বিজ্ঞাপন

বগুড়ায় মোটর মালিক গ্রুপে আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ, পুলিশ-সাংবাদিক আহত

February 9, 2021 | 5:25 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বগুড়া: বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটেছে। এসময় জেলা বাস টার্মিনাল এলাকায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্য ও একজন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে লাঠিচার্জ ও গুলি নিক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে আটক করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বগুড়ার চার মাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বরে দুপুর ১২টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষে আহত গণমাধ্যমকর্মী রাজু আহমেদ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জিটিভি’র ক্যামেরাপারসন।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুইটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে গ্রুপের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এরই মধ্যে গ্রুপের নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম নির্বাচনের বিরোধিতা করে মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও মালামাল তার হেফাজতে চার মাথা বাস টার্মিনাল এলাকায় রাখেন।

স্থানীয়রা বলছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম মোহনের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা চার মাথায় এলাকায় গিয়ে আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখলের ঘোষণা দেন। এ খবর পেয়ে আমিনুলের অনুসারীরা চার মাথা এলাকায় সমবেত হন। তারা যেকোনো মূল্যে মোহন গ্রুপকে প্রতিহত করার জন্য মাইকে ঘোষণা দেন এবং পরিবহন শ্রমিকদের প্রত্যেককে হাতে লাঠি নিয়ে অবস্থান নিতে বলেন।

বিজ্ঞাপন

খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ চার মাথায় অবস্থান নেয়। পুলিশ আমিনুলকে সমঝোতার প্রস্তাব দিলে আমিনুল পুলিশকে জানিয়ে দেন, তারা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করবে। আমিনুলের অনুসারীরা পুলিশের সামনেই লাঠি মিছিল শুরু করেন। এসময় মোহন গ্রুপের দেড় দুই হাজার নেতাকর্মী সান্তাহার সড়ক দিয়ে এলজিইডির সামনে অবস্থান নেন। পুলিশ মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে থাকাকালে মোহন গ্রুপের দেড় দুই হাজার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আমিনুল গ্রুপের লোকজনকে ধাওয়া করে। এসময় আমিনুলের অনুসারীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে গেলে মোহন গ্রুপের লোকজন টার্মিনাল এলাকা দখলে নিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোহন গ্রুপের কর্মী-সমর্থকরা এলোপাতাড়ি যানবাহন ভাঙচুর ছাড়াও আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও তার ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এসময় ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে জিটিভির ক্যামেরাপারসন রাজু আহম্মেদকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ছাড়াও পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার কনস্টেবল রমজান আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে। এতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে পুলিশ রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুঁড়ে মোহন গ্রুপের লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এসময় পুলিশ ১২ জনকে আটক করে। সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর মোহন গ্রুপ চার মাথা এলাকা ত্যাগ করলে আমিনুল গ্রুপের লোকজন ফের সমবেত হয়ে চার মাথা এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পুলিশ শটগানের গুলি ছুঁড়ে তাদেরও হটিয়ে দেয়। সংঘর্ষের পর চার মাথা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ ফয়সাল মাহমুদ বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ পর্যন্ত ওই এলাকা থেকে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। আহত পুলিশ কনেস্টবল ও এক সাংবাদিককে উদ্ধার করে জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন