বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ এশিয়ায় তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি

November 28, 2020 | 3:28 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগের বছরের তুলনায় তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ কমলেও সেটি কোনোভাবেই সন্তোষজন নয়। বরং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এখনো বাংলাদেশে তাদের হস্তক্ষেপ সবচেয়ে বেশি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান কোভিড-১৯ মহামারিকে শতভাগ কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক (সিএসআর) কর্মসূচির অজুহাতে নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনের সঙ্গে মিশে নানা ধরনের ব্যবসায়িক সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আইন সংশোধন করে সরকারের ওপর তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বন্ধের সুপারিশ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৮ নভেম্বর) ঢাকায় প্রকাশিত ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক: এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশ ২০২০’ গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কর্মসূচি প্রধান মো. হাসান শাহরিয়ারের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশে আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নের কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে সেটি সন্তোষজনক নয়। ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচকে’ এ বছরে বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ৬৮। আগের বছর এই স্কোর ছিল ৭৭। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছুটা এগোলেও এখনো তামাক কোম্পানির শক্তিশালী হস্তক্ষেপ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শুধু তাই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোরই সবচেয়ে বেশি। গবেষণার তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতে তামাক কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপ সূচকের স্কোর ৬১, পাকিস্তানে ৫০, মালদ্বীপে ৪৮ ও শ্রীলংকায় ৪৪। ৪৩ স্কোর নিয়ে এই তালিকার সবচেয়ে নিচে আছে নেপাল। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপালে সরকারের ওপর তামাক কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপ সবচেয়ে কম।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, তামাক অপরিহার্য পণ্য— তবে শুধু মৃত্যুর জন্য, জীবনের জন্য নয়। এটি কোনোভাবেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকায় থাকতে পারে না। বরং এটি সংবিধানের বাঁচার অধিকার সংক্রান্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।

তিনি আরও বলেন, কোভিড মহামারির মধ্যে অনেক তামাক কোম্পানিকে প্রণোদনার টাকা দেওয়া হয়েছে। এটা হতে পারে না। আমি এরই মধ্যে তামাকপণ্যকে এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য জাতীয় সংসদে বেসরকারি সদস্য বিল জমা দিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, সরকার সম্প্রতি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজ মন্ত্রণালয় ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয় বিশেষ করে অর্থ, শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে আর্টিকেল ৫.৩ প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা বিষয়ে সচেতন করবে যেন চলমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়াসহ সব ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত থাকা যায়।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে তামাক ব্যবহার কতটা ভয়ংকর হতে পারে। এটি এমন একটি সমস্যা, যার সমাধানে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, বরং সব মন্ত্রণালয় মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তামাক কোম্পানিগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক (সিএসআর) কর্মসূচির অজুহাতে নীতিনির্ধারক, সরকারি কর্মকর্তা ও প্রশাসনযন্ত্রের সঙ্গে মিশে ব্যবসায়িক সুবিধা আদায় এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ডে বাধাদানের চেষ্টা করেছে। একইসঙ্গে এসব সিএসআর কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রচার করে জনমনে নিজেদের সর্ম্পকে ইতিবাচক মনোভাব তৈরির চেষ্ট করেছে কোম্পানিগুলো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর হাতে অনুদানের চেক হস্তান্তর করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)। এ সংক্রান্ত সংবাদ ও ছবি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ফেসবুক পেজে প্রচার করা হয়। তামাক কোম্পানিগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ব্যবহার করে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বাধাদানের চেষ্টা করেছে।

বিজ্ঞাপন

গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়ি মালিকদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারির মাধ্যমে নন-ফিল্টার বিড়ির শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে এনবিআর।

গবেষণার সুপারিশে আইন সংশোধন করে তামাক কোম্পানির সব ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক (সিএসআর) কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার প্রতি জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩-এর আলোকে একটি নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এই গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করে আসছে। এ বছর বিশ্বের ৫৭টি দেশে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সবচেয়ে বেশি। ২০২০ হস্তক্ষেপ সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৬৮, যা গতবছর ছিল ৭৭।

ওয়েবিনারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের বাংলাদেশ কান্ট্রি অ্যাডভাইজার মো. শফিকুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, দ্য ইউনিয়নের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) গ্রান্টস ম্যানেজার এম এ সালাম এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন