বিজ্ঞাপন

জিডিপি প্রবৃদ্ধি রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত হয়েছে: সিপিডি

August 16, 2020 | 5:26 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যে পরিসংখ্যান দিয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)। পাশাপাশি জিপিডির প্রবৃদ্ধি এখন একটা রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত হয়েছে বলেও সংস্থাটি থেকে বলা হয়েছে। সেজন্য পরিসংখ্যানের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৬ আগস্ট) ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক হিসাব: সিপিডির প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ অভিমত দেয় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি।

উল্লেখ্য, বিবিএস থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জিত হওয়ার তথ্য প্রকাশ হয়েছে। তবে এর আগে সিপিডির পক্ষ থেকে পূর্বাভাস দেওয়া হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। ভার্চুয়ালে ব্রিফিংয়ে সিপিডির পক্ষ থেকে জিডিপির বিভিন্ন দুর্বলতার দিক তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘জিডিপির প্রবৃদ্ধির যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলো হচ্ছে- হিসাব পদ্ধতির মধ্যে অন্তর্নিহিত দুর্বলতা। এখানে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের ভিত্তিতে এই হিসাবটি করা হয়েছে। ফলে পরবর্তী তিন মাসে অর্থনীতির কী হলো তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো- অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হালনাগাদ নয়। তার মানে নিয়মিতভাবে সেই তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয় না। অনেক তথ্য পুরোনো; তার ভিত্তিতে একটি প্রাক্কলন করা হয়েছে। তৃতীয় বিষয়টি হলো- অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব করা হয়েছে। এই অর্থবছরে বাংলাদেশ ও সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব পড়েছে। এটার প্রভাব সর্বব্যাপী হলেও জিডিপির হিসাবের মধ্যে তা আনা হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

ফাহিমদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের দেশে মার্চ মাস থেকে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরপর থেকে লকডাউন দেওয়া হয়। সুতরাং অর্থনীতিতে এর প্রভাবটা শেষ প্রান্তিকে এসে বেশি বোঝা যাওয়া কথা।’

তিনি বলেন, ‘দেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে একটা মোহ সৃষ্টি হয়েছে। এই মোহ সৃষ্টি হওয়ার কারণ- প্রবৃদ্ধি রাজনৈতিকভাবেও ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি শুধু একটা সংখ্যা নয়, এর পেছনে অনেক তাৎপর্য রয়েছে। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, এটা একটা রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত হয়েছে। এ ধরনের পরিসংখ্যান দেওয়ার কারণে বিবিএস তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির সুফল যদি সবাই না পায়, যদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হয়, দারিদ্র্য না কমে, বৈষম্য না কমে, তাহলে সেই প্রবৃদ্ধি অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় না। এ সংখ্য দিয়ে যদি আমরা আমাদের সাফল্য দেখাতে চাই, তাহলে তা কোনো কাজ হবে না।’

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিবিএস যে কথা বলছে, সেটাই ধরে নিচ্ছি। এটা হলো ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন অর্থবছরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কত হয়েছে। বিবিএসই বলেছে, ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেহেতু চতুর্থ প্রান্তিকে আমাদের একটা নেগেটিভ অবস্থা ছিল, সুতরাং প্রবৃদ্ধির তো প্রশ্নই আসে না। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি। কেউ যদি বলে চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে, এটা বিশ্বাস করার মতো তথ্য না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, জুলাই-মার্চে (২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) একমাত্র রেমিট্যান্স ছাড়া আমদানি, উৎপাদন, বেসরকারি খাতের ঋণ, ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ সবগুলো মিলিয়ে অর্থনীতিতে একটা শ্লথ গতি দেখছিলাম। সেখানে প্রবৃদ্ধির তো প্রশ্নই আসে না।’

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সরকারের যে পরিসংখ্যানগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো এবং সরকার অন্যান্য যে কার্যক্রম নিচ্ছে তার সঙ্গে মিলিয়ে আমরা এসব তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি।’

তিনি বলেন, ‘৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সরকারের এই হিসাব যদি ঠিক থাকে, তাহলে কিন্তু মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার হয়েছে। সেই ভিত্তিতে আপনি অনুমান করতে পারেন, বিভিন্ন সংস্থা যে হারে দারিদ্র্য বাড়ার কথা বলছে, সে হারে বাড়ার কথা নয়। অথবা নতুন দারিদ্র্য সৃষ্টি হওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটাও হওয়ার কথা নয়। কারণ যথেষ্ট মাত্রায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘সিপিডির পক্ষ থেকে আমরা বলছি, দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে। সরকারও কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। যদি এই মাত্রায় প্রবৃদ্ধি হয় তাহলে তো এমন কর্মসূচি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।’

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন