বিজ্ঞাপন

নেটের ক্যাবল কেটেই চলেছে ডিএসসিসি, জোড়া দিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

September 8, 2020 | 12:59 pm

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে ‍ঝুলন্ত তার বা ওভারহেড ক্যাবল সংযোগের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দিচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস (আইএসপি) ব্যবসায়ীরা। সহজলভ্যভাবে ইন্টারনেট সেবা দিতে আইএসপিগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। তবে ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগের বিষয়টি পরিকল্পিত না হওয়ায় এলাকাভিত্তিক একাধিক ব্যবসায়ীর ক্যাবল সংযোগ মিলে তৈরি করেছে তারের জঞ্জাল। সম্প্রতি শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে এসব ঝুলন্ত তার অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আর তা করতে গিয়েই বেঁধেছে ঝামেলা।

বিজ্ঞাপন

সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে দেখা যায়, গত মাসখানেক ধরেই তারা এসব ঝুলন্ত তার অপসারণ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে আসছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সে উদ্যোগ কাজে আসছে না। গত আগস্ট মাসজুড়েই ডিএসসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত একেকদিন একেক জায়গায় অভিযানে গিয়ে ওভারহেড ক্যাবল কেটে দিয়েছেন। এতে ইন্টারনেট সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন গ্রাহকরা। তাই গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে যাওয়ার পরক্ষণই কেটে দেওয়া লাইন জোড়া দিয়ে ইন্টারনেট পুনঃসংযোগ দিয়েছেন আইএসপি ব্যবসায়ীরা। ফলে ওভারহেড ক্যাবল অপসারণ কিংবা ইন্টারনেট সংযোগ— কোনোটিতেই মিলছে না স্থির সমাধান। মাঝখান থেকে গ্রাহকদেরই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে সিদ্ধান্ত নিলে যা হয়, সেটিই করে দেখাচ্ছে ডিএসসিসি। এমন অভিযানে কোনো ফল না পাওয়া গেলেও নেট ব্যবসায়ীদের কোটি টাকার ক্ষতি ঠিকই হচ্ছে। আর গ্রাহক ভোগান্তি তো আছেই। এজন্য বিকল্প ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে তবেই ঝুলন্ত তার অপসারণের উদ্যোগ কার্যক্রমের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে ডিএসসিসি এলাকার ঝিগাতলা, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ি, জুরাইন, পোস্তগোলাসহ বিভিন্ন এলাকার ওভারহেড ক্যাবল সংযোগ কেটে জঞ্জালযুক্ত তারগুলো অপসারণ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু অপসারণে দুয়েকদিন পর ফের একই স্থানে নতুন সংযোগ স্থাপন করেছে আইএসপি ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক আইএসপি ব্যবসায়ী সারাবাংলাকে জানান, বিকল্প আর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় উচ্ছেদের পর ফের তারা সংযোগ স্থাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সংযোগ না দিলে গ্রাহক ইন্টারনেট থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর ইন্টারনেট থেকে বঞ্চিত হলে মাস শেষে গ্রাহক নেট বিল দেবে না। এতে বড় অঙ্কের আর্থিক লোকসান থেকে বাঁচতে তারা ফের সংযোগ দিচ্ছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরফান আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ক্যাবল আইন অনুযায়ী ডিএসসিসি এলাকায় কেউ ক্যাবল সংযোগ নিতে গেলে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিয়ে এ কাজ করলে জেল ও জরিমানা উভয় কার্যকর করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ডিএসসিসি এলাকায় যারাই ক্যাবল টেনেছেন, তাদের কেউ-ই অনুমতি নেননি। এতে ডিএসসিসির উচিত ছিল জেল ও জরিমানা করা। যদিও আমরা সেটি করছি না। শুধুমাত্র সংযোগগুলো কেটে দিচ্ছি।

কেটে দেওয়ার পর ফের পুনঃসংযোগ করা হচ্ছে— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ফের সংযোগ নিলে আমরাও ফের কেটে দেবো। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নয়।

বিজ্ঞাপন

যা বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা
কার্যকর কোনো সমাধান না নিয়ে অপরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ নিলে তাতে সুফল আসে না জানিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবীব সারাবাংলাকে বলেন, ডিএসসিসি এখন যে কাজটি করছে, এটি কার্যকর কোনো কাজ নয়। কারণ কোনো সমস্যা নিরসন করতে হলে আগে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু ডিএসসিসি বিকল্প কোনো পথ না বের করে হঠাৎ করে উচ্ছেদ করে শহর পরিষ্কার করলে তো হবে না। আমরা সবাই চাই শহর পরিচ্ছন্ন হোক। কিন্তু তাই বলে আরেকটা সমস্যা তৈরি করে এ সমাধানে কতটুকু সুফল আসবে? আমাকে তো দেখতে হবে নাগরিকরা কোনো বিড়ম্বনায় পড়ছে কি না। আর বিড়ম্বনায় পড়লে সেটির সমাধান কী, সে বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করে তবেই এ কার্যক্রম শুরু হওয়া উচিত ছিল।

একই কথা বললেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, ডিএসসিসি ক্যাবলগুলো কেটে দিচ্ছে। আবার ব্যবসায়ীরা সেগুলোর সংযোগ দিচ্ছেন। এমন ইঁদুর-বিড়াল খেলায় তো গ্রাহক ভোগান্তি আর আর্থিক ক্ষতি ছাড়া কার্যকর কোনো সমাধান মিলবে না। বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে উচ্ছেদ কার্যক্রম অপরিকল্পিত ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এমন অপরিকল্পিত কার্যক্রমের আগে অবশ্যই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া হবে, কিন্তু ফল আসবে না।

যা বলছে আইএসপিএবি
জানতে চাইলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, গত ৫ আগস্ট থেকে হঠাৎ কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই ডিএসসিসি আইএসপি’র ক্যাবলগুলো কেটে দিচ্ছে। এতে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ গ্রাহকের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কার্যকর সমাধানের জন্য আমরা ১৬ আগস্ট ডিএসসিসির মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কার্যালয়ে যাই। সেখানে মেয়র আমাদের ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করতে বলেন। এদিন আমরা রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাদেরকে একটি মৌখিক প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যদি কোনো আইএসপি ব্যবসায়ী ডিএসসিসি এলাকায় ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যবসা করতে চান, তবে ডিএসসিসিকে বাৎসরিক ২৫ লাখ টাকা করে দিতে হবে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এ প্রস্তাবকে ‘অবাস্তব’ অভিহিত করে ইমদাদুল হক বলেন, আমরা মেয়রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মেয়র ওই দিনই দেশের বাইরে চলে যান। তখন আমাদের বলা হয়েছিল, মেয়র দেশে আসলে ডাকবে। সেই ডাক এখনো পাইনি। কিন্তু আমরা সেসময় ডিএসসিসিকে অনুরোধ করে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম, কার্যকর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যেন ক্যাবল অপসারণ কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। আমাদের অনুরোধ ডিএসসিসি রাখেনি। অপসারণ কার্যক্রম চলছে। এতে আমাদের প্রায় পোন দুই লাখ গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমরা সেসব সংযোগ প্রতিস্থাপন করেছি। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের। এখনো প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

উচ্ছেদের পর ফের সংযোগ স্থাপন করলেও ডিএসসিসি বলছে, আবার তার কেটে দেওয়া হবে— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইএসপিএবি সভাপতি বলেন, যদি ডিএসসিসি ফের সংযোগ দেওয়া ক্যাবলগুলো কেটে দেয়, তবে আমাদের পক্ষ থেকে আর সংযোগ দেওয়া হবে না। হয়তো আইএসপি ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করবে। আর আন্দোলনে হলেও তখন আমাদের কিছু বলারও থাকবে না। কারণ ডিএসসিসি আইএসপির জন্য বিকল্প কোনো পথ রাখেনি।

যা বলছে ডিএসসিসি
এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের মন্তব্য জানতে ডিএসসিসির জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করা হলে জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের সারাবাংলাকে বলেন, বুধবারের আগে মেয়রের বক্তব্য পাওয়া যাবে না। তিনি গণমাধ্যম সংক্রান্ত বিষয়ে সপ্তাহের প্রতি বুধবারে কথা বলেন। অর্থাৎ মেয়র প্রতি বুধবার সাংবাদিকদেরকে বিভিন্ন প্রশ্ন ও মতামতের জবাব দেন।

পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদেরকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা প্রস্তাবের বিষয়ে মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে আজ মেয়রের সঙ্গে কথা হয়েছে। খুব শিগগিরই ইন্টারনেট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের ডাকা হবে। তাদের সঙ্গে মেয়রের বৈঠকে আশা করছি কার্যকর সমাধান মিলবে।

সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন