বিজ্ঞাপন

‘আজ ভাইয়ের রাজনীতি নাই, সবাই শেখ হাসিনার এক নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ’

August 25, 2020 | 1:42 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: একটা সময় দলের ভেতরে ভুল বোঝাবুঝি, ভীরুতা ও ‘ভাইয়ের রাজনীতি’ ছিল বলে স্বীকার করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তবে এখন সবাই দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নানক বলেন, সেদিন দলের অভ্যন্তরে ভুল বোঝাবুঝি ছিল, ভীরুতা ছিল, ভাইয়ের রাজনীতি ছিল। আজ আর সেই ভাইয়ের রাজনীতি নাই। আজকে আমরা সব ঐক্যবদ্ধ শেখ হাসিনার এক কেন্দ্রে, এক নেতৃত্বের পেছনে।

সোমবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন ওই সময়কার বরিশাল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নানক। নিজেদের আত্মসমালোচনা ও আত্মোপলব্ধির কথা স্মরণ জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সেই আমরা কার বিরুদ্ধে লড়াই করলাম? কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো? বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা কি কোনো উর্বর মস্তিস্কের গুটিকয়েক সামরিক কর্মকর্তার একটি অপারেশন ছিল? আমাদের ভাবতে হবে, কী কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার শিকার হতে হলো।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমরা লড়াই করেছিলাম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একটি ভৌগোলিক স্বাধীনতা চাননি, তিনি এই বাংলার গণমানুষের মুক্তি চেয়েছেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি যখন বুঝতে পেরেছে যে শেখ মুজিব একজন পরীক্ষিত নেতা, বাঙালির স্বার্থ রক্ষাকারী একমাত্র নেতা, তখনই তারা সত্তরের নির্বাচনে তাকে ভোট দিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে। আর এর মধ্য দিয়েই শেখ মুজিব সাংবিধানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন নেতা হিসবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিশ্ব তখন দুই ভাগে বিভক্ত। একভাগে শোষক, আরেক ভাগে শোষিত। সারা পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত— সমাজতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক বিশ্ব। সেই সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব, আর শোষিত মানুষের নেতা হলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু এক বিশাল দায়িত্ব নিলেন। বাংলাদেশকে একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন। একটি শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন। বঙ্গবন্ধু এই বাংলাদেশকে শোষিত শ্রেণির রাজ কায়েম করতে চাইলেন। সেই কারণেই তো মিল-কলকারখানার জাতীয়করণ করলেন। কৃষি সমবায় প্রতিষ্ঠা করলেন। ২৫ বিঘা জমি পর্যন্ত জমির সিলিং প্রত্যাহার করে নিলেন।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার আগে থেকেই মার্কিন বিরোধিতার কথা তুলে নানন বলেন, একাত্তরের পরাজয় মার্কিন আর পাকিস্তানিরা মানতে পারে নাই। সেই পরাজয়ের প্রতিশোধের জন্যই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। কিন্তু সেদিন আমরা কোথায় ছিলাম? আমি ছাত্রলীগ করেছি। আমরা ছাত্রলীগ করেছি। সেদিন ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হলো, একটি নেতা ছিল না যে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রতিরোধের ডাক দেবে, প্রতিশোধের যুদ্ধ ঘোষণা করবে। একটি লোক সেদিন পাওয়া যায়নি। সেদিন ছিল ভীরুতা? নেতৃত্বের মধ্যে ছিল কাপুরুষতা, আপসকামিতা। আর সে কারণেই সেদিন তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে ওঠিন। তবে আমরা ছাত্রলীগ গর্জে উঠেছিলাম। ২০ আগস্ট মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি ঝটিকা মিছিল হয়।

তিনি বলেন, সারাবাংলার মানুষ বুক চাপড়ে কেঁদেছে। নফল নামাজ পড়েছে। দোয়া করেছে। বিশেষ মোনাজাত করেছে। কিন্তু আমরা একটি প্রতিশোধ যুদ্ধ শুরু করতে পারিনি। বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। সেই বিভ্রান্তের কেন্দ্রবিন্দু করা হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই সেদিন ষড়যন্ত্রকারীরা ছিল, মোশতাকরা ছিল— এ কথা আমরা অস্বীকার করি না। সেদিনের বাকশালের সদস্য উপসেনাবাহিনী প্রধান জিয়াউর রহমানও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল— এ কথাও আপনারা অস্বীকার করতে পারবেন না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর উদ্দেশে নানক বলেন, ‘জিয়া খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন, কেন করেছেন? জিয়া খুনিদের বিদেশে দূতাবাসে কেন চাকরি দিয়েছেন? জিয়াউর রহমান এই খুনিদের দিয়ে ফ্রিডম পার্টি করেছিলেন এবং সেই ফ্রিডম পার্টিকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন আপনাদের জেনারেল জিয়া। সেই খুনিদেরকেই কুমিল্লা থেকে মধ্য ফ্রেব্রুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য বানিয়ে এনে মহান জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা করেছিলেন এই জিয়াউর রহমানের পত্মী খালেদা জিয়া। কেন করেছিলেন?’

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নানক বলেন, সেই রাজনৈতিক যুদ্ধটা একটা কঠিন যুদ্ধ ছিল। সেই যুদ্ধে যে অবতীর্ণ হলাম, আন্তর্জাতিক শত্রু-শক্তিকে আমরা প্রতিহত করেছি। কিন্তু শক্তি সঞ্চয় করিনি। আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করিনি। আমরা বাংলাদেশের ভেতরে যারা পাকিস্তান রক্ষার জন্য চেষ্টা করেছিল, সেই পাকিস্তানের মানুষগুলো যে চক্রান্ত করছে, সেই চক্রান্তকে প্রতিহত করতে পারিনি। সে দুর্বলতা আমাদের ছিল। আর দুর্বলতা ছিল বলেই জিয়াউর রহমানের মতো মানুষ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বসে চক্রান্ত করেছে। আমরা সে চক্রান্তকে মোকাবিলা করতে পারিনি। আমরা সে চক্রান্তকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। কাজেই আমাদের রাজনীতিটা বুঝতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে কেন হত্যার জন্য চেষ্টা করা হলো? শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হলো পাকিস্তানি প্রেসক্রিপশনে, আইএসআইয়ের প্রেসক্রিপশনে। এই বাংলাদেশ যেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জেগে না ওঠে, সে কারণে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হলো।

ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে নানক বলেন, আমরা যে আরেকটি যুদ্ধে রয়েছি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। সেই যুদ্ধে নিবেদিত প্রাণ সৈনিক হলেন, কমান্ডার হলেন আপনারা। যারা ওয়ার্ড, থানা আওয়ামী প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি আছেন, আপনারাই হলেন সেক্টর কমান্ডার। সেই দায়িত্ব বুঝতে হবে। সেই দায়িত্ব নিতে হবে। সেই নির্ভরতা শেখ হাসিনার আনতে হবে, সেই নির্ভরতা আনতে হলে সাচ্চা রাজনৈতিক কর্মী সৃষ্টি হতে হবে।

তিনি বলেন, বক্তৃতায় ভাষায় বলতে চাই না, কথার ভাষায় বলতে চাই। দয়া করে দৈনিক পত্রিকাগুলো পড়েন। পাঁচটা পড়ার দরকার নাই, একটি পত্রিকা পড়েন। নেত্রী যে বক্তৃতা দেন, সেই বক্তৃতাটা শোনেন। গতকাল যে বক্তব্য রেখেছেন, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে, সেই জায়গায় কী বলেছেন, তা আত্মস্থ করার চেষ্টা করেন, শোনেন। দলের অভ্যন্তরে সেদিন ভুল বোঝাবুঝি ছিল। ভীরুতা ছিল, ভাইয়ের রাজনীতি ছিল। আজ আর সেই ভাইয়ের রাজনীতি নাই। আজকে আমরা সব ঐক্যবদ্ধ শেখ হাসিনার এক কেন্দ্রে এক নেতৃত্বের পেছনে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো আমাদের প্রচারযন্ত্র দুর্বল। তবে প্রচারযন্ত্র সবল কোথায় জানেন? আমার বিরুদ্ধে উনি, উনার বিরুদ্ধে তিনি— এসব ক্ষেত্রে আমরা বড় সচল। দিস ইজ ব্যাড প্র্যাকটিস। এটা আত্মহনন। আমরাও রাজনীতি শিখেছি, আমাদের নেতাকে আমরা ওপরে তুলে ধরেছি, মাথায় তুলে ধরেছি। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এই অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। সংগঠনের শৃঙ্খলা মানতে হবে। সংগঠনের নেত্রী শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনাকে সামনে রেখেই আমরা রাজনীতি করি, আপনারা রাজনীতি করেন, আপনারা স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেন।

ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ উত্তরের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বক্তব্য রাখেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ উত্তরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, তাসভীরুল হক অনু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইসহাক মিয়া,সৈয়দ মিজানুর রহমান, আজিজুল হক রানা, মহিউদ্দিন আহমেদ। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা  মহানগর ছাত্রলীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন