বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পুঁজিবাদের ভূত ঢুকেছে— ডা. জাফরুল্লাহ

July 25, 2020 | 5:41 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ‘পুঁজিবাদের ভূত’ প্রবেশ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শনিবার (২৫ জুলাই) গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য কনভেনশন-২০২০’-এর উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে করোনার বিস্তার সাধারণ বিষয় নয়। এটা ‍মূলত পুঁজিবাদ এবং সমাজতন্ত্রের মধ্যে সংগ্রাম। আজকে সমাজতন্ত্র বেঁচে থাকবে কি না এবং সমাজতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার একটা প্রমাণপত্র হচ্ছে এই করোনা সংকট। যেভাবে আমাদের দেশে এ রোগের বিস্তার হচ্ছে, তার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রান্তটাও মনে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি চীন একটা ভ্যাকসিন ট্রায়াল করতে চেয়েছিল বাংলাদেশে। তারা অনুমতিও পেয়েছিল। বাংলাদেশে যেকোনো গবেষণার অনুমতি দেওয়ার মালিক বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। তাদের অনুমতিক্রমে আইসিডিডিআরবি গবেষণাটা করতে চেয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। এটা থেকে প্রমাণ হয়, কী রকম চক্রান্তের ফাঁদে আমরা জড়িয়ে পড়ছি। এখানে বিভিন্নভাবে দালালরা অনুপ্রবেশ করছে।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আইসিডিডিআরবি অতীতে ইউরোপীয় কোম্পানির ভ্যাকসিন গবেষণা করেছে। তখন তো আপত্তি ওঠেনি। আজকে আপত্তিটা কেন? কেননা এখানে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। এখানে জনগণের স্বাস্থ্যের ব্যাপার আছে।’

বিজ্ঞাপন

‘এখানেই চক্রান্তটা উপলব্ধি করা প্রয়োজন। আজকে পুঁজিবাদ চাইছে তৃতীয় বিশ্বকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে, যাতে আমাদের অধিকারটা কাগজে কলমে থাকে। আমরা নিজেদের বিষয়টা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করি না’— বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘একটা ভ্যাকসিন রিসার্চ হবে। তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এত মাথা ব্যথা কেন? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ভূত প্রবেশ করেছে, চক্রান্তকারীরা প্রবেশ করেছে। ঠিক যেভাবে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানিসহ পুঁজিবাদীরা তৃতীয় বিশ্বের কণ্ঠস্বর বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, সেভাবেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া সুযোগ স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের পুঁজিপতিরা বন্ধ করে দিতে চায়।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে এই ভ্যাকসিন ট্রায়াল যদি সফল হয়, তাহলে এখান বিরাট অর্থ সাশ্রয় হবে। আমরা জানি ভ্যাকসিন গবেষণা সময় সাপেক্ষ। অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু গবেষণার সুফলে উৎপাদন মূল্য খুবই কম। চীনের এই গবেষণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া প্রয়োজন। এতে যদি আমরা সফল হই, তাহলে চীনের সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি হতে পারে। এই সফলতার ৫০ শতাংশ মালিক হবে বাংলাদেশের জনগণ।’

বিজ্ঞাপন

সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গোটা সংকটটা স্পষ্ট। এখানে নতুন করে কিছু বলার নেই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই সংকট আগেই বোঝা গিয়েছিল। যদিও বার বার বলা হচ্ছিল, সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল যে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বড়ধরনের সাফল্য আছে। অবশ্যই কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য আছে। তবে জনস্বাস্থ্য বা এ রকম প্যানডামিক মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা যে বাংলাদেশের ছিল না, এখন এটা খুব স্পষ্ট।’

তিনি বলেন, ‘সংকটটার দীর্ঘ মেয়াদি দিক বিবেচনা করা দরকার। আলোচনা করা দরকার এর ভেতর থেকে বের হওয়ার দিকটা নিয়ে। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংকটটা এখানেই যে, একটা অবকাঠামো বাংলাদেশে আছে। আমরা যদি ভালো করে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব কয়েক দশক ধরে এক ধরনের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। যেমন— উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে, এনজিও আছে, পল্লী চিকিৎসকরা আছেন, গ্রাম স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন। তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এ পর্যায়ে যাচ্ছে কেন? সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না কেন? মূলত, এই অবকাঠামোগুলোকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মতো করে তৈরি করা হয়নি। বাড়ি-ঘর তৈরি করা হয়েছে, লোক কিছু নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মী নেই, উপকরণ নেই। সে কারণেই করোনা সংকট মোকাবিলায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজমুদার, ডা. মোজাহেরুল হক, ডা. বে-নজীর আহমেদ, ডা. সাহেদুর রহমান খসরু, ড. নাসির উদ্দিন, অধ্যাপক সাদাফ নূর ও ডা. তৌফিক জোয়ার্দার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের ফিরোজ আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন