December 13, 2020 | 8:41 pm
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: দুর্নীতির অভিযোগে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা কোনো মামলা সরকার প্রত্যাহার করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, দুদকের করা কোনো মামলা প্রত্যাহারে সুপারিশও সরকার করতে পারবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সিলেটের এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঢেউটিন চুরির অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালত গত বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) এ রায় দিলেও বিষয়টি আজ রোববার (১৩ ডিসেম্বর) জানা গেছে।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ২০০৪ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংস্থা। এর ফলে দুদকের অনুমোদিত কোনো মামলা প্রত্যাহারের কেউ কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান রায়ের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন। রায়কে যুগান্তকারী রায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ রায়ের মধ্য দিয়ে দুদকের মামলার বিষয়ে কোনো ধরনের নাক না গলানোর সর্তকবাতা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সরকার চাইলেও দুদকের মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করতে পারবে না।’ এ বিষয়ে এটিই হাইকোর্টের প্রথম কোনো রায় বলেও জানান তিনি।
আসামি পক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুদকের মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যাহারের যে সুপারিশ করেছিল, হাইকোর্ট তা বাতিল করেছেন। একইসঙ্গে রায়ে বলেছেন, এখন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সরকারের অন্য কোনো দফতর দুদকের মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করতে পারবে না।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, দুদক নিজেও আদালতকে না জানিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে পারবে না। এটা দুদকের ২০০৪ সালের সংশোধিত আইনেই রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘দুদক এখন পর্যন্ত কোনো মামলা প্রত্যাহার করেনি বা প্রত্যাহারের জন্য আদালতে যায়ওনি। সুতরাং দুদক নিজে মামলা প্রত্যাহার করতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন অবান্তর। আর আদালতে এ প্রসঙ্গটি আসেনি।’
মামলার বিবরণে জানা যায়, ‘ওয়ান-ইলেভেন’খ্যাত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন ফৌজদারিসহ অসংখ্য মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী এসব মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। এর মধ্যে দুদকের দায়ের করা মামলাও ছিল।
ওই সময় অনেক ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার হলেও দুদকের মামলায় আইনি প্রশ্ন জড়িত থাকার কারণে কোনো মামলা প্রত্যাহার হয়নি। কিন্তু ওই সময়ে সিলেটের ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পাঁচটি টিন চুরির অভিযোগে দুদকের মামলা প্রত্যাহার করত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপারিশ করে। আদালতও মামলাটি চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহারের আদেশ দেন।
পরে এ ঘটনায় ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করে দুনীতি দমন কমিশন। আবেদনে বলা হয়, যে প্রক্রিয়ায় এটি করা হয়েছে, তা সঠিক আইন মেনে হয়নি। ওই আবেদনের ওপর হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন গত বৃহস্পতিবার।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামির আইনজীবী এস এম শাহজাহান জানান, ভুক্তভোগী চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না, সে বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর