বিজ্ঞাপন

লিঁও’র দেখানো কৌশলই পিএসজি’র বায়ার্ন বধের অস্ত্র?

August 23, 2020 | 2:55 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

আর মাত্র ঘণ্টা কয়েক পর চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি বায়ার্ন মিউনিখ এবং পিএসজি। লড়াই দুই জার্মানেরও! অপেক্ষা আর মাত্র ঘণ্টা কয়েকের! এরপরেই ২০১৯/২০ মৌসুমের ইউরোপের শ্রেষ্ঠ ক্লাবের পরিচয় মিলবে। পর্তুগালের লিসবনে রোববার (২৩ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় রাত একটায় উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মাঠে নামবে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই এবং বায়ার্ন মিউনিখ। জার্মান ঘরোয়া ডাবল জয়ী বায়ার্ন মিউনিখ আর ফ্রেঞ্চ ঘরোয়ার ডাবল জয়ী পিএসজি। ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব জয়ের লড়াইয়ে আছেন দুই জার্মানও কোচও। দুই ক্লাবের দুই কোচের জন্মস্থান জার্মানীতে। পিএসজি কোচ থমাস টুখেল এবং বায়ার্নের কোচ হানসিক ফ্লিক।

বিজ্ঞাপন

লড়াইটা সমানে সমানই বলা চলে। বায়ার্নের হয়ে বিধ্বংসী ফর্মে আছে সার্জ গ্যানাব্রি, থমাস মুলার আর লেভান্ডোফস্কিরা, অন্যদিকে পিএসজির তিন অস্ত্র অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, কিলিয়ান এমবাপে এবং নেইমার জুনিয়রও কম যান না। প্রতিপক্ষকে গুড়িয়েই ফাইনাল পর্যন্ত উঠে এসেছে নেইমাররা। তবে প্রতিপক্ষের রক্ষণের সামনে নির্দয় বায়ার্ন। আলফোন্সো ডেভিস, জশুয়া কিমিচ সার্জ গ্যানাব্রিদের গতি ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের রক্ষণকে তছনছ করে দিয়েছে নিজেদের শেষ ম্যাচগুলোতে।

বায়ার্নের গতির আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়েছে বার্সেলোনা। কোয়ার্টার ফাইনালে ৮-২ গোলের ব্যবধানে বাভারিয়ানদের কাছে লজ্জার হার দেখেছে বার্সা। অন্যদিকে আটালান্টার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে ৯০ মিনিটের পরে দুই গোল করে ২-১ এর জয়, লেইজিগের বিপক্ষে সহজ জয় আর এবার সামনে জার্মান দৈত্য। তাই তো দল দুটি শক্তিমত্তার বিচারে সমান অনেকটাই। তাই তো লড়াইটা যেমন মাঠের খেলায় হবে তেমনই হবে দুই কোচের খাতাতেও।

মাঠের কৌশলই শেষ পর্যন্ত একে অপরকে হারানোর কৌশল বাতলে দেবে। আর বায়ার্নকে হারাতে না পারলেও সেমিফাইনালে বাভারিয়ানদের বধের রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছে অলিম্পিক লিঁও। আর বায়ার্নকে বধের লড়াইয়ে নিশ্চয়ই সে ম্যাচ পর্যালোচনা করেই কৌশল সাজাবেন থমাস টুখেল। আর হানসি ফ্লিকের লক্ষ্য থাকবে লিঁও’র বিপক্ষে যে ভুল তার দল করেছে তার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।

বিজ্ঞাপন

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করার পর ম্যানুয়েল নয়্যার বলছিলেন, এই বায়ার্ন মিউনিখ যে কোনো সময়ের দলের চেয়ে শক্তিশালী। রিবেরি-লাম-রোবেনদের নিয়ে গড়া ২০১৩ সালের ট্রেবলজয়ী দলটাকে অবশ্য বায়ার্ন মিউনিখের ইতিহাস সেরা দল মনে করেন অনেকে। তবে বর্তমান দল সর্বকালের সেরা না হলেও অসাধারণ ফর্মে যে আছে সেটা মানতে হবে সবাইকেই।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্বপ্নের ফর্মে আছে জার্মানির শীর্ষ ক্লাবটি। সব মিলিয়ে সিঙ্গেল রাউন্ডের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালের আসরে এখন পর্যন্ত ৪২ গোল করেছে বায়ার্ন। বিপরীতে গোল খেয়েছে ১৭টি। কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনাকে গলির দলে পরিনত করলেন লেভানডফস্কি, মুলাররা। বার্সাকে ৮-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছেন তারা। এর আগে ইংল্যান্ডের দুই ক্লাব চেলসি ও টটেনহামকে নিয়েও ছেলেখেলা করেছে বায়ার্ন।

বিজ্ঞাপন

এই বায়ার্ন শিরোপা নিশ্চিত করে তবেই থামবে বলছেন অনেকে। কথাটা পিএসজি সমর্থকদের নিশ্চয় ভালো লাগবে না। নেইমার-এমবাপেদের নিয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে পিএসজি। ফাইনালে ফ্রান্সের ক্লাবটির প্রতিপক্ষ স্বপ্নের ফর্মে থাকা এই বায়ার্ন। নিশ্চয় চিন্তিত পিএসজি সমর্থকরা। তবে অলিম্পিক লিঁও’র ফরোয়ার্ড টুকু একাম্বির কথায় স্বস্তি খুঁজতে পারে পিএসজি। একাম্বি বললেন, বায়ার্ন অপরাজেয় নয়।

সেমিফাইনালের লড়াইয়ে বায়ার্নের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছে লিঁও। তবে ম্যাচের শুরুটা ছিল ফরাসি ক্লাবটিরই। দারুণ প্রেসিং ফুটবলে শুরুতে বায়ার্নকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল লিঁও। প্রথম দশ মিনিটেই দুই গোল পেতে পারত দলটি, কিন্তু দুর্ভাগ্য! সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি একটিও। নির্দিষ্ট করে বললে, একাম্বিই পেয়েছিলেন ওই দুটি সুযোগ। সুযোগ কাজে লাগাতে না পাড়া লিঁও পরে ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

একাম্বি মনে করছেন, ওই দুটি গোল পেলে ম্যাচের ভাগ্য অন্যরকমও হতে পারত। ফাইনালে পিএসজির মুখোমুখি হতেন তারাই। লিঁও ফরোয়ার্ড বলেন, ‘আমি মনে করি না তারা অপরাজেয় (বায়ার্ন)। আমরা জানি তারা দারুণ দল। আমরা জানতাম তাদের হারাতে পারব কিন্তু সব কিছু ঠিকঠাক করেও আমরা সেটা করতে পারিনি। সে রাতে কিছু জিনিস গোলমাল করায় জিততে পারিনি আমরা।’ নেইমার-এমবাপেদের জন্য এই কথাগুলো নিশ্চয় অনুপ্রেরণার।

একাম্বিরা সেমির শুরুটা যেভাবে করেছিলেন ফাইনালে পিএসজিও যদি সেটা পারে আর পরে তা ধরে রাখতে পারে তবে প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপার স্বাদ পেতেও পারে ফ্রান্সের ক্লাবটি।

বিজ্ঞাপন

সেমিফাইনালে বায়ার্নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল লিওঁ’র গোলরক্ষক এবং দৃঢ় রক্ষণভাগ। আর লিওঁ নিজেদের রক্ষণের দিকে এমনই দৃঢ় নজর রেখেছিল যে গোলরক্ষকের সামনে পাঁচজন ডিফেন্ডার প্রায় সবসময়ই বিদ্যমান। আর এই ডিফেন্স লাইনের সর্বপ্রথম কাজ ছিল কোনো সৃজনশীলতার কথা চিন্তা না করেই নিজেদের ডি বক্সের আশেপাশের বল ক্লিয়ার করে গোলের বিপদমুক্ত করা। আর এমন দলের বিপক্ষে গোল করাটা যেকোনো টিমের পক্ষেই বেশ কঠিন।

তবে লিওঁ’র এমন রক্ষণভাগকে ভুগাতে পেরেছিল বায়ার্ন। গতি দিয়ে নাস্তানবুদ করে ফেলেছিল ফ্রান্সের ক্লাবটিকে। তবে একইভাবে পিএসজির খেললেই জয় আসার নিশ্চয়তা নেই। কেননা বাভারিয়ানদের গতির জবাব লিওঁ’র কাছে ছিল না। তবে পিএসজি ঠিকই বায়ার্নের গতির জবাব গতি দিয়েই দিতে পারবে। এছাড়া বাভারিয়ানরা হাই ডিফেন্সিভ লাইন ধরে খেলে। অর্থাৎ তাদের রক্ষণভাগের লাইনটা কিছুটা উপরে উঠে খেলে। আর তাই তো নানান সময়ে কাউন্টারে এট্যাকের বিপক্ষে ভেঙে পড়ে তাদের রক্ষণভাগ। আর এখানেই সবচেয়ে বড় সুবিধা পেতে পারে পিএসজি।

কীভাবে বায়ার্নের রক্ষণ লাইনকে ভাঙতে হবে তা দেখিয়েছিল লিওঁ। তবে ম্যাচের ২০ মিনিটের ভেতরেই সহজ দুই সুযোগ হাতছাড়া না করলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হতেও পারত। আর এখানেই আরও ক্ষীপ্রতা দেখাতে হবে এমবাপে-নেইমারদের। এমবাপে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম গতিশীল খেলোয়াড়। আর তাই তো বায়ার্ন মিউনিখের দুর্বলতার জায়গা বেশ কাজে লাগাতে পারবেন এই ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড।

কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে বার্সেলোনার বিপক্ষে বায়ার্নের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা হিসেবে দেখা মিলেছে তাদের খেলোয়াড়দের জায়গা বদল করে প্রতিপক্ষকে চাপ দেওয়া। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই উইংয়ের পর্যন্ত জায়গা বদল করে ফেলতে পারে বাভারিয়ান ফুটবলাররা। যার দেখা মিলছে বার্সা এবং চেলসির বিপক্ষে দুই ম্যাচেই। এই দুই ম্যাচে পেরিসিচ আর গ্যানাব্রি সফলভাবে এই কাজটি করেছেন এবং তার জন্য ফলাফলটাও হাতে নাতেই এসেছে। লেভান্ডোফস্কি শেষ দুই ম্যাচে ডান-বাম উভয় প্রান্তে জায়গা বদল করে খেলেছেন মুলার এবং গোরেতজেকার সঙ্গে। যার কারণে প্রতিপক্ষ কখনোই ম্যান মার্কিং করে সফল হয়নি, বরং বড়সড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে।

আর তাই তো এই বায়ার্নকে চেপে ধরাটা সহজ কাজ হবে না পিএসজি’র জন্য। তাই তো ফাইনালের খেলা কেবল লিসবনের মাঠেই হবে না সেই সঙ্গে হবে দুই জার্মান কোচ থমাস টুখেল এবং হানসি ফ্লিকের ট্যাক্টিসের খাতাতেও।

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন