বিজ্ঞাপন

নারী দিবসঃ নারীর সংগ্রাম এবং মুক্তির ইতিহাস

March 8, 2018 | 10:28 am

মারজিয়া প্রভা ।।

বিজ্ঞাপন

১৯০৮ সালের ৮ই মার্চ। ছিমছাম এক সকালে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় বের হয়ে এলো পনেরো হাজার নারীকর্মী, যাদের মধ্যে ছিল অনেক অভিবাসীরাও। নিউ ইয়র্কের পূর্ব পাশের রাস্তায় তারা মার্চ করতে লাগল। উচ্চকিত হতে লাগল তাদের গলার স্বর। এত দিনের ক্ষোভ যেন উগরে বের হতে লাগল। একই গার্মেন্টসে পুরুষের চাইতে বেশি ঘণ্টা কাজ করেও তাদের বেতন কম। যাচ্ছেতাই পরিবেশ, নেই কোন স্যানিটেশনের সুবিধা। শুধুমাত্র লৈঙ্গিক কারণে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে কম মজুরির কাজগুলো। দক্ষতার কাজগুলো করার অধিকার কেবল পুরুষদের। তাই পুরুষদের বেতন বেশি, কাজের সুযোগ বেশি। দিনের পর দিন এই শোষণ আর অবিচার মানতে পারছিল না তারা। অবশেষে তারা বেরিয়ে এলো মুক্তির আশায়।

এখন ২০১৮ সাল। প্রায় ১১০ বছর পরে প্রশ্ন থেকে যায়, সেদিনের সেই নারীমুক্তি মিলেছে কি না! বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রই অবশ্য মেনে নিয়েছে ‘কাজের কখনো জেন্ডার হয়না’। কিন্তু নারী হিসেবে এখনো কি নারী বঞ্চনার শিকার হয়না? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই আবার চলে এলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারা বিশ্ব মহাসমারোহে এই দিনটিকে বরণ করে নেবার জন্য প্রস্তুত। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘Press For Progress’।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের নারী এবং শিশু মন্ত্রানালয় থেকে এবারের নারী দিবসের জন্য প্রতিপাদ্য বিষয় রাখা হয়েছে,

‘সময় এখন নারীর” উন্নয়নে তারা

বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরে কর্ম জীবন ধারা’

বিজ্ঞাপন

গত কয়েকবছর ধরে আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষও পালন করছে এই দিনটিকে। গত দশকেও  এই বিপুল আয়োজন কিন্তু দেখা যায়নি। এখন বাংলাদেশের মানুষের উৎসবমুখর জীবনে নারী দিবস আরেকটি নতুন সংযোজন।

নারী দিবসের ইতিহাস

১৯০৮ সালে নিউইয়র্কে নারীকর্মীদের ওই ধর্মঘটের পর ১৯০৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখে আমেরিকান সোশালিস্ট পার্টি নিউইয়র্কে প্রথম ‘ন্যাশনাল উইমেন’স ডে’ পালন করে। বিভিন্ন সূত্রমতে জানা যায়, ১৯০৮ সালে নারীকর্মীদের স্ট্রাইকের আগেও ১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ, সুতা কারখানার নারীকর্মীরা হরতাল পালন করে। তবে বেশকিছু সূত্র ১৮৫৭ সালের ওই ঘটনাকে ‘মিথ’ হিসেবে অভিহিত করে। এমনকি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন’স ডে’র অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও ১৮৫৭ সালের ওই স্ট্রাইকের কোন ঘটনা উল্লেখ নেই।

তাই বলা হয়ে থাকে নিউইয়র্কের রাস্তায় নারীদের প্রথম বিপ্লব ছিল ১৯০৮ সালেই। বরং প্রথম ‘ন্যাশনাল উইমেন’স ডে’ পালন করার বছরেই আবার নারীকর্মীরা হরতাল পালন করে। ব্লাউজ তৈরির কারখানায় ১৯০৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯১০ সালের জানুয়ারি অবধি টানা তিনমাসের ধর্মঘট চালায় বিশ হাজার নারীকর্মী। যাদের নেতৃত্ব দেন ক্লারা লেমলিখ। এই ধর্মঘটটি ইতিহাসের পাতায় ‘Uprising 20,000’ হিসেবে পরিচিত।

বিজ্ঞাপন

১৯১০ সালের আগস্ট মাসেই, কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই নারী সম্মেলন আয়োজন করার পুরো কৃতিত্ব সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনালদের (যারা ১ মে কে বিশ্ব শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল)। এই সম্মেলনেই জার্মান সোশ্যালিস্ট লুইস জিজ ‘নারীদের জন্য একটি বিশেষ দিন’ পালনের প্রস্তাব দেন। উপস্থিত বিভিন্ন সোশালিস্ট এবং কমিউনিস্ট নেতাকর্মীরা তার এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানান। কিন্তু বছরের কোন দিনটি সেই বিশেষ দিন হবে তা নিয়ে সেদিন কোন আলোচনা হয়নি।

সেই সম্মেলনে উপস্থিত ১৭টি দেশের ১০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি এই প্রস্তাবনা লুফে নেন। কারণ, তখনো নারীরা ভোট দেবার অধিকারপ্রাপ্ত হয়নি। সেইজন্য তারা মনে করেছিল, ভোটাধিকার পাওয়ার আন্দোলনে এই বিশেষ একটি দিন অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। আর তাই পরের বছরেই ১১ মার্চ অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম নারী দিবসে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল।

পালনের ধারা

১৯১৪ সালে প্রথমবারের মতো নারী দিবস পালিত হয় ৮ই মার্চ। এর একটা কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে, সে বছর ৮ই মার্চ ছিল রোববার মানে ছুটির দিন এবং ওই দিনে কোন মিছিল বা মার্চ ছিল না।

তবে পাশাপাশি ১৯১৪ সালে ৮ই মার্চ “রুশ বিপ্লব” এর জন্য একটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা দিন। এইদিন রাশিয়ার নারী টেক্সটাইল কর্মীরা পুরো শহরজুড়ে ধর্মঘট পালন করে। আর এইটিই ছিল রুশ বিপ্লবের সূচনা।

সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ব নারী দিবস কোন ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত হয়নি। ১৯৬৫ সালে প্রথমবারের মত ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত হয় এই দিনটি। চায়নাতে ১৯৪৯ সালে এই দিনটি নারীদের জন্য অর্ধদিবস ছুটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

কেবলমাত্র কমিউনিস্ট দেশগুলোতে মহাসমারোহে এই দিন পালিত হলেও, ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে। ১৯৭৭ সালে এই দিনটি জাতিসংঘের নারীর অধিকার এবং বিশ্ব শান্তি দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।

১৯৯৬ সাল থেকে জাতিসংঘ নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয় তুলে ধরে এই দিনটির জন্য। যেন ওই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়। সারাবিশ্বের মানুষ সচেতন হয়। জাতিসংঘের নির্ধারিত প্রথম প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ‘Celebrating the Past, Planning for Future’।

কেন দরকার আন্তর্জাতিক নারী দিবস?

সভ্যতা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এই সভ্যতার বেদীমূলে ছিল নারীর রক্তঝরা অবদান। আমেরিকান শিক্ষাবিদ ম্যারি ম্যাকলড বেথুন বলেছেন, ‘সময়ের পরিক্রমায় যে উজ্জ্বল উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছি আমরা, তাতে সিংহভাগ দাবিদার নারীরা। নারী হচ্ছে সেই শক্তি, যা সৃষ্টি করে, পালন করে এবং সময়ের বদল ঘটায়। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতি চিরকাল দমন করে রাখতে চেয়েছে এই শক্তিকে। সামন্ত ব্যবস্থায় নারীকে ঘরবন্দী করেছে। বাইরের কাজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা কে করবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার থেকেও বঞ্চিত করেছে।’ আর সেই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নারীরা নেমে এসেছে উনিশ শতকে। তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেবল একটি সাধারণ দিবস নয়! বরং এই দিবস নারীর অধিকার আদায়ের দিবস। নারীমুক্তি স্বপ্ন দেখার দিবস।

নারীদিবসের শুরু হয়েছিল শ্রমজীবী নারীর আন্দোলন থেকে যেখানে একজন নারী কেবল লৈঙ্গিক কারণে মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়। তাই নারীদিবস লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।

এখনো নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে প্রতিদিন। RAINN এর সমীক্ষা অনুযায়ী, আমেরিকায় প্রতি ছয়জন নারীর একজন জীবদ্দশায় ধর্ষণের শিকার হয়। নারীর ক্ষমতায়নের এক বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সহিংসতা।

এই সহিংসতা নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে এবং মূল্যবোধ তৈরির লক্ষ্যেই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তা এখনো বিদ্যমান।

নারীবাদের চোখে নারীদিবস

এই যে বিপুলসমারোহে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক এই নারীদিবস’! নারীবাদের চোখে এই পালনের সার্থকতা কতটুকু। এই জটিল আলোচনা নিয়ে বসেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ উম্মে বুশরা ফাতেহা সুলতানার সাথে। পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে দেওয়া হলো সারাবাংলার পাঠকের কাছে।

প্রঃ নারীবাদের চোখে এই একদিনের আয়োজিত নারী দিবস কতটুকু সার্থক? নারিদিবস কি এখন পুঁজিবাদের হাতিয়ার?

উম্মে বুশরাঃ নারীবাদ বিষয়টি বৈচিত্র্যময়। এর অনেকগুলো ওয়েভ (তরঙ্গ) আছে, স্কুল অব থট আছে। তাই একদিনের আন্তর্জাতিক নারীদিবস আসলেই কতটুকু সার্থক এই সিদ্ধান্তে আসাটা খুব সোজাসাপ্টা বিষয় নয়। আমরা যদি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস দেখি, তাহলে জানতে পারি এর শুরুটা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধেই ছিল। তবে এখনকার প্রেক্ষাপটে যদি বলি, নারীদিবস উদযাপনের বিষয়টিতে পুঁজিবাদের সম্পৃক্ততা দেখা যায়। আসলে সারা বিশ্বেই পুঁজিবাদকে এখন আলাদা রাখা যাচ্ছে না। পুঁজিবাদ  নারীবাদি ইস্যুকেই ব্যবহার করার চেষ্টা করে ।
এখন ৮ই মার্চ নারীদিবসকে কেন্দ্র করে  বিভিন্ন ব্যবহৃত পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা’, ‘নারী এগিয়ে যাক’, ‘নারীর ক্ষমতায়ন হোক’ ইত্যাদি শ্লোগানের অন্তরালে আসলে ভোক্তাকে পণ্যের প্রতি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়।  পুঁজিবাদের এই সম্পৃক্ততা আছে বলেই যে আমরা নারী দিবসকে পালন করব না, নেতিবাচকভাবে দেখব – আমি মনে করি না এরকমটা হওয়া উচিত।  তবে আমাদের একধরণের সচেতনতা থাকা উচিত এই দিবসটিকে নিয়ে; যেন এটি পুঁজিবাদের ফাঁদে না পড়ে।  এই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য কিন্তু নারীমুক্তিই। আমরা কতটুকু সেই উদ্দেশ্য অর্জন করতে পেরেছি  সেদিকে ফোকাস করা উচিত। নারীর অবদান কি, নারীর প্রতি শোষণের মাত্রা কমেছে না বেড়েছে, সারা বছরে নারীর উপর কি সহিংসতা চলেছে, আইনের অবস্থা কী- এইসবকিছু ফিরে দেখার সুযোগ হতে পারে আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি। অন্তত সপ্তাহখানেক হলেও নারী দিবসকে কেন্দ্র করে এই বিষয়গুলো নিয়ে চারপাশে সচেতনতা দেখা যায়।  তাই আমার মনে হয় এরকম একটা উদ্যোগ থাকা উচিত।

প্রঃ নারীদিবস মাস পিপলের কাছে  গ্রহণযোগ্য হলেও ‘নারীবাদ’ কেন গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে না?

উম্মে বুশরাঃ নারীবাদ ধারণাটি কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের। আমাদের এইখানে নারীমুক্তি নিয়ে কাজ, আন্দোলন বহু আগের থেকেই শুরু হয়েছে। আপনি রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বেগম রোকেয়ার কথা যদি চিন্তা করেন। সে ক্ষেত্রে নারীবাদের গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু এখানে আছে, কিন্তু একটু ভিন্নভাবে।  অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বে নারীমুক্তির এই কাজগুলো নারীবাদ বা ফেমিনিজম প্রচেষ্টা  হিসেবে শুরু হয়েছিল।  সেই খোদ পশ্চিমা বিশ্বেই যেখানে নারীবাদ এর উৎপত্তি সেখানেও কিন্তু একে নেতিবাচক হিসেবেই দেখা হয়। আমি মনে করি একটা মিসোজিনি (নারী বিদ্বেষ) কাজ করে এসবক্ষেত্রে। একটা ভীতি, ‘এতো সচেতনতা, নারীবাদ, এমনকি নারীর জন্য একটি দিবসও পালন করা- এরমধ্যে দিয়ে কি আসলে নারীরা সচেতন হয়ে যাচ্ছে না? তাহলে কি তাকে আর আগের মতো শোষণ করা যাবে?’ নারীকে দমিয়ে রাখার প্রবণতা থেকেই ভীতির সৃষ্টি যে, নারী সচেতন হলে তাকে আর দমন করা সম্ভব হবে না! এই নারীবিদ্বেষই কিন্তু একটা বড় কারণ নারীবাদকে গ্রহণ না করার ক্ষেত্রে।

আগেই বলেছি, নারীবাদের কিন্তু অনেকগুলো স্কুল অব থট আছে । উদারপন্থী থেকে শুরু করে উগ্রপন্থী নারীবাদ,  উত্তরাধুনিক নারীবাদ, সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ, পরিবেশবাদী নারীবাদ প্রভৃতি। নারীবাদের এটি একটি মাধুর্যপূর্ণ  দিক হচ্ছে প্রত্যেকটি নারীবাদের লক্ষ্য একটি। শোষণ থেকে মুক্তি।  তবে মানুষ তো আসলে বড়ধরণের পরিবর্তন পছন্দ করে না, তাই মুক্তি যে নারীর মৌলিক অধিকার, এটা দেবার কিছু নয়, বরঞ্চ নারীর এটা প্রাপ্য তা পিতৃতন্ত্র মেনে নিতে পারেনা। তবে আশার বিষয় হলো, সমাজ একদিন নারীশিক্ষা গ্রহণ বা বিধবা বিবাহের প্রতিও খড়গহস্ত ছিল। তাই নারীবাদের লক্ষ্য নারীমুক্তিও একদিন সম্ভব হবে। সেদিন দূরে নয়।

প্রঃ নারীবাদকে একদম সব মতামতের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে চাইলে কি করা উচিত?

উম্মে বুশরাঃ নারীবাদ কিন্তু অলরেডি গ্রহণযোগ্য! নারীবাদের একটি প্রচেষ্টা কিন্তু ছিল নারীকে ক্ষমতায়িত করা।  আমাদের চারপাশে যদি দেখি, প্রচুর মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে, শিক্ষিত হচ্ছে। নিজের বাল্যবিয়ের প্রতিবাদ নিজেই করছে।  নারীরা উদ্যোক্তা হচ্ছে। তারা ঋণ নিচ্ছে, বাইরে যাচ্ছে। অনেক দোকানপাটের মধ্যে একজন নারীও একটি চায়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা করছে। একাডেমিকেলি নারীবাদকে সবার কাছে নিয়ে যাওয়া- এভাবে জিনিসটাকে দেখলে মনে হয় অনেক কঠিন। অন্যদিকে একটা আদর্শগত দিক থেকে যদি আমরা বুঝতে চাই যে নারীবাদের উদ্দেশ্যগুলো কি কি ছিল, তবে কিন্তু আমরা দেখতে পারব নারীবাদ পৌঁছে গেছে সকলের মাঝে।  এই যে গৃহনির্যাতনের কথা যদি বলি, স্বামী স্ত্রীকে প্রহার করবে এটি যে অপরাধ এই নিয়ে কিন্তু মানুষ সচেতন হচ্ছে। বিজ্ঞাপন বানানো হচ্ছে। আমার নিজস্ব গবেষণাতে দেখেছি, একসময় নারীরা ভাবত, ‘স্ত্রী বিপথে গেলে স্বামী তাকে প্রহার করতে পারে, এটা স্বামীর অধিকারের মধ্যে পড়ে’ এই বিশ্বাসটা কিন্তু ভেঙ্গেছে নারীর মধ্যে থেকে। নারী নিজেই সচেতন হচ্ছে এখন। তাই আমি বলতে পারি, নারীবাদ কিন্তু পৌঁছে গেছে।

প্রঃ নারীবাদের মূল লক্ষ্য জেন্ডার সমতা যদি হয় তবে নারীদিবসে অন্য জেন্ডারকে (ট্রান্সজেডার, থার্ডজেন্ডার প্রভৃতি) তাদেরকে ফোকাস করা উচিত কি না বা তাদের জন্য আলাদা দিবসের দরকার আছে কি না?

উম্মে বুশরাঃ  আমি মনে করি, জেন্ডার এবং নারীবাদ আলাদা কিছু না। নারীবাদকে জেন্ডার সমতা অর্জনের একটি মাধ্যম বা দিকনির্দেশনা বলা চলে। ট্রান্সজেন্ডারসহ অন্যান্য  শ্রেণিগত, জাতিগত, ধর্ম, বর্ণগত বৈষম্য নিয়ে যে আন্দোলন সেটাও জেন্ডার আন্দোলনের অংশ। নারী দিবসের শুরুটা হয়েছিল শ্রমজীবী নারীর হাত ধরেই। শ্রমিক এমনিতেই নানা শোষণ বঞ্চনার শিকার। অন্যদিকে নারী শ্রমিক নারী হবার কারণে আরও বেশি শোষণের শিকার। এই জেন্ডার বৈষম্যকেই নারী দিবসে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাই নারীদিবস থাকাটা সময়ের দাবী।

শুভ হোক আন্তর্জাতিক নারী দিবস- ২০১৮।

ছবি- সংগৃহীত

সারাবাংলা/আরএফ 

আরও পড়ুন

অর্থ? সুযোগ-সুবিধা? ক্রিকেটটা যে মেয়েদের!

অধিকার আদায়ে নারীদের বসে থাকলে হবে না: প্রধানমন্ত্রী

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন