বিজ্ঞাপন

ভ্যাকসিন ভরসায় তৃণমূল গোছাতে মাঠে নামছে আ.লীগ

February 5, 2021 | 11:10 pm

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে শঙ্কা থাকলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সেরকমটা দেখা যায়নি। বরং এখানে করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। যদিও এরই মধ্যে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে যাচ্ছে। আর এই ভরসায় চলতি ফেব্রুয়ারি থেকেই মাঠ পর্যায়ের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে লক্ষ্য করে তৃণমূলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার লক্ষ্যে চলতি মাসে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে। সভায় তৃণমূলের কোন্দল নিরসন করে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা/পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের সম্মেলনের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাংগঠনিক তৎপরতা জোরালো করার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চলমান চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের পৌরসভা নির্বাচন যেসব এলাকায় অনুষ্ঠিত হবে বা হচ্ছে সেসব এলাকা ছাড়া এর বাইরের সাংগঠনিক এলাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ‘যেসব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে সেসব ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। পৌরসভা নির্বাচনের পরেই শুরু হবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন, সবাইকে এখন থেকেই সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে হবে।’

এদিকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করার বিষয়ে শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবনে নিয়মিত বিফ্রিংয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সব শাখাকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সমাবেশ ও জনসংযোগ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান। তিনি এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের জন্য দলের পক্ষ থেকে প্রতিটি ইউনিটকে নির্দেশ দেন।

ফেব্রুয়ারি থেকে মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করার বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাংগঠনিক কর্মসূচির আলোকে আমরা মাঠে থাকব। আমাদের কাজ তো মাঠেই। এখন পৌরসভা ইলেকশনের পারপাসে মাঠে যাচ্ছি। তারপর আমাদের জেলা উপজেলা কনফারেন্সে উপলক্ষ্যে মাঠে নামব। আমরা এই বছরের মধ্যেই সব স্থানীয় নির্বাচন শেষ করব। এসব নির্বাচনি কাজ শেষ করার পাশাপাশি আমরা সাংগঠনিকভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হব।’

বিজ্ঞাপন

বৈশ্বক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রথমদিকে জনসমাগমে সবধরনের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ধীরে ধীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ধাক্কা কমতে শুরু করলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে থাকে ক্ষমতাসীন দলটি। এরপর গত বছর লকডাউনের প্রায় ছয় মাস পর সেপ্টেম্বর থেকে একগুচ্ছ সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে মাঠে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর গণভবনে সীমিত পরিসরে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে সীমিত পরিসরে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি কয়েকটি জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে ঝিমিয়ে পড়া সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করার লক্ষ্যে একে একে ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের পাঁচ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা শাখা সম্মেলনও শুরু করে দলটি।

পরবর্তী সময়ে শীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কার বিষয়টি মাথায় রেখে মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। কিন্তু এরই মধ্যে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। ইতোমধ্যে তৃতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ধাপগুলোও চলতি ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হবে। আগামী মার্চ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচনে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ। এদিকে ২৮ জানুয়ারি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নির্মূলে ভ্যাকসিন যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ।

কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বলেন, করোনা ভ্যাকসিন আসার কারণে জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য-সুরক্ষার সাহস বা মনোবল শক্তিশালী হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, প্রথমে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা। ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ভরসা দিতে পারছি। আমাদের নেতাকর্মীরাও উৎসাহ-আস্থা পেয়েছে। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা নিজের জীবনের মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে করোনাকালে জনগণের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এ সময় আমরা ভার্চুয়ালি রাজনীতির মাঠে ছিলাম। শীতকালে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি নেতৃত্বের কারণে ভ্যাকসিন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। সারাদেশে ভ্যাকসিন পৌঁছে গেছে।

বিজ্ঞাপন

তারা বলেন, সামনে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের তাৎপর্যপূর্ণ লক্ষ্য রয়েছে। আমরা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচিতে মনোনিবেশ করতে যাচ্ছি। সেইসঙ্গে সরকারবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্য থাকবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক সম্ভব হয়ে উঠেনি। প্রতি দুই মাস পরপর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে এবার ছয় মাস পর এ বৈঠক হয়েছে। এরপর চলতি মাসে গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। এখনো দিন তারিখ নির্ধারণ হয়নি। আমরা আশা করছি, ওই বৈঠকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনসহ সাংগঠিনক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেবেন নেত্রী। সেই আলোকে আমরা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাথে সমন্বয় করে জেলা-উপজেলার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করাসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় হব।

গত বছর তৃণমূলকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকারের পাশাপাশি মুজিববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু মার্চে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় ক্ষমতাসীন দল হিসেবে জনসমাগমপূর্ণ সব কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে মুজিববর্ষ উদযাপন শুরু করে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও অব্যাহত রাখে। এসময় ঘরে বসে সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডগুলো গতিশীল করার দিকে নজর দেয়। বিশেষ করে ২০১৯ সালের দলের জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঠিক করার আগে সারাদেশে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র তিন জেলার সম্মেলন করা হয়। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ হওয়ার পর তড়িঘড়ি ২৯টি জেলা সম্মেলন শেষ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা সম্মেলন হওয়া শাখাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা কমতে থাকলে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি উপজেলা আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করার নির্দেশনা বিষয়ে কথা বলেছেন।’ এই নির্দেশনা চিঠি ইস্যু করে তৃণমূলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন