বিজ্ঞাপন

বমি-মাথা ব্যথা নিয়ে কাতরাচ্ছে শিশুরা, ডাক্তার জানেন না রোগ

April 27, 2024 | 11:13 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে এমনিতেই গরমে হাঁসফাঁস। তার ওপর শুক্রবার ছিল সরকারি ছুটির দিন। যে কারণে হাসপাতালে দায়িত্বশীল তেমন কেউ ছিল না। কিন্তু রোগীর কমতি ছিল না এদিনও। একের একের পর এক রোগী আসছে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। ডিউটি ডাক্তার তাদের দেখে বেশিরভাগকেই ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু পর্যাপ্ত সিট খালি না থাকায় বিপাকে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। ফলে কেউ রোগীকে বাইরে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করছেন, আবার কেউ এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াচ্ছেন। কেউ আবার সিট না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দাতেই বাচ্চার চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। সরেজমিনে দেখা যায়, গরমে অস্থির শিশু রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতাল জুড়ে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় এবং আগুনে আইসিইউ পুড়ে যাওয়ায় রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে নয় বছরের শিশু মাহিম হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তার বাবা আব্দুল হালিম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘তিন দিন আগে ছেলের হঠাৎ মাথা ব্যথা শুরু হয়। মাথা চেপে ধরে শুধু কান্না করে। খাচ্ছেও না কিছু। এ কারণে তাকে প্রথমে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে পপুলার ও সেন্ট্রাল হাসপাতাল ঘুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু তারা আজ শিশু হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ডাক্তার দেখাব, দেখি তিনি কী বলেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরছি। কত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলাম, এমআরআই করালাম- তবুও কিছু ধরা পড়ছে না। কোনোভাবেই কোনো ডাক্তার রোগ ধরতে পারছেন না। এদিকে, ছেলের অবস্থা তো খুবই খারাপ।’

জরুরি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করছেন রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে আসা গোলাম রব্বানী। তিনি তার ভাগনে জান্নাতুল ফেরদৌস সোহানকে (৮) নিয়ে এসেছেন। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘চার দিন আগে মাথার পেছনে ব্যথা হচ্ছে বলে কান্না শুরু করে সোহান। এরপর অজ্ঞান হয়ে যায়। তাকে নিয়ে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে দুই দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে একদিন থাকার পর আজ নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু নিউরোতে শুক্রবার ডাক্তার না থাকায় শিশু হাসপাতালে আসছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ডাক্তার দেখার আগেই এখানে কর্মরত আনসার সদস্যরা বলেছেন, আইসিইউ লাগবে এই রোগীর। তবে শিশু হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় তাকে প্রাইভেট কোনো হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বিনিময়ে কিছু টাকাও চেয়েছেন। এখন ডাক্তার দেখার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোথায় ভর্তি করাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ বলতে পারছেন না কী রোগ হয়েছে। শুধু হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরছি, আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। কিন্তু কোনো ডাক্তার রোগ নির্ণয় করতে পারছেন না।’

গাজীপুরের গাছা এলাকা থেকে ছেলে আশিকুর রহমানকে (৩) নিয়ে এসেছেন জয়নাল আবেদীন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রথমে তার পেট ব্যথা শুরু হয়, এর পর মাথা ব্যথা। গত দুই দিন গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। সেখানে সবধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক কোনো রোগ ধরতে পারছেন না, ওষুধও ঠিক মতো দিচ্ছে না কেউ। ছেলে তো কান্না করছে। কিছু খাচ্ছেও না। আজ শিশু হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে কোনো সিট খালি নেই। তাই বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে সিট খুঁজছি। এখানে বেশকিছু পরীক্ষা দিয়েছে, যা বাইরে করতে হবে।’

দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা করা যাচ্ছে যে, শিশুরা বিরল রোগে আক্রান্ত। সেজন্য তাদের স্বজনরা রীতি মতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শিশুদের নিয়ে কোথায় যাবেন, কী করবেন- তার একটি উপায় খুঁজছেন। কিন্তু কেউ উপায় বলতে পারছে না। এ বিষয়ে জানতে শিশু হাসপাতালের দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়াও যায়নি।

বিজ্ঞাপন

উপস্থিত আনসার সদস্যরা জানান, টিকিট কাউন্টারে শুধু একজন কর্মচারী আছেন। কাল (শনিবার) থেকে কর্মকর্তাদের পাওয়া যাবে। তবে আনসার সদস্যরা জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক সাব্বির রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিম্পটম দেখে বোঝার কোনো উপায় নাই। শিশুদের চিকিৎসা করা সেনসিটিভ। তাই বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বললে পরিষ্কার হবে আসলে তাদের কী হয়েছে। আপাতত বলা মুশকিল।’

শুক্রবার হওয়ায় জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারও বন্ধ। তবে বিকল্প হিসেবে ভর্তি কাউন্টারেই রোগী দেখার টিকিট দিচ্ছেন। সেখানে কর্মরত ইনচার্জ সহকারী আরাফাত ইসলাম সারাবাংলা বলেন, ‘আমি ২টা থেকে টিকিট দেওয়া শুরু করেছি। এই সময়ের মধ্যে যে ক’জন রোগী এসেছে তার বেশির ভাগই মাথা ও পেট ব্যথায় ভুগছে। দুয়েকজন আসছে ডায়রিয়াজনিত কারণে। এ ছাড়া, নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্তরাও আসছে।’

এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল হাকিমকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন