন- ‘মা-মেয়ে ও জামাই মিলে হত্যা করে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী হেলালকে’

ব্রিফিংয়ে ডিবি উত্তরের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, মোটা অঙ্কের টাকার লোভে কৌশলে ডেকে খুন করা হয় হেলালকে। কিন্তু তার কাছ থেকে পাওয়া যায় মাত্র ৪৩ হাজার টাকা। পরে লাশ গুমের জন্য নৃশংসভাবে কয়েক টুকরো করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মশিউর রহমান বলেন, রোববার সন্ধ্যায় গাবতলী বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম রুপমকে গ্রেফতার করে। ঢাকা ও বগুড়ায় আত্মগোপনে থাকার পরে বরিশালে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। রুপম সরকারকে নিয়ে দক্ষিণখান থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো সুইচগিয়ার চাকু ও ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

রুপম ডিবি পুলিশকে জানিয়েছেন, দক্ষিণখান এলাকায় ফ্লেক্সিলোড, মোবাইল কার্ড বিক্রির ব্যবসার সূত্র ধরেই বাংলালিংকের সেলস এজেন্ট হিসেবে কর্মরত চার্লস রুপম সরকারের সঙ্গে পরিচয় হয় হেলালের। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে হয় ঘনিষ্ঠতা। একপর্যায়ে পুরোনো ফটোস্ট্যাট মেশিন বিক্রির কথা বলে গত ১৪ জুন কোরআনে হাফেজ হেলালকে বাসায় ডেকে এনে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্ত্রীর সহায়তায় শ্বাসরোধে হত্যা করেন রুপম।

বিজ্ঞাপন

রুপম জানান, খুনের পর হেলালের পকেটে মাত্র ২৫৩ টাকা পাওয়া যায়। পরে হেলালের ব্যবহৃত বিক্যাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে স্ত্রী মনি সরকারকে টাকা তুলতে পাঠানো হয়। মোট ৪৩ হাজার টাকা তুলে এলে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে স্ত্রীকে শাশুড়ির রাশেদা আক্তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর তখনই  মৃত হেলালের লাশটিকে তুলে বাথরুমে নিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে চামড়া ও মাংস কেটে হাতে চাপ দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় ঘাড়ের হাড়। একইভাবে কোমরের চামড়া ও মাংস কেটে হাত দিয়ে চাপ দিয়ে মেরুদণ্ডও বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। মায়ের কাছে ৩০ হাজার টাকা জমা রেখে মনি সরকার বাসায় চলে এলে স্বামী-স্ত্রী মিলে খণ্ডিত দেহের বাকি অংশগুলো তিন ভাগ করে রাখেন। পরদিন সেগুলো আলাদা আলাদা জায়গায় ফেলে আসেন।

মশিউর রহমান বলেন, আর্থিক লেনদেন বা দোকানে কাউকে বসানোর আগে অনেক কিছু ভেবে নেওয়া উচিত। কারও সম্পর্কে খুব ভালো করে কিছু না জেনে দোকানে বসতে দেওয়া উচিত নয়। হাফেজ হেলালের ঘটনা আমাদের এই শিক্ষাই দেয়।

এর আগে গত ১৫ জুন উত্তরার দক্ষিণখান ও বিমানবন্দর থানা এলাকায় এক অজ্ঞাত যুবকের খণ্ডিত মাথা ও কোমর থেকে পায়ের অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। ফিঙ্গার ইম্প্রেশনের মাধ্যমেই হেলালের পরিচয় ওই দিনই নিশ্চিত হওয়া যায়। হত্যা রহস্য উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তর বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম ১৮ জুন খুনি রুপমের স্ত্রী শাহিনা আক্তার ওরফে মনি সরকার ও শাশুড়ি রাশেদা আক্তারকে আটক করে। তাদের দেওয়া তথ্য এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ডিবি পুলিশ দক্ষিণখানের গাওয়াইর এলাকার একটি ডোবা সংলগ্ন ডাস্টবিন থেকে হেলালের খণ্ডিত মস্তক উদ্ধার করে।

স্ত্রী মনি সরকার ও শ্বাশুড়ি রাশেদাকে গ্রেফতারের পর গত শুক্রবার (১৯ জুন) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে সোমবার (২২ জুন) রুপম সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন